অর্ডার বাতিল হওয়ায় ৬০০ কোটি ডলারের রপ্তানি রাজস্ব হারাবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের শীর্ষ দুই সংগঠন মঙ্গলবার জানিয়েছে, বিশ্বের বেশকিছু বড় বড় ব্র্যান্ড ও রিটেইলার অর্ডার বাতিল করায় চলতি অর্থবছরে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার রপ্তানি রাজস্ব হারাবে চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয়-বৃহত্তম পোশাক উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ। খবর ইয়াহু ফিনান্সের।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প ও নিটওয়্যার উৎপাদনকারীদের এই দুই সংগঠন বলছে, করোনাভাইরাসের মধ্যে বৈশ্বিক লকডাউনের কারণে প্রতিদিন অর্ডার বাতিলের সংখ্যা বাড়ছে এবং এর ফলে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির কয়েক লাখ মানুষ।
কম মজুরির কারণে বাংলাদেশে গার্মেন্ট শিল্প দাঁড়াতে পেরেছে। দেশটিতে প্রায় চার হাজার ফ্যাক্টরি ৪০ লাখ কর্মী রয়েছে।
২০১৯ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪০.৫৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে, তার মধ্যে ৩৪.১২ বিলিয়ন ডলারই এসেছে গার্মেন্ট রপ্তানি থেকে, যা রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এই সঙ্কটের কারণে আমরা ৩০০ কোটি ডলার হারিয়েছি। জুলাই পর্যন্ত আমাদের সব অর্ডার বাতিল বা স্থগিত হয়ে গেছে।
ক্রেতারা দেখে-শুনে চলো এবং নতুন অর্ডার দেয়া থেকে বিরত থাকার নীতি নিয়েছে উল্লেখ করে হাতেম বলেন, স্থগিত হওয়া অর্ডারগুলো শেষপর্যন্ত বাতিল হয়ে যাবে। গ্রীষ্মকালের জন্য এই অর্ডার দেয়া হয়েছিল এবং এগুলো ডেলিভারি দিতে তিন মাস পর্যন্ত লাগে। যেহেতু তারা এখন এই অর্ডার নিচ্ছে না, গ্রীষ্মকাল শেষ হয়ে গেলে তারা এগুলো নেবে না। যদি এমন চলতে থাকে তাহলে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্যাপ, জারা ও প্রিমার্কের মতো ব্র্যান্ডগুলো অর্ডার বাতিল করেছে। মন্তব্যের জন্য ইমেইল করা হলে তাৎক্ষণিক কোনও জবাব দেয়নি গ্যাপ ও জারা। তবে প্রিমার্ক তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রিমার্ক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে তাদের সব দোকান বন্ধ রয়েছে এবং প্রতি মাসে তারা ৮০৭.৮২ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হারাচ্ছে। তারা জানায়, আমাদের দোকান, গুদাম ও ট্রানজিটে বিপুল পরিমাণে মজুদ রয়েছে। যদি আমরা এমন সিদ্ধান্ত না নিতাম তাহলে বিষয়টা এমন দাঁড়াতে যে বিক্রি করতে পারবো না এমন জিনিস কিনছি আমরা।
তৈরি পোশাক শিল্পের উৎপাদনকারীরাও একই ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রেসিডেন্ট রুবানা হক।
রুবানা বলেন, বিজিএমইএ-র সদস্য এমন প্রায় ১০৪৮টি ফ্যাক্টরি জানিয়েছে যে ২৯০ কোটির ডলারের ৯০ কোটির বেশি পোশাকের অর্ডার বাতিল বা স্থগিত হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এসব অর্ডার বাতিলের কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি শিল্পের জন্য সম্প্রতি ৫৮৮ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রণোদনা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজিএমইএ’র একজন রেজওয়ান সেলিম বলছেন, এটা যথেষ্ট নয়। দেশের সর্ববৃহৎ রপ্তানি খাতকে বাঁচাতে সরকারকে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।
এইচঅ্যান্ডএম ও ওয়ালমার্টের মতো ব্র্যান্ডকে পোশাক সরবরাহকারী একজন শীর্ষ রপ্তানিকারক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি খুব বাজে। আমরা একটি অভূতপূর্ব সময়ের মুখোমুখি হয়েছি। এটি কতদিন চলবে তা কেউ জানে না। আমরা আমাদের কারখানাগুলো বন্ধ না করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। তবে জানি না আর কতদিন সামাল দিতে পারবো?
এ/পি
মন্তব্য করুন