• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

নক্সাবন্দীর গোপন ৮ স্ত্রী, মামলা তুলে নিতে ৪র্থ স্ত্রীকে হুমকি!

আরটিভি নিউজ

  ০৬ মার্চ ২০২১, ২০:২৪
Naxabandi's secret wife, 4th wife threatened to take up the case!
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন নক্সাবন্দীর ৪র্থ স্ত্রী

হাসানুর রহমান হোসাইন নক্সাবন্দী ওরফে মো. হাসান। তার প্রধান পরিচয় তিনি একজন মাওলানা। দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি ওয়াজ মাহফিল করে বেড়ান। তবে ৪র্থ স্ত্রীর মামলায় এখন তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) রয়েছেন। ৪র্থ স্ত্রীর অভিযোগ, এখন মামলা তুলে নিতে নক্সাবন্দীর পরিবারের লোকজন নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন। মামলা তুলে না নিলে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী নারীকে।

আজ শনিবার (৬ মার্চ) দুপুরে ১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নক্সাবন্দীর ৪র্থ স্ত্রী ৩ মাসের কন্যা শিশুকে নিয়ে এসব অভিযোগ করেন। এ সময় তার পাশে বাবা ও মা উপস্থিত ছিলেন।

ওই নারী বলেন, বিয়ের পর আমি জানতে পারি, গোপনে তার আরও ৭ স্ত্রী রয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় তার এক স্ত্রী ২টি মামলা করেছেন। এমনকি তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়িও হয়েছে। ওই ঘরে ২টি কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ের বয়স ৯ বছর। বিয়ের আগে এত বিয়ের তথ্য গোপন করে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এরপরও সবকিছু সহ্য করে তার সঙ্গে ঘর-সংসার করছিলাম। কিন্তু ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের শেষ দিকে আমার বাবার কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে ৩ লাখ টাকা নেয়। যা ৩ নভেম্বর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

সেই টাকা ফেরত চাইতে গেলে আমার স্বামী হাসান নক্সাবন্দী, ভাই আনাস ও মামা সুজন মোল্লা আমাকে শারীরিক নির্যাতন করেন। তারা জানায় কোনো টাকা ফেরত দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে গত ২৮ নভেম্বর আমার একটি কন্যা শিশু জন্মগ্রহণ করে। ২৯ নভেম্বর আমার কোল থেকে বাচ্চা কেড়ে নিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা চালায়। আমি চিৎকার করলে আনাস আমার মুখ চেপে ধরে, আবুল কালাম ও সুজন মোল্লা এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারতে থাকে। এরপর আমি ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায় চলে যাই।

ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, এর আগে ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর পারিবারিকভাবে নক্সাবন্দীর সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। কুমিল্লার হোমনার দুলালপুরে এক পীরের আস্তানায় ওয়াজ মাহফিল করতে গিয়ে তিনি আমাকে পছন্দ করেন। আমার মা ওই পীরের ভক্ত ছিলেন। সেই সুবাদে নক্সাবন্দী পীরের মাধ্যমে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। রাজি না হলেও পীরের জোরাজুরিতে একপর্যায়ে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকায় একটি বাসায় নিয়ে তোলেন আমাকে।

ওই নারী অভিযোগ করেন, ধলপুরের বাসায় একা রেখে বাইরে তালা দিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন করে বাইরে থাকতেন এই ভণ্ড। একই ভবনের ৬ তলাতেও একটি বাসা ভাড়া রেখেছিলেন। যেখানে প্রায়ই অন্য নারীদের এনে ঝাড়ফুঁক ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার কথা বলে রাত্রিযাপন করতেন। এ নিয়ে বললে আমাকে সবাই মিলে মারধর করতেন। মারধরের পর অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর হাসপাতালে গিয়ে ২০২০ সালের ১০ মার্চ পরীক্ষা করালে জানতে পারি আমি সন্তান-সম্ভবা। এরপর সন্তান নষ্ট করতে উঠে পড়ে লাগে সবাই এবং নির্যাতন করে।

গত ১৮ জুন আবারও নির্যাতন করলে আমি যাত্রাবাড়ী থানায় জিডি করি। পুলিশ হাসান নক্সাবন্দীকে থানায় নিয়ে আসে। একপর্যায়ে তার ভাই আনাস ও মামা সুজন মোল্লা মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে বের করে নিয়ে যান। এরপর আবার একই রকম অত্যাচার চালাতে থাকেন।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করেন ওই নারী। আদালত মামলা আমলে নিয়ে মতিঝিল থানাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। হাসান নক্সাবন্দী কমলাপুর পুরাতন বাজার জামে মসজিদের খতিব হিসেবে কর্মরত থাকায় মতিঝিল থানা তদন্তের দায়িত্ব পায়। নক্সাবন্দীর বিরুদ্ধে সত্যতা পাওয়ায় আদালত গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। আর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নক্সাবন্দীকে গ্রেপ্তার করে মতিঝিল থানা পুলিশ।

এই নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির প্রতি অনুরোধ করে বলেন, আমি নিরীহ পরিবারের গরীব বাবা মায়ের সন্তান। নক্সাবন্দী আমাকে বিয়ে করে প্রতারণা করেছেন। আমার কোলে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এখন নানাভাবে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের হুমকি ধমকি দিচ্ছেন নক্সাবন্দীর পরিবারের লোকজন। আমি এ থেকে মুক্তি চাই, নক্সাবন্দীর শাস্তি চাই।

মতিঝিল থানার এসআই হেলাল উদ্দিন বলেন, মাওলানা হাসানুর রহমান নক্সাবন্দীর বিরুদ্ধে শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে। রিমান্ডে একাধিক বিয়ের কথা স্বীকার করেছেন নক্সাবন্দী। একাধিক ঘরে ছেলে মেয়ে থাকার কথাও জানিয়েছেন তিনি। তিনি ওয়াজ মাহফিলের আড়ালে নারীদের টার্গেট করে বিয়ে করতেন। এরপর নানারকম নির্যাতন চালাতেন। এরমধ্যে কেউ কেউ তাকে ছেড়ে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন। চট্টগ্রামে তার একটি বাড়ি রয়েছে এবং সেখানে তার প্রথম স্ত্রী থাকার কথা স্বীকার করেছেন নক্সাবন্দী।

কেএফ

মন্তব্য করুন

daraz
  • অপরাধ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh