৩০ বছর পর, সবুজে স্বাগতম
ঢাকায় চীন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন যুগ সূচনার বার্তা নিয়ে ঢাকায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চায়না এয়ারের বিশেষ একটি বিমানে শুক্রবার সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছেন তিনি। এ সময় জিনপিংকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ।
চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি এ দেশের আকাশসীমায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দু’টি জেট তার বিমানটিকে এসকর্ট করে নিয়ে আসে।
এরপর লাল গালিচা সংবর্ধনায় সিংক্ত হন চীনের রাষ্ট্রপতি। পরে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল জিনপিংকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। সম্মান জানানো শেষে পরিবেশন করা হয় দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মোটর শোভাযাত্রাসহকারে চীন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে যাওয়া হয় হোটেল লা মেরিডিয়ানে।
এদিকে ১৯৮৬ সালে চীনের সেসময়কার প্রেসিডেন্ট লি শিয়ান নিয়ানের প্রথম ঢাকা সফরের ৩ দশক পর এটিই চীনের কোনো প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে অবশ্য ২০১০ সালে ঢাকা আসায় শি জিন পিংয়ের এটি বাংলাদেশে দ্বিতীয় সফর।
চীনের এ মুহূর্তে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি শি জিনপিং। তিনি বর্তমানে চীনের রাষ্ট্রপ্রধান, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান। বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্বে রূপ দিতে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রতি জোর দিয়েছেন জিনপিং।
৩০ বছর পর চীনা প্রেসিডেন্টের এ সফরে দ্বিপাক্ষিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক, আঞ্চলিক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন শেখ হাসিনা ও শি জিনপিং। সব মিলিয়ে ২২ ঘণ্টার সফরকালে দু’দেশের মধ্যে অন্তত ২৫টি চুক্তি ও সমঝোতা সই হবে। যেখানে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। চীন প্রতিবছর ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করে। এক সময় বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করতো ভারত। ২০০৭ সালের পর চীন সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে থাকে। তার বিপরীতে বাংলাদেশ চীনে রপ্তানি করে এক বিলিয়ন ডলারের কম পণ্য। বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হবে।
বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ পেতে চীন খুবই আগ্রহী। তবে এককভাবে কোনো দেশকে এ কাজ করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। পটুয়াখালীর পায়রায় এ গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজকে ২২টি অংশে ভাগ করেছে সরকার। চীন এক্ষেত্রে যে কোনো অংশের কাজ পেতে পারে।
এদিকে শি জিনপিংয়ের সফরে মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মী, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকসহ প্রায় দু’শ সফরসঙ্গী রয়েছেন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় গবেষণা সেলের প্রধান ওয়াং হিউনিং, সিপিসি প্রধান কার্যালয়ের প্রধান লি জানসু, স্টেট কাউন্সিলর ইয়াং জিয়েছি, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং উই, উন্নয়নমন্ত্রী ঝু সাওসি, অর্থমন্ত্রী লো জিইউ, বাণিজ্যমন্ত্রী গাও হুচেং, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ঝাও সিয়া চুনসহ ১৩ নীতি নির্ধারক, ৩৩ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ৩৪ নিরাপত্তা কর্মী, ৪০ ব্যবসায়ী, প্রায় ৭০ সাংবাদিক রয়েছেন সফরসঙ্গীদের তালিকায়।
এস
মন্তব্য করুন