• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

কেন বইটা লিখতে গেলাম ?

প্রীত রেজা

  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:৩১

বাংলাদেশের অন্যতম ওয়েডিং ফটোগ্রাফার প্রীত রেজা। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার ‘না’ শিরোনামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কেন বইটি লিখলেন এ প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন লেখক নিজেই।

‘রাস্তায় বের হলে ইদানীং এতো অসহায় লাগে! কি অসভ্যের মতো আমরা সবাই হর্ন বাজাই! দরকার ছাড়াই বাজাই। বাংলাদেশে কম বেশি সবারই ব্যক্তিগত গাড়ি চালক আছে, যারা স্বল্প শিক্ষিত বা স্বশিক্ষিত- তাদের হয়তো জ্ঞান কম। কিন্তু পেছনের সিটে বসা আমি আপনি তো কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষিত, আমরা কীভাবে সেটাকে অ্যালাউ করছি! কিছুদিন আগে রাজধানীর সাত মসজিদ রোডে রিকশা করে যাচ্ছিলাম। বিকট শব্দে আমার রিকশার পেছনে এক তরুণ একটানা হর্ন বাজাচ্ছিল, আমি খুব ভদ্রভাবে পেছন ঘুরে বললাম, ভাইয়া অহেতুক হর্ন দিচ্ছেন কেন? ছেলেটা বলল, ভাইয়া এটা লন্ডন না এটা বাংলাদেশ। এখানে এভাবেই গাড়ি চালাতে হয়, ভালো না লাগলে লন্ডন যান গা, ঢাকায় থাইকেন না! - এই বলে একটানা হর্ন বাজিয়ে চলে গেল। পোশাক-আশাকে বেশ স্মার্ট ছেলেটা! রাগে-দুঃখে-ক্ষোভে আমি চিৎকার করে বললাম- এটা বাংলাদেশ না! এটা বাংলাদেশ হতে পারে না! নিজে না বদলালে দেশ কীভাবে বদলাবে? বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই ছেলেটাই কি বাংলাদেশ?

কিছুদিন আগে একটা সিনেমা হলে জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন এক ইয়ং ছেলের বসে থেকে স্মার্ট সাজা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছিল। প্রথমে ছেলেটার উপর খুব রাগ হচ্ছিল। পরে মনে হচ্ছিল, দোষটা কি আসলে শুধু ওর? আমরা ওকে ঠিকমতো বুঝাতে পারিনি হয়তো। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কিংবা পারিবারিক শিক্ষা কিংবা আমাদের সমাজ ব্যবস্থা হয়তো তার মতো অনেকের মাঝে সঠিক আলো ছড়াতে পারেনি বলে এমনটি হয়েছে, হচ্ছে । শুধু একা ওর বা ওদের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে কি লাভ?

এই রকম অনেকগুলি ঘটনা আছে যা আমাকে ভীষণ হতাশ করেছে। ওদের ঢালাওভাবে দোষারোপ না করে বুঝিয়ে বললে হয়তো অগ্রগতি হতে পারে- এই বিশ্বাস থেকে আমি বইটি লিখতে দায়বদ্ধতা অনুভব করেছি, অনুপ্রেরণা পেয়েছি।

আমার বৃদ্ধ বয়সে, আমার নাতী-পুতি যখন আমাকে জিজ্ঞেস করবে- দাদা তুমি আমাদের জন্য কি করেছ, কি রেখে যাচ্ছ? আমি কিছু একটা বলতে পারার কারণ খুঁজছি!

