দুদকের কর্মকর্তা পরিচয়ে ৫০০ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে প্রতারণা
বিভিন্ন সরকারি অফিসের প্রায় ৫০০ দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, কমিশনার, কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ভুয়া দুর্নীতির মামলার ভয় দেখিয়ে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক আনিছুর রহমান ও তার সহযোগী ইয়াসিন তালুকদার।
শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-৩) মহিউদ্দিন ফারুকী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এর আগে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন ৪১/১ সনাতনগড় বৌবাজার এলাকা থেকে প্রতারকচক্রের সদস্য আনিসুর রহমান ওরফে বাবুলকে (৩৬) গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী হাজারীবাগের নবীপুর লেনের একটি দোকান থেকে চক্রের অপর সদস্য বিকাশ এজেন্ট মো. ইয়াসিন তালুকদারকে (২৩) আটক করা হয়। এসময় তাদের হেফাজত থেকে ২২টি মোবাইল ফোন ও ভুয়া রেজিস্ট্রেশনকৃত ২৬টি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আনিছুর রহমান বাবুল ও ইয়াছিনকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তাদের সহযোগীদের সহায়তায় তারা এ প্রতারণা করে আসছে। ২০১৪ সালে মাদারীপুরের রাজৈর থানার এক প্রতারকের মাধ্যমে প্রতারণার হাতেখড়ি। দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের পর সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টার্গেট করে প্রতারকচক্র ফন্দি আঁটে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা প্রক্রিয়াধীন বা দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে এমন তথ্য দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ভয় দেখিয়ে তারা অর্থ আদায় করে।
এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে তারা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে সশরীরে গিয়ে মোবাইল বা টেলিফোন নম্বর সংগ্রহ করতে শুরু করে। এতে করে বিভিন্ন দপ্তর থেকে ফোন নম্বর ও খুব বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে না পেরে তারা সরকারি টেলিফোন ডিরেক্টরি থেকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের টেলিফোন ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতে শুরু করে। এইভাবে তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, এই চক্রের আরও ৭-৮ জন সদস্য পলাতক রয়েছে এবং আটকদের একজন প্রধান হোতার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা আরও জানায়, তাদের ৭ থেকে ১০টি গ্রুপ রয়েছে। তারা দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়।
ভুয়া রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম সংগ্রহ ও বিকাশ অ্যাকাউন্ট তৈরির বিষয়ে আসামি আনিসুর জানায়, বিভিন্ন দোকানে নিম্নবিত্ত মানুষ নতুন সিম কিনতে গেলে তাদের সিম ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করে এবং তাতে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতো। এছাড়াও বিভিন্ন সিম বিক্রির দোকান থেকে ভুয়া রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম সংগ্রহ করে তা দিয়েই প্রতারণার কাজ করতো। কয়েকবার একটি সিম ব্যবহারের পর সেটি ফেলে দিত চক্রের সদস্যরা।
আরসি/পি
মন্তব্য করুন