• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পাকিস্তানকে নিয়ে আমরা হতাশ

বাংলাদেশের বাজারে বেশি সুবিধা নেয় ভারতই

অনলাইন ডেস্ক
  ১৫ অক্টোবর ২০১৬, ০৮:৫৩

ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে আসছে রোববার ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগেই প্রধানমন্ত্রীর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু। সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারটি নেন। শুক্রবার দ্য হিন্দুতে সেটি প্রকাশ হয়। যেখানে সার্ক সম্মেলনে যোগদান না করার কারণ, ভারত-পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান, সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। ১৫ ও ১৬ অক্টোবর ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত হবে বিমসটেক সম্মেলন।

দ্য হিন্দু : সার্কের প্রতিষ্ঠাতা দেশ বাংলাদেশ। অথচ এ বছর পাকিস্তানের সার্ক সম্মেলন বর্জনকারী দেশগুলোরও একটি। এর মানে কি সার্কের ইতি ঘটছে?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : না, সার্ক বর্জনের ক্ষেত্রে যে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছি তাতে আমরা বলেছি, সার্ক অঞ্চলে এখন যে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে এ সময় সম্মেলন করার জন্য উপযুক্ত নয়। তাছাড়া বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে পাকিস্তান অসন্তুষ্টি জানিয়েছে, তাদের পার্লামেন্টেও এ ইস্যুটি উত্থাপিত হয়েছে। অগ্রহণযোগ্য মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে। এতে আমরা মর্মাহত। এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমরা তো আমাদের দেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। এটা তাদের ভাবার বিষয় নয়।

পাকিস্তানের এ ধরনের আচরণের কারণে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার জন্য আমার ওপর চাপও রয়েছে। অথচ আমি বলেছি, সম্পর্ক থাকবে। আমরা পারস্পরিক বিরোধ মীমাংসা করে নেবো। বাস্তবতা হলো, আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় পেয়েছি এবং তারা পরাজিত শক্তি। আমরা যুদ্ধে জিতেছি এবং তাদের কাছ থেকে দেশকে মুক্ত করেছি। আর তারা যে এটা ভালোভাবে নেবে না তা প্রত্যাশিত।

পাকিস্তান থেকে শুরু হওয়া সন্ত্রাসবাদ কী আপনার জন্য প্রধান ইস্যু নয়? বাস্তবতা হলো, উরি হামলার পর একইসময়ে বাংলাদেশ, ভুটান, আফগানিস্তান ও ভারতের সার্ক সম্মেলন বর্জনকে সমন্বিত সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছে। পাকিস্তানকে একঘরে করতেই কী এমনটা করা হয়েছে?
পাকিস্তান পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে আমরা সার্ক সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সন্ত্রাসবাদের কারণে সে দেশের সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুগছে। ওই সন্ত্রাসবাদ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। সে কারণেই আমরা অনেকে পাকিস্তানকে নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছি। ভারত-পাকিস্তানেরও দ্বিপাক্ষিক সমস্যা রয়েছে এবং আমি সে ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাই না। উরির হামলার কারণে ভারত সার্ক বর্জন করেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কারণটা কিন্তু ভিন্ন।

সন্ত্রাসীদের নিধন করতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে অভিযান চালানোর ব্যাপারে ভারতের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন?
আমি মনে করি, দু’দেশেরই নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) অলঙ্ঘনিয়তা মেনে চলা উচিত এবং এর মধ্য দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবাদবিরোদী যুদ্ধ চালানোর কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমর্থন হারাচ্ছে।
এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক যে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো ভুক্তভোগীদের চেয়ে অপরাধীদের অধিকারের পক্ষেই বেশি সোচ্চার। যুক্তরাষ্ট্রে কী হচ্ছে? যখন সেদেশের স্কুল কিংবা অন্য কোথাও হামলা হয় তখন সেখান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করে? তারা কি হামলাকারীদের হত্যা করে জিম্মিদের উদ্ধার করে না? তাদের ওপর হামলা করলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী হামলাকারীদের হত্যা করবে না?

গণতন্ত্রের আরেকটি অংশ হলো সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। এরপরও সম্প্রতি এক স্বনামধন্য সম্পাদককে গ্রেপ্তার, কঠোর সাজার বিধান রেখে নতুন ডিজিটাল আইন চালুর মধ্য দিয়ে সেই ইঙ্গিতই মিলছে যে আপনি সংবাদমাধ্যমকে কঠোর হাতে দমন করছেন।
আমি যখন ক্ষমতায় এসেছি তখন আমাদের একটিমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল ছিল, এখন ২৩টি। কে করেছে এগুলো? কারা শত শত সংবাদপত্রকে অনুমোদন দিয়েছে? আর যদি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাই না থাকতো তবে স্বাধীনতা যে নেই এ কথাটিই বা তারা লেখার সুযোগ পায় কীভাবে? আমরা সম্পাদক শফিক রেহমানকে অন্য অপরাধে গ্রেপ্তার করেছি। তিনি যদি দেশবিরোধী কাজ করেন তবে তাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। বাংলাদেশে অনেক সম্পাদক রয়েছেন। তাদের কয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে?

চীন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভারতে অনুষ্ঠেয় ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সফর করছেন। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে ভারত খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের চেয়ে ভারত পিছিয়ে কেন বলে মনে করেন?
সত্যিকার অর্থে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অনেক বেড়েছে, বিশেষ করে ভারত আমাদেরকে শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত সুবিধা (২০০৭-০৮) দেয়ার পর সে বাণিজ্য জোরালো হয়েছে। গেলো দিনগুলোতে আমরা ভারত থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতাম। এখন আমাদের প্রয়োজনমাফিক খাদ্যশস্য রয়েছে। আর তাই বাণিজ্য কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে সেটি একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু আমাদের অনেক অভোগ্য পণ্য, মেশিন, তুলা এখনও ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে। আমাদের সম্পর্ক ভালো এবং তা ক্রমাগত বাড়বে।

চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার, প্রতিরক্ষা অংশীদার। বাংলাদেশ চীনের ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগে বড় ভূমিকা পালন করেছে। আঞ্চলিকভাবে বাংলাদেশ চীনের কথিত ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ হয়ে উঠছে বলে ভারতের যে উদ্বেগ রয়েছে তা কী বাস্তবসম্মত নয়?
আপনারা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ভালো সম্পর্কের কথা বলেছেন। আপনাদের যদি সেটা মনে হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকছে বলে কী করে অভিযোগ করতে পারেন? না, আমাদের নীতিমালা খুব পরিষ্কার। আমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা তা বজায় রাখতে চাই। আমি বিশ্বাস করি সুসম্পর্কের জন্য কানেকটিভিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিআইএন নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছি এবং এর ফলে ভুটান, ভারত এবং নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হয়েছে। চীন, ভারত আর মিয়ানমারের সঙ্গেও আমরা বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর স্থাপন করেছি, যেন আমরা সবাই একসঙ্গে হয়ে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে পারি। আর তাতে আমাদের জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হয়। আমাদের জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতাও বাড়বে। আর তাতে আমাদের অঞ্চলে সবচেয়ে লাভবান কে হবে? ভারত। বাংলাদেশের বাজারে ভারতই বেশি সুবিধা নিতে পারে। আপনাদের সেটা অনুধাবন করা প্রয়োজন।

এপি/ এস

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh