• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ছুটির দিনে প্রাণের বন্যা বইমেলায়

মিথুন চৌধুরী

  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:১৭

মাঘ মাস প্রায় শেষ প্রান্তে।বসন্ত কৌকিলের কুহুকুহু সুরে শীতের পরশ কমছে। শরীরে শীতের ছোঁয়া লাগলেও শুক্রবারের সকালটা অনেকটাই ফাগুনের সতেজ সকাল বলে মনে হয়েছে। চারদিকে নরম রোদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোমলমতি ছোট ছোট শিশুকে নিয়ে গ্রন্থমেলামুখী হন অভিভাবকরা। এলোমেলো হাওয়া আর রাশি রাশি ধুলোর সঙ্গে খেলা করতে করতে গ্রন্থমেলা দখল করে নেয় শিশু-কিশোররা। আর শিশুদের পাশাপাশি ছিল বইপ্রেমীদের ঢল। কেবল মানুষ আর মানুষ।
বইমেলাকে রঙ্গীন করে তুলতে বই প্রেমিকদের দেখা গেছে বিভিন্ন সাজে। তরুণ-তরুণীদের সাজ দেখে মনে হয় বাঙলীর ঢল। সাদামাটা রংয়ের শাড়ি আর ঝোলাকাঁধে নেওয়া পাঞ্জাবীপড়া তরুণদের দেখে চোখ জুড়ে যায়। সাহিত্যের মাঝে ডুবে থাকার ভাবভাব চোখগুলো ছুটে বেড়ায় এক স্টল থেকে অন্য স্টলে।


সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই মেলায় আসতে শুরু করেন সব বয়সের পাঠক। শীতের সকালে যখন আড়মোড়া ভাঙেনি ব্যস্ত নগরী ঢাকা, তখন বাংলা একাডেমি মুখরিত করে তোলে শত ক্ষুদে কণ্ঠের সুমধুর ধ্বনি। মেলার প্রথম দু দিনে ভিড় চোখে না পড়লেও ছুটির দিনে ভিড় ছিল লক্ষ্য করার মতো। উল্লেখযোগ্য হারেও বাড়ে শিশুদের আগমন। বাবা-মার হাত ধরে বা কাঁধে চড়ে এসব শিশু বই কিনে ঘরে ফিরে যায় তারা। যাওয়ার সময় মুখে লেগে থাকে প্রশান্তির হাসি আর চোখে আবার আসার ইচ্ছা।
সকাল ১১টা থেকে শিশুদের জন্য শিশুপ্রহর শুরু হয়ে চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। মেলায় প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার শিশুপ্রহর। শিশুপ্রহরে শিশুদের জন্য প্রকাশনা উৎসব, রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানান আয়োজন।
শিশুদের পাঠ শেষ না হতেই তরুণ-তরুণী আর সব বয়সের পাঠকরা দখলে নেয় মেলা প্রাঙ্গণ। রীতিমতো জনারণ্যে পরিণত হয় বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
লাইনে দাঁড়িয়ে বইপ্রেমীরা প্রবেশ করেন একে একে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তামূলক তল্লাশি পেরিয়ে যেন পাঠকদের দে ছুট। প্যাভিলিয়নসহ প্রায় প্রতিটি স্টলের সামনেই সরব করে তোলে। কেউ বই কিনছেন, কেউবা আবার পছন্দের লেখকের বই খুঁজছেন। কেউ তুলছেন ছবি কেউবা তুলছেন সেলফি। আবার অনেকে এসেছেন দলবেঁধে। বন্ধুবান্ধব মিলে চুটিয়ে আড্ডা মারছে। যেন এক মিলন মেলা।
প্রকাশকরা বলছেন, অমর একুশে বইমেলা এখন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। বন্ধের দিন হওয়ায় আজকে প্রচুর পাঠকের সমাগম ঘটেছে। বিক্রিও ভালো হয়েছে। বইপ্রেমীদের এ আগমন আমাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক।
তৃতীয় দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১৩০টি। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে ১৪টি।
বইমেলার শুক্রবার প্রথম পর্বে সকাল ১০টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বাংলা কবিতা বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কবি শ্যামলকান্তি দাশ এবং অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি অসীম সাহা, ইকবাল হাসান, তুষার দাশ, ফরিদ কবির। অধিবেশন সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ চৌধুরী।
অপরদিকে দ্বিতীয় পর্বে বিকেল ৩টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে বাংলা প্রবন্ধ-সাহিত্য বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শান্তনু কায়সার ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাবন্ধিক সুমিতা চক্রবর্তী। বিকেল ৫টায় মেলার মূলমঞ্চে মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক আবুল মোমেন। এছাড়া বিকেল ৫টায় শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে সাহিত্য ও ফোকলোরের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও অন্যভাষার কবিদের স্বরচিত কবিতা এবং ছড়া পাঠ। এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সুকুমার বড়ুয়া।
বাংলা একাডেমির মূল চত্বর ও একাডেমি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৪ লাখ বর্গফুট জায়গা নিয়ে এবারের গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১২টি চত্বরে সজ্জিত করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তৈরি করা হয়েছে শিশু কর্নার। ৬০ ইউনিট নিয়ে এ চত্বরে শিশুদের জন্য খেলার সুযোগও রাখা হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও প্রতি শুক্র ও শনিবার থাকবে শিশু প্রহর। এবছরও বাংলা একাডেমি ৩০ শতাংশ ও মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ ছাড়কৃত মূল্যে বই বিক্রি করবে।
ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। ছুটির দিন মেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এ ছাড়া শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির দিন এটি উন্মুক্ত থাকবে সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।

এমসি/এসজেড

মন্তব্য করুন

daraz
  • প্রাণের মেলা, বইমেলা এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh