• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নিমতলীর মতো সর্বনাশা ঘটনাও পথ দেখাতে পারেনি

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:৫৪
নিমতলী ট্র্যাজেডি (ফাইল ছবি)

রাজধানীর চানখারপুলের নিমতলীতে ২০১০ সালের ৩ জুন রাত ৯টার দিকে একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন ধরে যায়। সেখানে বিপজ্জনক কেমিক্যাল ছিল। ফলে আগুনের লেলিহান শিখা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। মুহূর্তে আগুন আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। শত শত মানুষের চোখের সামনে বহু মানুষ পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। সেই দুর্ঘটনায় ১২৪ জন প্রাণ হারান। আহত হন অর্ধশতাধিক। পুড়ে যায় ২৩টি বসতবাড়ি, দোকান ও কারখানা।

আহত যারা বেঁচে আছেন, শুধু তারাই বলতে পারবেন সেদিন তাদের চোখের সামনে কী বিভীষিকাময় চিত্রই না ফুটে উঠেছিল!

প্রায় ১০ বছর আগের সেই ‘নিমতলী’র ঘটনারই পুনরাবৃত্তি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ আগুন। বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের ভবনগুলোতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে রাত ৩টায়। সকাল সাড়ে নয়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৭০টি দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

নিমতলী ট্রাজেডির প্রত্যক্ষদর্শী শিহাব উদ্দিন বলেন, এককথায় বলব নিমতলী ট্রাজেডি থেকে আমরা কোনো শিক্ষাই নেইনি। এমন সর্বনাশা ঘটনাও আমাদের পথ দেখাতে পারেনি।

দু্ই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও গণমাধ্যম কর্মী কুশল ইয়াসির বলেন, নিমতলীর ভয়াবহ দুর্ঘটনা নিজ চোখে দেখেছি। নিমতলী ঢাকা মেডিকেলের কাছাকাছি হওয়ায় দুর্ঘটনার পর দগ্ধদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়া গেছে। এরপরেও ১২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু চকবাজার থেকে ঢাকা মেডিকেলের দূরত্ব সেই তুলনায় একটু বেশি। যে কারণে দগ্ধদের সরু রাস্তা দিয়ে নিতেও অসুবিধা হয়েছে। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরেও কারও কোনও টনক নড়েনি। আবাসিক এলাকা থেকে সরানো হয়নি রাসয়নিক দ্রব্য। যে কারণে ফের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে6ছে।

পুরান ঢাকাকে নিয়ে একটি প্রবাদ আছে, ‘বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি’। সেই আদি প্রবাদ একবিংশ শতাব্দীতেও বহাল রয়েছে। বুধবার রাতে চুড়িহাট্টায় আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট ছুটে আসে। কিন্তু সরু রাস্তার কারণে তারা গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা হতাশার সুরে বলেন, রাস্তা সরু থাকায় পাইপ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হননি। দ্রুত কাজ শুরু করতে পারলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আরও কম সময় লাগত। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কমানো যেত।

এদিকে স্থানীয়রা বলেন, এখনও কেমিক্যাল কারখানা অলিতে-গলিতে রয়ে গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো নজর দেয়নি। অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ হওয়ায় চকবাজারের আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি বিভীষিকাময় রূপ ধারণ করে।

বুধবার রাতে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের একটি ভবন থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে স্থানীয়রা জানান। পরে তা পাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। রাত ৩টায় ৩৭টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় দগ্ধ ১৫ জনসহ ৫২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুইজনকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (মিটফোর্ড) ভর্তি করা হয়েছে।

নিমতলী ট্র্যাজেডিতে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। কমিটি বিভিন্ন ধরনের সুপারিশও দেয়। সেখানে বলা হয়, পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারছিল না। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নানাভাবে চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছিল। প্লাস্টিক কারখানায় দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন লাফিয়ে বাড়তে থাকে। আহতদের আর্তনাদ আর চারপাশের মানুষের আহাজারিতে নিমতলীর বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

আহতদের দ্রুত হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। তিনি আহতদের দ্রুত সুচিকিৎসার নির্দেশ দেন। ওই বছরের ৫ জুন রাষ্ট্রীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়।

সেই দুর্ঘটনা নিয়ে নানা ঘটনাও ঘটতে থাকে। সব হারানো তিনজন অসহায় মেয়েকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেয়ের মর্যাদা দিয়ে তাদের গণভবনে বিয়ের ব্যবস্থাও করেন।

গণমাধ্যমের বিভিন্ন খবর থেকে জানা যায়, পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকায় বিপজ্জনক কেমিক্যালের শত শত কারখানা ও গুদাম রয়েছে। প্রায়ই কেমিক্যাল কারখানায় আগুন লেগে নানা দুর্ঘটনা ঘটে। দাবি ওঠে সেসব কারখানা ও গুদাম ওই এলাকা থেকে অবিলম্বে সরিয়ে নেয়ার। এ ব্যাপারে সরকারও কেমিক্যালের গুদাম এবং কারখানা সরাতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তারপর কেটে গেছে ১০টি বছর।

সেই বিপজ্জনক কেমিক্যালের কারখানা ও গুদাম এখনও সরানো হয়নি, যা ঝুঁকিপূর্ণ বলেছে ফায়ার সার্ভিস। অন্যদিকে বারবার কেমিক্যালের গুদাম ও কারখানা সরানোর উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিলেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেননি।

চকবাজার অগ্নিকাণ্ড (সংগৃহিত ছবি)

অগ্নিকাণ্ডের পর করা হয় তদন্ত কমিটি। নেয়া হয় রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা সরানোর উদ্যোগ। কিন্তু আজও দাহ্য পদার্থ নামে নিমতলীসহ সমস্ত পুরান ঢাকায় দেখা যায় এসব কেমিক্যালের কারখানা ও গুদাম।

এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, পুরান ঢাকায় মাত্র ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি-রপ্তানি ও মজুদ করার অনুমোদন রয়েছে। আর রাসায়নিক দ্রব্য থেকে পণ্য উৎপাদনের অনুমোদন রয়েছে মাত্র ৭০টি প্রতিষ্ঠানের।

জেবি/ওয়াই

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
রাজধানীর বনশ্রীতে আবাসিক ভবনে আগুন
টঙ্গীতে আগুনে পুড়ল খাদ্যপণ্যের ১২ গুদাম
শ্যামনগরে বিটুমিনের বয়লার বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৬
শ্রীপুরে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়লো কৃষকের ৯ ঘর
X
Fresh