হত্যা-ধর্ষণ-গণধর্ষণে মেতে ওঠে মিয়ানমার সেনারা
রাখাইন রাজ্যে বেশ কয়েক দিন ধরে চলা সেনা অভিযানে হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন অনেক রোহিঙ্গা মুসলিম।
জাতিসংঘের সন্দেহ, এ অভিযানে নিহতের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। এছাড়া মানবতাবিরোধী নানা অভিযোগ উঠেছে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।
পালিয়ে আসা ১০১ জন রোহিঙ্গা নারীর সাক্ষাৎকার নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, অধিকাংশই ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও নানা ধরনের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেয়া এক মেয়ে জানান, তাকে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়। তার সারা শরীরে মোমবাতির ছ্যাকা দিয়ে উল্লাস করে সেনারা। তিনি এখনো সুস্থ হননি। টাকার অভাবে নিজের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না তিনি।
ধর্ষণের ফলে সন্তান সম্ভাবা হয়ে যাওয়া এক নারী জানান, সেনা সদস্যদের নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে যান। সেনারা তাকে জঙ্গলে ফেলে দেয়। বাংলাদেশে আসার পর বুঝতে পারেন তিনি সন্তান সম্ভাবা। ওষুধ খেয়ে তিনি গর্ভপাত করিয়েছেন।
স্বামী ও বাবা হারানো এবং ধর্ষণের শিকার এক নারী জানান, রাতে সেনারা তাদের ঘরে আগুন দেয়। তার স্বামী ও বাবাকে মেরে ফেলে। তাকে তার বাচ্চার সামনেই ধর্ষণ করে।
আরেক নারী জানান, তিন জন সেনা যতভাবে পেরেছে তাকে ধর্ষণ করে। তার সারা শরীর অবশ হয়ে যায়।
ধর্ষণের শিকার হওয়া চার সন্তানের মা জানান, তাকে যখন ধর্ষণ করে, তখন বাধা দিলে সেনারা তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। তার চারটা বাচ্চার এখন কী হবে?
কক্সবাজারের কুতুপালং, শাপলাপুর, লেধা ও অনিবন্ধিত শরণার্থী শিবিরে ঘুরলে এমন অসংখ্য নারীর দেখা মিলবে, যারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ও স্বজন হারিয়েছেন।
গেলো ৯ অক্টোবর মিয়ানমার সীমান্ত চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলায় নয় জন পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর পর রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরু করে দেশটি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, চার মাস ধরে চলা এ অভিযানে প্রায় দুই হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী।
প্রায় এক হাজার মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। তাদের হিসেবে, ৯২ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম ভিটে ছাড়া হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬৯ হাজার জন আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।
আগামী ১৩ মার্চ জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে রাখাইন রাজ্যের ঘটনায় তদন্ত কমিশন বা সিওআই গঠনের প্রস্তাব ওঠার কথা রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হত্যা ও ধর্ষণের কথা শুনে তা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন মিয়ানমারের নেত্রী শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সুচি। প্রকৃত সত্যকে আড়াল করতে এখনো রাখাইন রাজ্যে গণমাধ্যম ও জাতিসংঘকে ঢুকতে দেয়নি মিয়ানমার।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে কথা বলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এ পাশবিক নির্যাতনের কথা জানিয়েছে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল।
কে/জেএইচ
মন্তব্য করুন