• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

'ভাষার জন্য প্রথম রক্ত ঝরে রাজশাহীতেই'

সিয়াম সারোয়ার জামিল

  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৮:৪০

'বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে রাজশাহীর ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল। ভাষার জন্য প্রথম রক্ত ঝরে রাজশাহীতেই; ফায়ার ব্রিগেড মোড়ে। ৪৮’এর ১১ জানুয়ারি রাজশাহীতে হরতাল চলছিলো। হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের হামলায় রহমান ভাই, তোয়াব ভাই, প্রতীশ ঘোষ, লতিফ ভাইসহ আরো অনেক ছাত্রনেতার রক্তে রঞ্জিত হয় রাজশাহীর রাজপথ। ঘন্টা দুয়েক পরে সিলেটেও ভাষা দাবিতে রাজপথে নেমে আসা মানুষের মিছিলে হামলা চালায় মুসলিম লীগের গুন্ডা বাহিনী।' বলছিলেন রাজশাহীর ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন।

বায়ান্ন'তে আবুল হোসেন তখন আঠারো বছরের টগবগে তরুণ। এখন চুরাশি। বয়সের কারণে সদা হাসোজ্জল এ মানুষটির শরীরে সেই টগবগে ভাব এখন আর নেই। শরীর অনেকটাই শীর্ণকায়। কিন্তু রাজশাহীর যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে এখনো তিনি সবার গুরুজন। তার উপস্থিতিতে যে কোনো প্রতিবাদ পায় নতুন মাত্রা। শুক্রবার রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগারে আরটিভি অনলাইনের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় এ ভাষাসৈনিকের।

একুশে ফেব্রুয়ারির স্মৃতিচারণ করে আবুল হোসেন বলেন, 'তখন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের পরেই ছিল রাজশাহী কলেজের স্থান। পূর্ব পাকিস্তানের সব অঞ্চল থেকেই ছাত্ররা এ কলেজে পড়তে আসতেন। একুশে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় টেলিফোনে খবর পাই ঢাকায় গুলি হয়েছে। সেসময় পত্রিকায় খবর আসতে দু’একদিন পার হয়ে যেতো। খবরটি রাজশাহী শহরে বিদ্যুৎবেগে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র শহীদ হয়েছেন-এমন খবর শুনেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্রসমাজও। মিছিলে-স্লোগানে প্রকম্পিত হয় রাজশাহীর রাজপথ। পরে গোপনে রাজশাহী কলেজে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এর নেতৃত্ব দেন টিপু ভাই, বাচ্চু ভাই, মানিক ভাইসহ আরো অনেকে। সবার নাম মনে নেই।'

আবুল হোসেন বলেন, 'বাঙালিরা কখনই সাম্প্রদায়িক ছিল না। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হয়। আসলে ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্রভাগ স্বাভাবিক কারণেই তারা মেনে নিতে পারেনি। থেমেও থাকেনি। ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেছে। তারই ফল হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি।' তিনি বলেন, 'বায়ান্নতে আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে ভাষা আন্দোলন করেছিলাম, তার অনেক দাবি স্বাধীন বাংলাদেশ হবার পরেও পূর্ণ হয়নি। সর্বত্র বাংলা ভাষা আজো চালু হয়নি।' এজন্য ক্ষোভও জানালেন এ ভাষাসৈনিক।

অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আবুল হোসেন ২০১২ সালে সহধর্মিণী সুুফিয়া খাতুনের মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েছিলেন। এখনও সেই শূন্যতা অনুভব করলেও ছেলেমেয়ে ও নাতি নাতনিদের নিয়ে বেশ ভাল আছেন বলে দাবি করলেন তিনি। তিনি বলেন, 'দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিকশিত হয়ে দেশ ও জাতি গড়তে হবে। উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র। এখানকার মানুষের শিক্ষার হার এখনো শতভাগ হয়নি।' এজন্য সরকারকে বহুমুখী উদ্যোগ নিতে আহ্বানও জানান তিনি।

এসজে/

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh