তারা মানুষ মারবে আর শাস্তি দেয়া যাবে না?
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে রোববার সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার এই কর্মবিরতি চলছে। এতে গতকাল থেকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। আজও সকালে রাজধানীর অফিসগামী হাজারো মানুষ হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন।
রাজধানী ঢাকার গাবতলী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, শাহবাগ, গুলিস্তানসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় আজ গণপরিবহনের জন্য মানুষদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
গণপরিবহন না থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি ও অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ের গাড়ি, মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলেছে। এককভাবেও অটোরিকশা চলেছে। বিআরটিসির বাস গতকালের চেয়ে আজকে বেশি দেখা গেছে।
তবে হঠাৎ পরিবহন শ্রমিকদের এই কর্মবিরতিতে মানুষের মনে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। এটা স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে জানান অনেকে।
কারওয়ান বাজার গণপরিবহনের জন্য দাঁড়িয়ে আছে এক বেসরকারি চাকরিজীবী। নাম খোরশেদ আলম। তিনি যাবেন মিরপুরে। গতকাল তিনি মিরপুর-১ রিকশাতে গিয়েছিলেন ৩০০ টাকা দিয়ে। আজ রিকশাও তেমন পাচ্ছে না। তিনি বলেন, অফিসে লেট করে গেলেও বেতন কাটা যাবে। রিকশা দিয়ে গেলেও বেশি টাকা লাগছে। আমরা আসলে জিম্মি। এই ধর্মঘটের কোনও মানে নেই। তারা (পরিবহন শ্রমিকরা) কি চায় তারা মানুষ মারবে কিন্তু শাস্তি দেয়া যাবে না। এটা কি মগেরমুল্লুক।
রবিউল ইসলাম নামে আরেক জন বলেন, সরকারের এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এটা অযৌক্তিক আন্দোলন। এই বিষয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গেও কথা বলা উচিত।
শহীদ কবির নামে এক চাকরিজীবী বলেন, সরকারের আরও আগেই উচিত ছিল দুর্ঘটনার জন্য কঠোর আইন করা। বারবার একই ঘটনা ঘটলে সেটা দুর্ঘটনা নয়। দুই বাস পাল্লা দিতে গিয়ে পথচারীদের উপর বাস উঠিয়ে দেয়া এটা কোনও দুর্ঘটনা নয়। তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ওভারটেক করা এটা কি দুর্ঘটনা?
গতকাল রোববার মোটরসাইকেলের চালক, ব্যক্তিগত গাড়ির চালক কিংবা আরোহীদের মুখেও পোড়া মবিল মেখে দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয় রাস্তায় পরিবহন নামা শ্রমিকরা। এটা নিয়ে গতকাল থেকে চলছে সামাজিক গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া দেশব্যাপী ধর্মঘট শান্তিপূর্ণভাবে চলছে। যাত্রাবাড়ীতে একটি প্রাইভেট কারের চালকের মুখে কালো পোড়া মবিল দেয়ার ঘটনায় দুই পরিবহন কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অপরদিকে শ্রমিকরা যে আট দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন, সেই দাবি এখনই পূরণ করা সম্ভব নয় বলে গতকাল রোববার জানিয়ে দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, শ্রমিক নেতারা আইনটি ভালোভাবে না পড়েই আন্দোলনে নেমেছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও আইনটি সংশোধন করা বা শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়া সম্ভব নয় বলে জানান।
পরিবহন শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সড়ক দুর্ঘটনার সব অপরাধ জামিনযোগ্য করা, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল করা, সড়ক দুর্ঘটনায় গঠিত যেকোনো তদন্ত কমিটিতে ফেডারেশনের প্রতিনিধি রাখা, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি নির্ধারণ এবং সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা।
আরও পড়ুন :
- জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলার রায় পড়া শুরু, নিরাপত্তা জোরদার
- সংলাপে বসতে আওয়ামী লীগকে ঐক্যফ্রন্টের চিঠি
এসএস
মন্তব্য করুন