• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ অবৈধ

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ০২ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:৪৩

বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে পরিচালিত অপারেশন ক্লিনহার্টের দায়মুক্তি অধ্যাদেশকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।

সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৫২ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশিত হয়। মূল রায়টি লিখেছেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।

রায়ে বলা হয়, আইনগত প্রতিকার পাবার অধিকার সংবিধান সব নাগরিককে দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কোনো আদালতে প্রতিকার চাইতে এবং কারো বিরুদ্ধে মামলা বা বিচার প্রার্থনা করতে পারবে না- এটা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের ধারণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ অভিযানের সময় যৌথবাহিনীর কোনো সদস্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা প্রতিকার চেয়ে ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা করতে পারবে। নিজস্ব অভিমত দিয়ে রায়ে একমত পোষণ করেন কণিষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল।

২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এ রায় ঘোষণা করা হয়।

রায়ে বলা হয়, যৌথবাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এরই মধ্যে হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, বরং সবাই আইনের অধীন। যৌথবাহিনী বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে যদি কেউ নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন তাহলে তা বেআইনি, অসাংবিধানিক ও নিন্দাযোগ্য। এ ধরনের কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে সুরক্ষা পাবার অধিকার রাখেন।

বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে জঘন্য রূপ। সংবিধান অনুসারে, একজন ভয়ঙ্কর অপরাধীরও আদালতের কাছে বিচার চাওয়ার অধিকার আছে। আমরা মনে করি, যৌথবাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারে না।

বলা হয়, জাতীয় সংসদকে সতর্ক থাকতে হবে যেনো এ ধরনের সংবিধানের চেতনা-পরিপন্থী আইন আর প্রণীত না হয়ে যায়। ইচ্ছাধীন হত্যাকে দায়মুক্তি দিতে সংসদ কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারে না। আইনটি জন্মগতভাবে মৃত এবং এর কোনো আইনগত অস্তিত্ব নেই। তবে মানুষের মৌলিক অধিকারের দিকে খেয়াল রেখে সংসদকে আইন পাস করতে হবে।

রায়ে বলা হয়, মামলার নথিপত্র এবং পেপার ক্লিপিং থেকে এটা স্পষ্ট, যৌথবাহিনীর দায়মুক্তি আইন যে সময়ের জন্য করা হয়েছে ওই সময় দেশে এমন কোনো ভয়াবহ আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়নি বা দেশে ব্যাপক কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়নি। কিংবা সে সময় দেশ গৃহযুদ্ধে বা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি। তাই যৌথবাহিনীর দায়মুক্তি আইন ২০০৩-এর মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রাণহানির কার্যকে দায়মুক্তি প্রদান করা হয়েছে, সেহেতু উক্ত দায়মুক্তি সংবিধানের ৩১, ৩২, ৪৬, ৪৭(৩) এবং ৪৭(ক)-এর বিধান মোতাবেক অসামঞ্জস্যপূর্ণ। যেহেতু দায়মুক্তি আইনটি সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে প্রণয়ন হয়নি সেহেতু আইনটি বাতিল ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলো।

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, জনগণের নিরাপত্তা বিধান, সন্ত্রাস দমন এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হয়। বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় পরিচালিত অভিযানকে ‘ক্লিনহার্ট অপারেশন’ নামে অভিহিত করা হয়।

২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের সময় নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতনের শিকার হয় কয়েকশ’ মানুষ। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে পরিচালিত এ অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো সদস্য বা ব্যক্তি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক যৌথ অভিযানে কৃত যাবতীয় কার্যাদির জন্য তাদের দায়মুক্ত করার লক্ষ্যে এ দায়মুক্তি আইন প্রণয়ন করা হয়।

দায়মুক্তি এ আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালের ১৪ জুন হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না।

ডিএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh