• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মালয়েশিয়ায় ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরলেন বাংলাদেশের ওলিয়ার

মোস্তফা ইমরান রাজু, মালয়েশিয়া

  ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ২১:২২
মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ ও মোকছেদ আলীর সঙ্গে ওলিয়ার শেখ (মাঝে)

বন্দী খাঁচা থেকে মুক্ত পাখির মতো আনন্দিত ওলিয়ার শেখ। রোদ ঝলমলে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে ঝাপসা চোখ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখলেন। তারপর এক দৃষ্টিতে যতদূর যায় শুধু দেখছেন। বিনা অপরাধে ৭ বছরের বন্দী জীবনের অবসান হয়েছে ওলিয়ারের। ফাঁসির আদেশ হওয়া ওলিয়ার মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহযোগিতায় নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে ফিরছেন দেশে।

জোড়া খুনের অভিযোগে ২০০৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আটক হন ওলিয়ার। উপযুক্ত তদবিরের অভাবে এ মামলায় ফাঁসির আদেশ হয়ে যায় তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের দৃষ্টিগোচর হলে তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কারামুক্ত হন নির্দোষ ওলিয়ার শেখ।
যেভাবে ঘটনার শিকার
ভিটেমাটি বিক্রি করে ২০০৮ সালে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান গোপালগঞ্জের মুকসেদপুর উপজেলার টেকেরহাটের ওলিয়ার শেখ। শুরুতেই মালয়েশিয়ার জোহর বারুর একটি বাইসাইকেল ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। পরে একটি মুরগির ফ্যাক্টরিতে চাকরি নিয়ে থাকতেন কুয়ালালামপুরের শ্রি দামান সারায়। সেখানে রুম ভাগাভাগি করে থাকতেন তারা বেশ কয়েকজন।

২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ৩টায় পাশে শুয়ে থাকা হেলালের ছটফটানিতে ঘুম ভাঙে তার। দেখেন, দু’ব্যক্তি হেলালকে গলা কেটে পালাচ্ছে। ডাকাত পড়েছে এমন সন্দেহে ওলিয়ার ওই দু’ব্যক্তিকে তাড়া করেন। এ সময় পেছন থেকে রক্তমাখা ছুরি হাতে আরো দু’ব্যক্তি ওলিয়ারকে মারতে এলে তিনি পালিয়ে যান। আশ্রয় নেন ঘটনাস্থল থেকে দেড় মাইল দূরে বন্ধুর বাসায়।

তখনও ওলিয়ার জানতেন না, রুমমেট হেলাল শুধু নয় ওপরের কক্ষে থাকা কাদের ও শাহীন নামে ২ বাংলাদেশিকেও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। পরেরদিন ওলিয়ারকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তার এজেন্টের অফিস থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। যদিও বাংলাদেশি ওলিয়ারের বিপক্ষে কেউ সাক্ষ্য দেননি। তবুও সন্দেহাতীতভাবে তাকে এ মামলায় ফাঁসির আসামি হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত।

বিষয়টি বাংলাদেশ দূতাবাসের দৃষ্টিগোচর হলে সেখানকার কর্মকর্তা মুসরাত জেবিন ও মোকছেদ আলী আসামি ওলিয়ারের সঙ্গে দেখা করেন। পরে আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে আপিলের উদ্যোগ নেন। আইনজীবী মো. রাজদি বিন এয়াতিমান ফরেনসিক রিপোর্ট ও অস্ত্রে হাতের ছাপসহ বেশ কয়েকটি প্রমাণ আদালতে পেশ করেন, যা ওলিয়ারের পক্ষে যায়। তবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আইনের মারপ্যাঁচে ওলিয়ারকে সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণ করতে ৭ বছর সময় চলে যায়।

গেলো বুধবার ওলিয়ারের মুক্তির পর তাকে আদালত থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনে নিয়ে আসেন দ্বিতীয় সচিব ফরিদ আহমেদ ও মোকছেদ আলী। পরে লেবার কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম মুকুল প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। ওলিয়ারের সঙ্গে দেখা করার পর আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে সে পরিস্থিতির শিকার। তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিয়ে গেছে হাইকমিশন। এরই ফলশ্রুতিতে আজ সে মুক্ত হয়েছে। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।’

এদিকে মুক্ত হওয়ার পর পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ওলিয়ার। হাইকমিশনের সহযোগিতায় শিগগিরই দেশে ফেরার ব্যবস্থা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। আবেগতাড়িত ওলিয়ার আরটিভি অনলাইনকে বললেন, ‘আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ হয়েও দীর্ঘ ৭টি বছর কারাগারে কাটিয়েছি। অন্য কারো ভাগ্যে যেনো এমনটি না হয়।’ এসময় মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ দিতেও ভুললেন না ওলিয়ার।

এস

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh