• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবি, পাত্তাই দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ০৮:৫৭

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির অযৌক্তিক দাবি নিয়ে নতুন করে আলোচনায় বসার সুযোগ নেই। এমনটিই জানালেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। আর নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি পুরোপুরি রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার বলেও মনে করেন তারা। তবে সব দলের অংশগ্রহণেই আগামী সংসদ নির্বাচন হবে বলে আশা করছেন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে বলেও দাবি তাদের।

তবে আওয়ামী লীগ যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করতে চাচ্ছে, তাতে নিজেদের জয় নিশ্চিত করা ছাড়া অন্য কিছু মাথায় নেই বলে বিএনপির ধারণা। তাই নির্বাচনের আগে দেশের সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে স্বাধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে তারা। তাই সরকার যদি নির্বাচন কমিশন গঠনে দলটিকে আলোচনার টেবিলে আহ্বান জানায় তাতে তারা সাড়া দেবে এবং নিজেদের মতামত তুলে ধরবে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা যদি সবার মতামত উপেক্ষা করে নিজেদের মতো করে নির্বাচন কমিশন গঠন করে, তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নামার হুমকি বিএনপির।

আগামীতে আওয়ামী লীগ আবারো ভোট ছাড়াই রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চায়, বিএনপির এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান আরটিভিকে বললেন, ‘অসময়ে অযৌক্তিক দাবি তুলে নির্বাচন ভণ্ডুলের পায়তারা করছেন বেগম খালেদা জিয়া।’

অন্যদিকে আশার কথা শোনালেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। তিনি মনে করেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার দরজা এখনো খোলা আছে।

এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের কমিশন ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করে। পরে তাদের সঙ্গে আরো একজন যুক্ত হন। সংবিধান অনুযায়ী কমিশনের মেয়াদ ৫ বছর হওয়ায় আসছে ৮ ফেব্রুয়ারি তাদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে, কেমন হবে নির্বাচন কমিশন, এ নিয়ে গেলো ১৮ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত প্রস্তাব তুলে ধরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গেলো বছর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বিএনপি প্রধান। এ জন্য সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতেই এবার নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি।

খালেদার এ প্রস্তাবের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অবশ্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘সব দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব হাস্যকর ও অগ্রহণযোগ্য। গেলোবার যেভাবে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ হয়েছে, আসছে কমিশনও একই প্রক্রিয়ায় গঠন হবে। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। সংবিধানে ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন ও কমিশন সম্পর্কিত সবকিছু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে কোনো বহু মনোভাবের বিষয় নেই। সংবিধানে সবকিছু স্পষ্ট এবং পরিষ্কার। আমরা সংবিধান মোতাবেক চলবো।’

কাদের বললেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান যেভাবে সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন করেছেন, সে প্রক্রিয়া আমাদের সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের সে প্রক্রিয়া থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোনো কারণ বা সুযোগও নেই।’

তবে ওবায়দুল কাদের এও বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়ার আজকের প্রস্তাবে যদি ভালো ও গ্রহণযোগ্য কিছু থাকে তাহলে সেগুলো আমরা সমর্থন করবো। সুষ্ঠু নির্বাচনে আমাদেরও কিছু দাবি আছে। এগুলো রাষ্ট্রপতির কাছে আমরাও দেবো।’

কী ছিল খালেদার প্রস্তাবে
১. সব দলের ঐক্যমতে নির্বাচন কমিশন গঠন।

২. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনে দেশের নিবন্ধিত সব দলের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন।
২.১ নির্বাচন কমিশন গঠনে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের যোগ্যতা, অযোগ্যতা ও মনোনয়নের বিষয়ে সব দল ঐক্যমতে পৌঁছানো পর্যন্ত আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।
২.২ নিরপেক্ষ কমিশন গঠনে সব রাজনৈতিক দল ও স্বাধীনতার পর সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত দলিলস্বরূপ সবার সই নিয়ে তা জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে।

৩. বাছাই কমিটি গঠন।
৩.১ বাছাই কমিটি গঠনের কাঠামো সর্বজন শ্রদ্ধেয়, সৎ, অভিজ্ঞ, নৈতিকতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে ৫ সদস্যের বাচাই কমিটি গঠন করতে হবে।
৩.২ বাছাই কমিটির আহ্বায়ক হবেন অবসরপ্রাপ্ত কিন্তু নিরপেক্ষ সাবেক প্রধান বিচারপতি। যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসরের পর সরকারের লাভজনক কোনো পদে ছিলেন না।
৩.৩ বাছাই কমিটির সদস্য হবেন বিতর্কিত নয় এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বিচারক, সচিব, অবসরপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অথবা দেশের বিশিষ্ট কোনো নাগরিক ও জ্যেষ্ঠ নারী।

৪. দেশের সব রাজনৈতিক দল বা স্বাধীনতার পরে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পৃথক বৈঠকে কমিশন গঠনে প্রতি পদের জন্য ২ জনের নাম সুস্পষ্টভাবে প্রস্তাব করবে।

৫. প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা।
৫.১ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সৎ, দক্ষ ও বিতর্কিত নন এমন ব্যক্তি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন। তবে অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কাজ করেছেন এমন কেউ সিইসি হতে পারবেন না।
৫.২ একজন নারীসহ সর্বজন শ্রদ্ধেয়, সৎ, মেধাবী, সাহসী ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, বিতর্কিত নয় এমন ৪ জন নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন। তাদের যোগ্যতা নূন্যতম জেলা জজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা বা সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র কোনো আইনজীবী।

৬. রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব করা দু’জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ৮ জন কমিশনারের নাম বাছাই কমিটির কাছে পাঠাবে।

৭. বাছাই কমিটি বিচার বিবেচনা করে যাদের নাম প্রস্তাব করবে তাদের মধ্য থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ৪ জন কমিশনার নিয়োগ দেবেন রাস্ট্রপতি।



এস

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh