টাকা ভাগাভাগি নিয়ে রাব্বানী-সাদ্দাম ফোনালাপ ফাঁস
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা দুর্নীতির ঘটনায় সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ও জাবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ও সহ-সভাপতি হামজা রহমান অন্তরের ফোনালাপের অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।
৬ মিনিট ১১ সেকেন্ডের ওই অডিওতে কিভাবে কারা কতো টাকা পেয়েছে সে বিষয়টি উঠৈ এসেছে।
অডিওতে শুনে বোঝা যায়, শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হামজা রহমান অন্তর রাব্বানীকে ফোন দেন। ফোন রিসিভ করে রাব্বানী বলেন, ‘হ্যালো অন্তর! টাকা নেওয়ার সময় কে কে ছিল? তখন অন্তর বলেন, ‘জুয়েল (শাখা সভাপতি), চঞ্চল (সাধারণ সম্পাদক), সাদ্দাম (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক)।’
টাকাটা কোথায় বসে দিয়েছে রাব্বানীর এমন প্রশ্নে অন্তর বলেন, ভিসি ম্যামের বাসায়। অন্তর তখন বলেন, সাদ্দাম ভাই আমার পাশে আছে কথা বলবে? রাব্বানী সম্মতি দিলে কথা বলা শুরু করেন সাদ্দাম।
রাব্বানী ও সাদ্দামের কথোপকথনের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো।
রাব্বানী: কি খবর ভাই?
সাদ্দাম: ভাই খবর তো আমি জানাইছি, খবর তো ভাল না বেশি একটা। আমি তো আপনাকে জানাইছি ভাই আমি, তাজ (নিয়ামুল হাসান তাজ-সহসভাপতি), জুয়েল ও চঞ্চল এই চারজন ছিলাম ভাই ওই মিটিংয়ের সময় (টাকা ভাগ-বাটোয়ারার সময় ভিসির বাসায়)।
রাব্বানী: ম্যাম তো বলছে এ আন্দোলনও নাকি আমরা করাইছি! আন্দোলন কারা করছে সেটাও তো আমরা জানিনা।
সাদ্দাম: বিষয়টা হচ্ছে উনি ছাত্রলীগের উপর সব কিছু দিয়া নিজের ফ্যামিলিরে সেভ করতে চাচ্ছে।
রাব্বানী: আচ্ছা যখন টাকাটা দিছে তখন তুই ছিলি না?
সাদ্দাম: হ্যাঁ ভাই আমি ছিলাম।
রাব্বানী: টাকাটা দিছে কিভাবে, ম্যাম নিজেই দিছে, অন্য কেউ ছিল না?
সাদ্দাম: ওখানে হচ্ছে ভাই আর কেউই ছিল না। ম্যাম এবং তার পরিবার হচ্ছে আমাদের সাথে ডিলিংসটা করছে। করে সে হচ্ছে টাকাটা আমাদের হলে পৌঁছে দিছে।
রাব্বানী: হলে পৌঁছে দিছে টাকা?
সাদ্দাম: হ্যাঁ হ্যাঁ একটা গাড়িতে করে এক লোক এসে দিয়ে গেছে।
রাব্বানী: কয় টাকা দিছে?
সাদ্দাম: আমাদের বলছে এক কোটি। আমরা বাকিটা জানিনা, জুয়েল আর চঞ্চলের সাথে আলাদা সিটিং হইতে পারে।
রাব্বানী: আমি শুনলাম এক কোটি ষাট।
সাদ্দাম: ওইটা ভাই ষাইটেরটা আমরা জানিনা। উনি এক কোটি ভাগ করে দিছে। যে পঞ্চাশ হচ্ছে জুয়েলের, পঁচিশ আমাদের আর পঁচিশ চঞ্চলের।
রাব্বানী: ও ম্যাডাম এভাবে ভাগ করে দিছে? জুয়েল ভাল ছেলে এজন্য পঞ্চাশ আর চঞ্চল ক্যাম্পাসের বাইরে থাকে এজন্য পঁচিশ?
সাদ্দাম: হ্যাঁ। অঞ্চল আমাদের তো বাদ দিতে পারেনাই। ঝামেলা এড়ানোর জন্য বা...
রাব্বানী: ও চঞ্চলের ভাগেরটাই তোরা পাইছস?
সাদ্দাম: হ্যাঁ, চঞ্চলের ওখান থেকেই, আমরা বলছি যে ২৫% আমাদের দেয়া লাগবে। তারা হচ্ছে ভাই তাহলে আমাদেরকে না জানায়া তাদেরকে আলাদা ষাট লাখ টাকা দিছে, এটা হইতে পারে।
রাব্বানী: ও তাহলে তোদেরকে না জানায়া দিছে?
সাদ্দাম: হ্যাঁ হ্যাঁ আমরা এটা জানিনা আমরা এক কোটির হিসাব জানি।
রাব্বানী: তোমার ম্যাডাম যে আমাদের নাম জড়াইলো এখানে, টাকার ব্যাপারে আমার বা শোভনের কোন আইডিয়াই তো নাই।
সাদ্দাম: ভাই উনি খুব নোংরামি করতেছে।
রাব্বানী: আমিও বুঝতেছি নিজে সেভ হওয়ার জন্য ফ্যামিলি সেভ করার জন্য। এ ছয়টা কাজ বেসিক্যালি ঠিকাদারদের সাথে ডিল করছে কে?
সাদ্দাম: ভাই মূলত ডিলটিল করছে তার ছেলে, তার পিএস সানোয়ার ভাই, আর পিডি আর তার স্বামী -এ চারজন।
রাব্বানী: হাজবেন্ড, ছেলে, পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নাসির আর পিএস (ভিসির একান্ত সচিব) সানোয়ার? ও তারাই আগে থেকে ছয়টা কোম্পানি ঠিক করে রেখেছে?
সাদ্দাম: হ্যাঁ, শুরু থেকেই তারা সব কিছু করছে।
রাব্বানী: টেকনিক্যাল কমিটিতেও ভিসি ছিল? ভিসি তো থাকতে পারে না।
সাদ্দাম: হ্যাঁ সে ছিল। প্রথমত সে তো সবাইরে ফেরত-টেরত পাঠায়া দিলো না! শিডিউল ছিনায়া টিনায়া নিচ্ছিল। পরে হচ্ছে আমরা বলছি সবাইরে কিনতে দিতে হবে সবাইরেই ড্রপ করতে দিতে হবে। তখন হচ্ছে ড্রপ সবাইরেই করাইছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে নিজ হাতে সব বিষয়গুলা করছে।
পরে আবার কথা বলবেন বলে রাব্বানী ফোনালাপ শেষ করেন।
এমকে
মন্তব্য করুন