• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

যুদ্ধদিনের বিদেশি বন্ধু

শাহেদ জাহিদী

  ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ১০:২৮

১৯৭১ সালে বাংলদেশের মুক্তি সংগ্রামে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন বিদেশি নাগরিকগণ। বাঙালির জনযুদ্ধে প্রেরণা যোগানো সে সব বন্ধু সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই এদেশবাসীর। দেরিতে হলেও অাওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর জাতি আনুষ্ঠানিক সম্মাননা জানিয়েছে মুক্তির বিদেশি সু্হৃদদের।

২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে মরণোত্তর ‘স্বাধীনতা সম্মাননা’ দেয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হয় কৃতজ্ঞতা জানানোর পালা। পরে কয়েক ধাপে ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেয়া হয় নানা অবস্থানের বিদেশি বন্ধুদের।

আধুনিক বিশ্ব ইতিহাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নজিরবিহীন রক্তপাতের অধ্যায়। তেমনি নজিরবিহীন বাঙালির এ সংগ্রামে বিদেশি বন্ধুদের অকুণ্ঠ সমর্থন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিক, কূটনীতিক, সংস্কৃতিকর্মী, সংবাদকর্মীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ সোচ্চার হন পাকিস্তান সেনাশাসকদের বর্বরতার বিরুদ্ধে।

এদেশেরই আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠা এক শ্রেণির মানুষ যখন পাকিস্তানের দালালি করে পরিচয় দিয়েছে বিশ্বাসঘাতকতার, সহায়তা করেছে মানবতা বিরোধী অপরাধে, তখন বন্ধু হয়ে ভিনদেশিদের এগিয়ে আসাটা নিশ্চয়ই আবেগমথিত করার ব্যাপার। তাইতো রাজাকার-আলবদর-আল শামস এদেশবাসীর কাছে যেমন চরম ঘৃণার, ঠিক বিপরীতভাবে বিদেশি যুদ্ধবন্ধুরা এখানে পরম আদরের, অনেক ভালোবাসার।

অস্ত্রহাতে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ডব্লিউ জে অডারল্যান্ড। বীরপ্রতীক খেতাব পাওয়া একমাত্র বিদেশি তিনি। আর ৭০ পেরুনো ফরাসি দার্শনিক আঁদ্রে মালরো যুদ্ধে যাবার ঘোষণা দিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় সংবাদ শিরোনাম হয়ে ওঠেন। নভেম্বরে ইন্দিরা গান্ধী প্যারিসে গেলে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনায় বসেন মালরো।

বাংলার স্বাধীনতা প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থান নেন কিউবা বিপ্লবের মহানায়ক ফিদেল কাস্ত্রো। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার সম্পর্কও ছিলো গভীর বন্ধুত্বের। আর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তৎকালীন বিরোধী নেতা লর্ড হ্যারল্ড উইলসন দাবি তোলেন বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে, পাকিস্তানকে সহায়তা না দিতে।

আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে থাকলেও তৎকালীন কনসাল জেনারেল আরচার ব্লাড সমর্থন যুগিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। তথ্যচিত্র নির্মাতা লিয়ার লেভিনও অবদান রাখেন যথেষ্ট আন্তরিকতায়। শরণার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্দশাচিত্র তুলে ধরেন মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতায়।

একাত্তরে পরম বন্ধুর মতোই পাশে দাঁড়ায় ভারত সরকার ও জনগণ। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, বিপ্লবী ইলা মিত্র, জ্যোতিবসু, মানিক সরকারের মতো ব্যক্তিত্ব যেমন ভূমিকা রাখেন, তেমনি লেখক শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীরাও।বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধে বহুমাত্রিক সহযোগিতা দেন ইন্দিরা। নিজ দেশে কোটি শরণার্থী চাপ মেনে নিয়েই থেমে থাকেননি তিনি। বিভিন্ন দেশ ঘুরে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আনার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

নিউইয়র্ক ম্যাডিসন স্কয়ারে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ জর্জ হ্যারিসন-বব ডিলানের সঙ্গে অংশ নেন পন্ডিত রবি শংকরও। কলম ধরেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, আবু সায়ীদ আইয়ুব।

এমনকি খোদ পাকিস্তানেও বাঙালির ন্যায়সঙ্গত মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে দাঁড়িয়ে যান সচেতন মানুষ। কবি-সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের কলমে ফুটে ওঠে গণহত্যা-নিপীড়নচিত্র।

মহান মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি বন্ধুদের প্রতি অসীম ভালোবাসা প্রতিটি বাঙালির। হয়ে আছেন তারা চিরস্মরণীয়।

এম/ এসজেড

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh