• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

২০২০ সালের মধ্যে ২ লাখ কেজি ওজন কমানোর উদ্যোগ

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৩৩

ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে স্থূলতা প্রতিরোধে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট পুষ্টিবিজ্ঞানী ও পুষ্টিবিদরা এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্থূলতা প্রতিরোধে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান পুষ্টিবিদ প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন- আগামি ২০২০ সালের মধ্যে আমরা মানুষের অতিরিক্ত ২ লাখ কেজি ওজন কমানোর উদ্যোগ নিতে চাই।

তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে ‘স্থূলতা’ মারাত্মক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ছোট থেকে বৃদ্ধ সবার মধ্যে এর প্রসার দিন দিন বেড়েই চলেছে।

বিশ্ব সংস্থার মতে, বিশ্বের প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন মাত্রার স্থূলতায় ভুগছেন। ঢাকা শহরেও এর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। প্রথম পর্যায়ে এই পরিকল্পনা ঢাকা শহরে শুরু হবে। সম্প্রতি ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার সারাদেশে স্থূলতা নিয়ে একটি অনলাইন জরিপের তথ্য তুলে ধরেন।

যেখানে দেখা যায়, বিভিন্ন বিভাগীয় পর্যায়ের মধ্যে ঢাকা শহরে শতকরা স্থূলতার হার ২৬% এবং ওভারওয়েট ৪৬.৩%। চট্টগ্রামে ৩৪.৯% স্থূল এবং ৪৪.৬% মানুষ ওভারওয়েট। খুলনায় ১৯.৩% স্থূল এবং ৫৬.৭% মানুষ ওভারওয়েট। রাজশাহীতে ৩৩.৮% স্থূল এবং ৩৬.৭% ওভারওয়েট। রংপুরে এ হার ২২.২% স্থূল এবং ৪৯.৫% ওভারওয়েট। সিলেটে ২৬.৩% স্থূল এবং ৫৭.৪% মানুষ ওভারওয়েট। সারাদেশে ওভারওয়েট ৫৭.৪% এবং ২৭.৮% স্থূল।

তিনি বলেন, সারাদেশে ধীরে ধীরে স্থূলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা ২০২৫ সালের মধ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। স্থূলতা প্রতিরোধযোগ্য। ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের স্থূলতা প্রতিরোধে বাংলাদেশে এই প্রথম ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নেয়া হলো।

শারমিন আক্তার জানান, উদ্যোগটি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য একসাথে অনেক মানুষকে নিয়ে কাজ করতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন সংগঠন, কর্পোরেট অফিস, শিল্প কারখানা, উন্মুক্ত পার্কে আসা মানুষ, ক্লাব এবং অনেক মানুষের সমাগম যেখানে সম্ভব সেখান থেকে কাজ শুরু হবে। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে কর্মসূচিগুলো জানাবো। প্রথমেই শুরু হবে মটিভেশন প্রোগ্রাম। এছাড়া বিভিন্ন গ্রুপ থেকে ওভারওয়েট গ্রুপ বাছাই করে ওজন কমানো ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হবে। সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের তৈরি এ্যাপসে সংরক্ষণ করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে তাদের পরিবর্তন আনা হবে।

তিনি বলেন- শুধু খাদ্যাভ্যাস পাল্টে ও প্রয়োজনীয় ব্যায়ামের মাধ্যমে দেহের ওজন কমানো সম্ভব। গত ১৪ বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি আরও বলেন- আমরা প্রথমে একক পর্যায়ে, পরিবার পর্যায়ে, গ্রুপ পর্যায়ে এবং পরবর্তীতে অনেক বড় পরিসরে কাউন্সেলিং শুরু করি। আমরা শুধু স্থূলতা নিয়ে নয়, পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, রেনাল প্রবলেম, ডিসলিপিডেমিয়া, আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি।

দেখা গেছে ওজন থেকেই আরও নানা ধরণের রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি সবাইকে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বলেন এবং নতুন উদ্যোগের সাথে উপস্থিত পুষ্টিবিদদের সহযোগিতা কামনা করেন।

তার ভাষায়- ডায়েট মানে কম খাওয়া বা না খাওয়া নয়। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি নিশ্চিত করেন কোন ধরণের ফুড সাপ্লিমেন্ট ছাড়া বা ওষুধপত্র ছাড়াই সঠিক খাদ্যাভ্যাসে স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অনুষ্ঠানে স্থূলতা সফলভাবে দূর করতে পেরেছেন এমন ৩ জন মানুষ তাদের সফলতার গল্প তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পুষ্টিবিশেষজ্ঞ ও গার্হস্থ্য অথনীতি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহীন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ডাঃ এস. কে রায় নতুন। এ উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানান।

এছাড়া বারডেম হাসপাতালের প্রাক্তন প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন্নাহার আলো, আয়েশা সিদ্দিকা, ফারজানা আনজিন ‘ওবেসিটি প্রতিরোধে’ তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।

ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের নতুন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লা আবু সায়ীদ গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, জীবনের একটা ভারসাম্য দরকার। জীবন যেরকম হওয়া উচিত, জীবন যেন সেরকম হয়। তিনি বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম- তখন আমাদের বইয়ে লেখা ছিল যে- ১ স্কয়ার মিটার জায়গার উপর বাতাসের যে চাপ সেটা হচ্ছে দশ টন। সেটা যদি হিসাব করা হয় তাহলে আমাদের একেকজনের উপর কত টন। আমার মনে হয় সাড়ে সাত পাউন্ড প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে যতদূর মনে পড়ে বাতাসের চাপ।

তখন ভাবতাম আমরা কি করে দাঁড়িয়ে আছি। পরে দেখলাম না ব্যাপারটা তা না। বাতাসও চাপ দিচ্ছে, আমাদের ভেতরেও একটা বাতাস আছে- সেটাও চাপ দিচ্ছে। এই দুইয়ের মধ্যে একটা ভারসাম্য তৈরী হয়েছে। এই ভারসাম্য যে মানুষের মধ্যে শরীরে মনে যত বেশি থাকে সেই মানুষ তত সুন্দর, তত আবেগও, তত ভাল। এই ভারসাম্যের জন্য জীবন সুন্দর, মানুষ সুন্দর, পৃথিবী সুন্দর। সমস্ত জায়গাতেই এই ভারসাম্য বজায় আছে। আমাদের শরীরটাকেও এই ভারসাম্যের মধ্যে আনতে হবে এবং আমি মনে করি যে, বিজ্ঞানের যত চেষ্টা মানুষের শরীর নিয়ে এবং এই পুষ্টিবিদদের চেষ্টাও ঠিক তাই। তিনি বলেন- মানুষের হৃদয় যদি জ্বলে ওঠে তাহলে সেটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ঘটনা। আর যদি জ্বলে না ওঠে সেটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঘটনা। সুতরাং যে চেষ্টাটা আমাদের করতে হবে- সারাদেশে সবার মধ্যে এই সচেতনতা ফিরিয়ে নিয়ে আসা। এরপর উপদেষ্টা আবিদ.এ.আজাদ তার বক্তব্যে নতুন এ উদ্যোগের সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করার সুযোগ আছে। এসব কর্মকা- এগিয়ে নেয়ার জন্য ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার চেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং মানুষের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় কাউন্সেলিং ও ডায়েট প্ল্যানের জন্য ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার সবসময়ই প্রস্তুত আছে বলে জানান।

আরও পড়ুন :

এসআর

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার (২৯ মার্চ)
নিউইয়র্কে বাংলাদেশির মৃত্যু নিয়ে পুলিশের বক্তব্যে ভাইয়ের বিরোধিতা
প্রতি বছর দূষণে প্রাণ হারাচ্ছেন পৌনে ৩ লাখ বাংলাদেশি
বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ
X
Fresh