• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

হটলাইনে যৌন হয়রানিমূলক আলাপ ‘হজম’ করতে বাধ্য হচ্ছেন আইইডিসিআর'র কর্মীরা

সিয়াম সারোয়ার জামিল, আরটিভি অনলাইন

  ০১ এপ্রিল ২০২০, ২০:৩৯
যৌন হয়রানিমূলক আলাপ ‘হজম’ করতে বাধ্য হচ্ছেন আইইডিসিআর'র হটলাইনের কর্মীরা
ফাইল ছবি

ভয়ংকর করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে ক্রমশই। আর তা সামাল দিতে দেশজুড়ে চলছে অঘোষিত লকডাউন। খোলা হয়েছে আইইডিসিআর'র হটলাইন। তার সাহায্যে শনাক্ত হচ্ছেন করোনা আক্রান্তরা। তবে অভিযোগ আছে, এসব হটলাইন বেশিরভাগ সময়ই ব্যস্ত থাকে। দ্রুততম সময়ে সাহায্য পাওয়া যায় না।

তবে এর অন্যতম কারণ হিসেবে আইইডিসিআরের সংশ্লিষ্টরা দুষছেন, প্র্যাঙ্ক কলারদের। যারা অহেতুক কল দিয়ে কলসেন্টারে থাকা নারীদের বিরক্ত করেন। ব্যস্ত রাখেন হটলাইনের নম্বরগুলি। কোনও কোনও সময় অশ্লীল কথোপকথনও হয় মাত্রাতিরিক্ত। এই প্র্যাঙ্ক কলাররা নারী কর্মীদের সঙ্গে যৌন হয়রানীমূলক আলাপ করার চেষ্টা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কল সেন্টারে যে নারীরা কাজ করেন, তাদের প্রতিদিন কম করে হলেও ২০০-২৫০টা কল রিসিভ করতে হয়। আর একেকটা কলে একেক রকম অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়। কখনও কখনও দাঁত চেপে হজম করতে হয় কলারদের গালাগালি, অশ্লীল আর যৌন হয়রানিমূলক কথাবার্তা।

আইইডিসিআর'র এর হটলাইনে কাজ করা একজন চিকিৎসক মোহোনা খন্দকার মিতি। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, হটলাইনে কাজ করার পর একটা উপলব্ধি হয়েছে যে, দেশের বহু মানুষের আসলে কোনও কাজই নাই এবং তাদের তেল অনেক বেশি। নাহলে মেয়ে কণ্ঠ শুনেই "আপনি বিয়ে করেছেন", " আপনার বয়স কত", "যৌবন ফিরে পাব কিভাবে", "দুলাভাই কী করে", "এই ফোন দিয়েছি এমনি, আপনার সাথে কথা বলার জন্য", "আমাকে ফোন ব্যাক করেন, আপনার সাথে কথা বলতে চাই" ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যাপারগুলা ঘটতো না৷ সবথেকে বেশি অবাক হয়েছি সৌদি আরব থেকে একটা গ্রুপ লিটারেলি ১০ বারের উপর ফোন দিয়ে নানাভাবে বিরক্ত করছে। সমাজসেবা কঠিন জানতাম, তবে এতটা বেহায়াপনা দেখা লাগবে জানতাম না সত্যি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইইডিসিআর'র আরেকজন নারী কর্মী আরটিভি অনলাইনকে জানান, এ ধরনের বাজে কল বেশি আসে রাতের দিকে। তারা ফোন দিয়ে বলেন, আপনারা রাতে কী খেয়েছেন। তার করোনা হয়নি, সে আমার বাসায় আসবে কি-না। বাসার ঠিকানাও চান তারা। ফোনের অপরপ্রান্তে নারী কণ্ঠ পেলেই এমন আচরণ করেন তারা।

তিনি বলেন, কিছু কিছু কল রিসিভ করার পর সারাটা দিন খারাপ যায়। এত নোংরা কথা কিভাবে মানুষ উচ্চারণ করতে পারে তা আমার মাথায় আসে না। কিন্তু প্রত্যুত্তর করার কোনও নিয়ম নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইইডিসিআর'র আরও একজন নারী কর্মী আরটিভি অনলাইনকে জানান, ছেলেরা ফোন ধরলে যেমনতেমন, যদি ফোনে মেয়েদের কণ্ঠ শোনে তাহলে ফাজলামোর মাত্রা বেড়ে যায়। কখনো কখনো খুব বাজে গালি দিচ্ছে। দেশের মধ্যে থেকেই এইসব কাজ করছে। এইসব ফালতু কলের জন্য যাদের আসলেই দরকার তারা সবসময় নাম্বার ব্যস্ত পাচ্ছে। এটার একটা সমাধান দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ব বিভাগের শিক্ষক মিথুন ব্যানার্জি বলেন, পৃথিবীতে যেসব কাজে মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশি, সেই কাজই তুচ্ছ, ঠুনকো, কম সম্মানের বলে প্রচলিত। এটা নারীর প্রতি পুরুষের মানসিকতা দৃষ্টিভঙ্গিগত অসততার ফসল।

তিনি বলেন, নারী সমাজের দুর্বল অংশ ভেবে নিয়ে তাকে যা বলা হবে নারী সেটাই শুনতে বাধ্য, এ ধরনের ধারণা পোষণ করা হয়। সে কারণে এ ধরনের সেবামূলক পেশায় যারা থাকেন তাদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি ‘দুঃসাহস’ দেখিয়ে দেয়। আর যেহেতু কলারদের কথা ভেবে অভিযোগ করা বা এটা বেশিদূর নিয়ে যেতে প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা আগ্রহী হয় না কখনও, ফলে এর প্রবণতা বেড়েছে।

এ বিষয়ে আইইডিসিআর'র এমআইএস শাখার পরিচালক ড মো: হাবিবুর রহমান বলেন, এমন অভিযোগ আমরা শুনেছি। এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যারা দোষী তাদের প্রয়োজনে ট্র্যাক করে আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দিব।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বরই খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা, অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞ দল
X
Fresh