• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

আরো ৩৫ মামলার বেড়াজালে খালেদা

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১১:১৯

আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৫ বছরে সাজা হয়েছে। পাঠানো হয়েছে নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগারে। এ নিয়ে হাইকোর্টে অপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। তাতে জামিন মিলবে কিনা, সে নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সহসা তার আদালতে ছোটা বন্ধ হচ্ছে না। কারণে গলায় ফাঁস হয়ে আছে আরো ৩৫টি মামলা। এর মধ্যে চারটি দুর্নীতির। তার তিনটি করা হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে, একটি করা হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার পর্যায়ে আছে। ওই মামলার যুক্তিতর্ক চলছে। আগামী ২৫ ও ২৬ এই মামলায় যুক্তি উপস্থাপনের দিন নির্ধারিত আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা মোট ৩৬টি। ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা আছে। এসব মামলার মধ্যে একটির রায় হয়েছে। আরও ১৫টি মামলার অভিযোগ গঠন হয়ে বিচারের আদেশ দিয়েছেন বিচারিক আদালত। তবে এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পর ১১টির বিচার স্থগিত আছে।আর বাকি ২০টি মামলার কোনোটিতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে, কোনোটি তদন্তের পর্যায়ে আছে। ক্ষমতায় থাকাকালে দুর্নীতি ছাড়া বাকি মামলাগুলো সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন আদালতে হত্যায়, সহিংসতা, নাশকতায় নির্দেশ, রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির অভিযোগে করা হয়েছে। যেসব মামলায় স্থগিতাদেশ নেই তার মধ্যে ১৪টির বিচার চলছে পুরান ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে। গত ৮ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

আলোচিত মামলারগুলোর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা অন্যতম। অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এ মামলাটি করে দুদক। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এই মামলাটি এখন যুক্তি উপস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। আলোচিত বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতির মামলা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া এবং তার মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে করা হয়। চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতির অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়। ওই বছরের ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। মামলাটির কার্যক্রম দীর্ঘদিন উচ্চ আদালতে স্থগিত থাকলেও গত বছর ২৮ মার্চ স্থগিতাদেশ তুলে নেয় উচ্চ আদালত।তবে এই মামলাটির অভিযোগ গঠন হয়নি এখনও।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে যা বললেন এরশাদ
--------------------------------------------------------

এদিকে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলাটি হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী গ্যাটকো দুর্নীতি মামলাটি করেন। এতে খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে মামলার এজাহারে আসামি করা হয়। মামলা হওয়ার পরদিনই খালেদা ও কোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় জরুরি ক্ষমতা আইনে। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন। উচ্চ আদালতে স্থগিত থাকার পর ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে বিচারিক আদালতে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এই মামলায় আগামী ৪ মার্চ অভিযোগ গঠনের শুনানি আছে।

নাইকো দুর্নীতি মামলাটি হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এই মামলা করে দুদক। পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়া ও দলের নেতা মওদুদ আহমদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোপত্র দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডিয় কোম্পানি নাইকোর হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন। দীর্ঘ স্থগিতাদেশ শেষে ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ মামলাটির বিচার শুরুর আদেশ দেয় উচ্চ আদালত। গত ১৫ জানুয়ারি এই মামলা থেকে খালেদা জিয়ার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন জানানো হয়। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি এই আবেদনের ওপর শুনানি হবে।

এছাড়া হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহ ও নাশকতার মামলা রয়েছে বেশ কয়েকটি। নাশকতা ও হত্যার অভিযোগে করা যাত্রাবাড়ী থানার দুটি মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। ২৫ জানুয়ারি এই অভিযোগ গঠনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এদিন খালেদা জিয়া বিশেষ জজ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার ‍শুনানিতে থাকায় ওই শুনানি হয়নি। বিশেষ ক্ষমতা আইনে দারুস সালাম থানার দায়ের করা দুই মামলায় খালেদা জিয়াসহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। এই মামলায় খালেদা জিয়াকে পলাতক দেখিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। এর একটিতে আসামি রয়েছেন ২৮ জন, অন্যটিতে ২৩ জন। ২০১৫ সালে হরতাল-অবরোধ চলাকালে ফ্রেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে এ মামলা দুটি দায়ের করা হয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে ঢাকাসহ দেশের থানায় বিভিন্ন মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় দুইটি, খুলনা সদর থানায় একটি এবং রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার তিনটি মামলা উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে গুলশান, কুমিল্লা ও খুলনার মামলাগুলো তদন্তাধীন।

১৫ আগস্ট ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগেও মামলা আছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। আগামি ১৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নতুন তারিখ ধার্য করেছে আদালত। ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী ‘স্বীকৃত স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকার মানহানি ঘটানোর অভিযোগে সিএমএম আদালতে একটি মানহানির মামলা করেন। এই মামলায় গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। তবে সে পরোয়ানা তামিল করেনি পুলিশ।

মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলায়ও মামলা রয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিক। ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর এক আলোচনায় খালেদা বলেছিলেন, ‘আজকে বলা হয়, এতো লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানারকম তথ্য আছে।’ এই মামলায় এখনও প্রতিবেদন দেয়নি পুলিশ।

আরও পড়ুন:

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৩ জানুয়ারি : ইতিহাসে আজকের এই দিনে
X
Fresh