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক তরুণ-তরুণী আমাকে তাদের হতাশার কথা লিখে জানায়। আমার ভীষণ মন খারাপ হয়। আমাদের প্রত্যেকটা সন্তানকে নিয়ে যদি আমি-আমরা-সমমনারা বসতে পারতাম। একজন পেশাজীবী হিসেবে আমি চাইলেও সবার কাছে যেতে পারি না, সুযোগ হয়ে উঠে না। আমি ইদানীং ভীষণ চেষ্টা করছি বিভিন্ন স্কুলে-কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে, তরুণদের সাথে কথা বলতে, তাদের বুঝতে এবং বুঝাতে- আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে, আমার সীমিত সামর্থ্য দিয়ে।

তরুণরা চাইলেই সব পরিবর্তন সম্ভব এবং আমি ছোট ছোট পরিবর্তনে বিশ্বাস করি। আমি পরিমিত হর্ন বাজাবো। আমি কয়েকটা মানুষকে পরিমিত হর্ন বাজানোর ব্যাপারে সচেতন করবো, সেই কয়েকটা মানুষ আরও কয়েকটা মানুষকে সচেতন করবে, এভাবে চলতে থাকবে, একদিন আমরা সবাই সচেতন হয়ে উঠবো। ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’ হব।

এই বইটা সেই সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের জন্য লিখা, যারা আমাকে তাদের হতাশার কথা জানিয়েছে।

এই বইটা পড়ে তোমরা একজন ও যদি একটা গাছ লাগাও কিংবা নিয়মিত রক্ত দানের মতো মহৎ কাজ শুরু করো কিংবা নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলা শুরু করো, সেটাই হবে এই বইটি লেখার সার্থকতা।

বিশেষত এই বই’টা স্কুল কলেজের সেইসব তরুণদের জন্য লিখেছি, যারা হয়তো আমার কৈশোরের মতো মন খারাপ করে তার দুঃখের কথা লিখে ঘুড়ি উড়ায়। আমি একই কথা অনেকবার, অনেকভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলেছি, বলবো। তোমাকে দিয়ে হবে, হতেই হবে- আমার কৈশোরে এই কথাগুলো শুনলে, মন থকে বিশ্বাস করলে আজ হয়তো আরও রঙ্গিন হতো আমার দুনিয়াটা।

ইদানীং ভীষণ দায়বদ্ধতা অনুভব করি। নিজের কাছে, সমাজের কাছে, দেশের কাছে। কোনও একদিন ইমেইল খুলে দেখবো...

‘আমি প্রথম বাংলাদেশি জাতিসংঘের মহাসচিব ফাতিমা কাদের। আমি ১০ বছর আগে কুড়িগ্রামে বসে আপনার ‘না’ বইটা পড়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম ‘জাতিসংঘের মহাসচিব’ হবার। আপনাকে ধন্যবাদ...। কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখবো, বিশ্বের এক নাম্বার কুক বাংলাদেশের দিনাজপুরের আদনান। টাইম ম্যাগাজিনে ওর ইন্টার্ভিউ পেইজটা পোস্ট করে লিখেছে,Thank You #pritoreza #NOtoNO।

আমি জানি সেই দিনটা আসবে, আসবেই, ১০ বছর, না হয় ২০ বছর, না হয় ৩০ বছর, না হয় আমার মৃত্যুর পর, কিন্তু দিনটা আসবেই! আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞান, দুর্বল লেখার ক্ষমতা ছাপিয়ে বইটি’কে আলোর মুখ দেখানোর সাহস দেখিয়েছি একান্তই নিজের কৈশোরের কষ্টগুলোতে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে আমাদের অপার সম্ভাবনাময় তরুণদের স্বপ্নময় অগ্রযাত্রায় সাহস দিতে, সাহস নিতে।

বইটি লিখার দৃষ্টটা সবাই দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর সহজ সরল সদিচ্ছা হিসেবে ক্ষমার আবহে দেখবেন, শুধরে দেবেন - এ আমার বিনীত প্রত্যাশা।

জিএ/এম

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
দিনাজপুরে 'বাঁশের চালে' রান্না হচ্ছে ভাত-পায়েস
রাজশাহীতে বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়ে 
বাংলা ভাষায় মুক্তি পাবে ‘পুষ্পা টু’, কণ্ঠ দিচ্ছেন যে বাঙালি গায়ক
সোনাইমুড়িতে নতুন গ্যাস কূপের সন্ধান, খনন কাজ শুরু
X
Fresh