• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

‘সাজা বাড়ায় ধর্ষণ হ্রাস পাবে’  

ফারুক আলম

  ১৮ অক্টোবর ২০২০, ২৩:৪০
ধর্ষণ
আইনে সাজা বাড়ালেও বিচার কাজে দীর্ঘসূত্রিতায় অপরাধের প্রবণতা কমবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা

নোয়াখালী বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র ও সিলেট এমসি কলেজে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে আন্দোলনের মুখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধীন আনে সরকার। আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে। তবে আইনে সাজা বাড়ালেও বিচার কাজে দীর্ঘসূত্রিতায় অপরাধের প্রবণতা কমবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এ সম্পর্কে আরটিভি নিউজকে বলেন, ধর্ষণ আইনে সাজা বাড়লে এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ করবো, তিনি যেন নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারকদের জন্য একটা নিদের্শনা দেন (প্র্যাকটিস ডাইরেকশন) দেন। যাতে তাড়াতাড়ি মামলাগুলো শেষ হয়। একইসঙ্গে প্রসিকিউটরদের বলবো, ধর্ষণ মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের কি ধরনের বাধা ও কি অসুবিধা সেগুলো যেন চিহ্নিত করা হয়। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তারপর ব্যবস্থা নেবে। প্র্যাকটিস ডাইরেকশন ও প্রসিকিউটরদের কার্যক্রম পাশাপাশি বাস্তবায়ন করতে পারলে ধর্ষণের ব্যাপকতা নিশ্চয়ই হ্রাস পাবে এবং আইনের বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হবে বলে বিশ্বাস করেন আইনমন্ত্রী।

দেশজুড়ে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫১টি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা ঝুলে আছে। এসব মামলার মধ্যে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলা। মামলার এই দীর্ঘসূত্রিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, এসব বিচার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা রাখি আগামীতে এসব মামলার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি হবে।

ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ড করে লাভ হবে কিনা এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, গবেষণায় পরীক্ষিত সত্য, যে অপরাধের সাজা কঠোর হলে সেই অপরাধ করার প্রবণতা কিছুটা হ্রাস পায়। এছাড়া আইনের বিধিমালা সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, বিধিমালা আমি দেখে নেই এরপর এ সম্পর্কে বলতে পারবো।

জানা গেছে, দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালে প্রণয়ন হলেও গত বিশ বছরে সেটির বিধিমালা প্রণয়ন হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ৯ এর ১ ধারায় ধর্ষণের সাজা সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ছিল। এখন সেটি পরিবর্তন এনে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে। একইসঙ্গে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ), ২০ (৭) উপধারা সংশোধন আসছে। এবার আইন সংশোধনের পাশাপাশি বিধিমালাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে আইন মন্ত্রণালয়।

আইনজীবীরা বলছেন, নারী ও শিশু নির্যাতনে আইনের সাজা বাড়লেও অপরাধ ও বিচার সম্পর্কে আইনে সম্পন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া থাকে না। আইনে যা নেই তা বিধিমালায় সংযুক্ত করতে হবে। প্রতিটি আইনের জন্য বিধিমালা প্রয়োজন। বিধিমালার অভাবে একেক বিচারক একেকভাবে বিচার করেন। এতে একজন ভুক্তভোগীর পাশাপাশি বিচারকদের বিড়ম্বণায় পড়তে হয়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে ধর্ষণ হয়েছিল ৮১৮টি, ২০১৮ সালে ৭৩২টি, ২০১৯ সালে ধর্ষণের সংখ্যা বেড়ে হয় এক হাজার ৪১টি। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৯৭৫টি।

আসকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা আরটিভি নিউজকে বলেন, আইন কার্যকর না হলে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সাজা বাড়ালেও এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমবে তা নয়। কারণ নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন থাকা অবস্থায় দেশের দশ শতাংশ মানুষও বিচার পাচ্ছে না।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক নীনা গোস্বামী বলেন, আইনে ধর্ষণ মামলার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা সম্ভব হয় না। কারণ একজন ধর্ষিতাকে মেডিকেল রিপোর্ট ও পুলিশি তদন্ত প্রমাণিত হতে হয় যে, তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এতে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দেয়।

এফএ/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অপরাধ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মন্দিরে সিঁদুর পরিয়ে নারীকে ধর্ষণ, অতঃপর....
মেকআপ আর্টিস্টকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার প্রোডাকশন ম্যানেজার
মান বাঁচাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন রাজনৈতিক কর্মী
ধর্ষণ মামলা : আ.লীগ থেকে বড় মনিরকে অব্যাহতি
X
Fresh