ভয়ঙ্কর মাদক
দেশে চকলেট রূপে আসছে ‘ম্যাজিক মাশরুম’, সেবনে হত্যা-আ'ত্মহত্যার ঝুঁকি!
ভয়ঙ্কর মাদক ‘এলএসডি’ ও ‘ডিএমটি’ এর পর দেশে হদিস মিললো নতুন মাদক ‘ম্যাজিক মাশরুমের’। এই মাদক সেবনের পর মারাত্মক হ্যালোসিনেশন তৈরি হয়, যার প্রভাবে সেবনকারী নিজের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ঘটিয়ে ফেলতে পারে হত্যা কিংবা আত্মহত্যার ঘটনা। এছাড়া কেউ কেউ পশু-পাখির সঙ্গে কথা বলা শুরু করে। ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আকাশে উড়ে যাওয়া চেষ্টা চালায়। এমনকি গাছ থেকে অক্সিজেন আসছে কিনা তা গাছ জড়িয়ে ধরে অনুভব করার অস্বাভাবিক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে।
‘ম্যাজিক মাশরুম’ নামে এই সাইকেলেডিক ড্রাগটি খাবারে কেক ও চকলেট মিক্স অবস্থায় সেবন করা হয়। এছাড়া পাউডার ও ক্যাপসুল হিসেবেও পাওয়া যায়। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়া কয়েকজনের মাধ্যমে নতুন এই মাদকের সঙ্গে পরিচয়। এরপর তাদের মাধ্যমে বিদেশ থেকে চকলেট হিসেবে লাগেজে এগুলো আনা হয়। এখনো ব্যাপক আকারে না ছড়ালেও উচ্চবিত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীরা এই মাদক গ্রহণ করছেন।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দিনগত রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক ‘ম্যাজিক মাশরুম’ ও বিদেশি মদসহ দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ম্যাজিক মাশরুমের ৫ টি বার উদ্ধার করা হয়, প্রতিটি বারে রয়েছে ২৪টি করে স্লাইস।
গ্রেপ্তারকৃত দু’জন হলেন- নাগিব হাসান অর্নব (২৫) ও তাইফুর রশিদ জাহিদ (২৩)।
বুধবার (৭ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, নাগিব হাসান অর্নব বাংলাদেশে এসএসসি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছেন। এ সময় তাইফুর রশিদ জাহিদ তার সহপাঠী ছিলেন। অর্নব পরবর্তীতে ২০১৪ সালে কানাডায় গিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষে কর্মরত রয়েছেন।
তাইফুর রশিদ জাহিন প্রথমে গাঁজা ও মদ্যপানে আসক্ত ছিলেন। এরপর তিনি ২০১৯ সালে ক্রমান্বয়ে এলএসডি, ডিএমটিসহ বিভিন্ন ধরনের সাইকেডেলিক ড্রাগ নিয়মিত সেবন ও বিক্রি করা শুরু করে। সাইকেডেলিক ড্রাগ সম্পর্কে তার আগ্রহ সৃষ্টি হলে ইন্টারনেটে সেই সাইকেডেলিক ড্রাগের ওপরে অনুসন্ধান শুরু করে। এরপর বাংলাদেশে জন্মানো বিভিন্ন মাশরুমের মধ্যে সাইকেডেলিক বা ‘ম্যাজিক মাশরুম’ রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ডার্ক সাইটে ‘ম্যাজিক মাশরুমের’ খোঁজ পাওয়া যায়। তার প্রস্তাব অনুযায়ী কানাডায় অবস্থানরত অর্নব মুনাফার লোভে ‘ম্যাজিক মাশরুম’ পাঠাতে রাজি হয়। গত মে মাসে অর্নব ‘ম্যাজিক মাশরুমে’র একটি চালান বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে অর্নব ও জাহিদ এই ম্যাজিক বারগুলো বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এই ড্রাগটি কেক ও চকলেট মিক্স অবস্থায় সেবন করা হয়। এছাড়াও পাউডার ও ক্যাপসুল হিসেবেও পাওয়া যায়। এই ড্রাগ ব্যবহারে সেবনকারীর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এমনকি কেউ কেউ ছাদ থেকে ঝাপিয়েও পড়তে পারে। কখনো উড়তে চেয়ে তাদের ছাদ থেকে ঝাপ দেওয়ার ইচ্ছা জাগে। এছাড়া সেবনকারী পশু ও পাখির সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। এমনকি গাছ থেকে অক্সিজেন আসছে কিনা তা গাছ জড়িয়ে ধরে অনুভব করার অভিনব কাণ্ড ঘটিয়ে থাকেন।
এই মাদক সেবনে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। যার প্রভাব ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। এটি সেবনের পর সেবনকারীরা নিজেকে কালারফুল ভাবতে থাকেন। ‘ম্যাজিক মাশরুম’ সেবন করে তাইফুর নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং অত্যন্ত বিভৎসভাবে নিজেই নিজের হাতের বিভিন্ন অংশ ধারালো বস্তু দিয়ে কেটে ফেলেন।
প্রত্যেকটি বারে ২৪টি করে স্লাইস থাকে উল্লেখ করে খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা একেকটি বার বাংলাদেশে ২৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করছিল। যা কানাডায় দাম ৪০ কানাডিয়ান ডলার। বিট কয়েন কিংবা পেপালসহ অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে মাদকের অর্থ লেনদেন হচ্ছে, আবার এসব মাদক অনলাইন কুরিয়ারে করেও দেশে আনা হচ্ছে। কখনো কারবারি নিজেই চকলেটের আড়ালে নিয়ে আসছে এই ‘ম্যাজিক মাশরুম’। এছাড়াও বিভিন্ন যাত্রীর লাগেজের মাধ্যমেও এই মাদক দেশে আমদানি করা হচ্ছে।
এই ভয়ঙ্কর নতুন মাদকসহ অন্যান্য মাদকের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ন নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
কেএফ
মন্তব্য করুন