• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

‘মা বেঁচে আছেন কিনা জানি না’

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:১৭

ডাক্তারের ভুল অপারেশনে দুই কিডনি হারানো রওশন আরার ছেলে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদার জানেন না তার মা বেঁচে আছেন না মরে গেছেন। হাসপাতালে তার মা’র নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে তিনি আশঙ্কা করছেন তার মা বেঁচে নেই।

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে রফিক শিকদার বলেন, কয়েকজন ডাক্তারের কাছে শুনেছি তিনি ক্লিনিক্যালি ডেথ। দায়িত্বরত ডাক্তাররা তার সম্পর্কে কিছুই বলছেন না।

রফিক শিকদার বলেন, মা’র একটি কিডনিতে অপারেশন করতে গিয়ে ভালো কিডনিও কেটে ফেলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের ডাক্তার অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল। পরে এই অপরাধ তিনি লিখিতভাবে স্বীকার করে নিয়ে আমাদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন যে, তিনি নিজ খরচে কিডনি প্রতিস্থাপন করবেন। কিন্তু ডাক্তার হাবিবুর রহমান কালক্ষেপণ করে সময় নষ্ট করছেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউ এর লাইফ সাপোর্টে ডিফ কোমায় পড়ে আছে আমার অসহায় মায়ের নিথর দেহ। হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তারের কাছে জানতে পেরেছি উনি ক্লিনিক্যালি ডেথ। জানি না মা বেঁচে আছে কিনা?

-------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : খালেদা জিয়ার নির্বাচন করা সম্ভব, যদি আদালত বলেন : ইসি
-------------------------------------------------------

এ বিষয়ে ডাক্তার হাবিবুর রহমান দুলালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করবো না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দেখবে। তারা বিস্তারিত জানাবে। যদি উনি মামলা করেন আমি মামলা নিয়ে লড়তে রাজি আছি।

উনি বেঁচে আছেন কিনা জানতে চাইলে, তিনি বলেন দুই একদিন আগে উনি একটি বড় ধরনের স্টোক করেছেন। তিনি এখনো পর্যাবেক্ষণে রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রফিক শিকদার পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, চলতি বছরের ২৭ জুন আমার মা রওশন আরার বাম কিডনিতে সমস্যার কারণে ঢাকার মিরপুরে বিআইএইচএস হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানকার মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী মায়ের দুটো কিডনির একটিতে (বাম কিডনি) পাথর দেখা দেয়। ফলে মূত্রনালী ব্লক হয়ে তার বাম কিডনি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৭ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের প্রফেসর হাবিবুর রহমান দুলাল এর তত্বাবধানে ভর্তি করি। মা’কে হাসপাতালে ভর্তির প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়। ক্যাথেটারের মাধ্যমে বাম কিডনিতে জমা হওয়া ইনফেকশনযুক্ত ইউরিন অপসারণের মাধ্যমে শারীরিক অবস্থাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা হয়। হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৫ জুলাই মা সাময়িক রিলিজ দেয়া হয়। পরে মাকে ফের ভর্তির জন্য হাসপাতাল থেকে ফোন দেয়া হয়।

এরপর ২৮ আগস্ট মাকে ঢাকায় এনে উক্ত হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল এর অধিনে পূনরায় ভর্তি করি। বিভিন্ন পরীক্ষার নিরীক্ষার পর অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল আমার মায়ের বাম কিডনি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ৫ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে মায়ের অপারেশন হয়।

তিনি আরও বলেন, অপারেশন শেষে মাকে পোস্ট অপারেটিভে রাখার পর জানতে পারি মায়ের ইউরিন উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। রাত ১২টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার আমাকে বলেন যে, আপনার মায়ের অ্যাকুইট রেনাল ফেইলুর। অর্থাৎ অপারেশনের পর থেকে ডানপাশের সুস্থ কিডনীটি আর কাজ করছে না, দ্রুত উনাকে আইসিইউতে নেয়ার ব্যবস্থা করুন। আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ খালি নেই, কোনো প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়ার ব্যবস্থা করুন।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ডিউটি ডাক্তারের কথা মতো ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার দিকে ইনসাফ বারাকাহ কিডনি এন্ড জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে মাকে ভর্তি করি। ইনসাফ বারাকা কিডনি এন্ড জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার হুমায়ূন কবীর সেলিম মায়ের কিডনির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য ল্যাব এইড হাসপাতাল হতে সিটিস্ক্যান করতে বলেন। সিটিস্ক্যান করার পর রিপোর্টে দেখা যায় শরীরে মায়ের কিডনি নেই। পরে ইনসাফ বারাকাহ কিডনি এন্ড জেনারেল হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম সাহেব অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল এর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং মাকে পূনরায় পিজি হাসপাতালে ভর্তির জন্য পরামর্শ দেন।

পরে ৮ সেপ্টেম্বর মাকে নিয়ে পিজি হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল এর কাছে যাই। পরে তিনি মাকে পূনরায় তার অধিনে ভর্তি করে নেন। উনাকে ল্যাবএইড হাসপাতালের সিটিস্ক্যান রিপোর্ট দেখালে উনি রিপোর্টে বিভ্রান্ত না হয়ে মা সুস্থ হওয়ার আশ্বস্ত দেন। পরে মায়ের শরীরে পানি জমে অস্বাভাবিক মাত্রায় ফুলে যায়। অতঃপর শুরু হয় ডায়ালাইসিস।

রফিক শিকদার বলেন, ১৯ সেপ্টেম্বর মাকে নিয়ে বিআরবি হাসপাতালের নেফ্রলজি বিভাগের প্রধান ডাক্তার এম, এ সামাদের কাছে যায়। পরে সমস্ত মেডিকেল রিপোর্ট পর্যোলোচনার পর পুনরায় আল্ট্রাস্নোগ্রাম করে মায়ের পেটে কোনো কিডনির অস্তিত্ব না থাকার কথা জানান। পরে ১ অক্টোবর তারিখে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল অপরাধের দায় লিখিতভাবে স্বীকার করে নেন এবং নিজ খরচে আমার মায়ের কিডনি প্রতিস্থাপনের যাবতীয় দায়িত্ব লিখিতভাবে গ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন :

এমসি/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh