• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

টার্গেট ছিল ঈদ জামাত

মাজহার খন্দকার

  ১০ জুলাই ২০১৬, ১৪:৪২

সময়ের ব্যবধান মাত্র ছয় দিন। গুলশান থেকে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া। দূরত্ব প্রায় দেড়শ' কিলোমিটার। সুরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকা গুলশানে বর্বর জঙ্গি হামলার শোক ও ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই বৃহস্পতিবার সকালে এবার উগ্রপন্থিরা আঘাত হেনেছে দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়।

পুলিশপ্রধান বলেছেন, দুই ঘটনায় একই কায়দায় হামলা চালায় জেএমবি। গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের কিছুক্ষণ আগে এই ভয়ঙ্কর সংবাদ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েনের নির্দেশ দেন।

হামলাকারী দুই তরুণের হাতে ছিল বোমা ও ক্ষুদ্রাস্ত্র। পরনে পায়জামা-পাঞ্জাবি। একজনের পায়জামার নিচে জিন্সের প্যান্টে ছিল অস্ত্র রাখার 'বিশেষ পকেট'। বোমা হামলায় আহত পুলিশ সদস্যদের চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। নিহত হন কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম তপু (২৪) ও আনছারুল হক (৩০)। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১১ পুলিশ সদস্য।

হামলার পর পুলিশের সঙ্গে দুই ঘণ্টা বন্দুকযুদ্ধ হয় দুই জঙ্গির। এতে আবীর রহমান (২০) নামে এক জঙ্গি গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। সে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর শের্ষ বর্ষের ছাত্র। গত মার্চ থেকে 'নিখোঁজ' ছিল আবীর। ছেলের নিখোঁজের কথা জানিয়ে ঈদের আগের দিন আবীরের বাবা ভাটারা থানায় জিডি করেছিলেন। অন্য হামলাকারী শফিউল ইসলাম ওরফে আবু মোকাদ্দেল ওরফে ডন আহত অবস্থায় আটক হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে জঙ্গিরা শোলাকিয়ার মূল জামাতকে টার্গেট করে হামলার পরিকল্পনা করলেও আগেই পুুলিশ চেকপোস্টে বাধার সম্মুখীন হওয়ায় সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। গতকাল রাত পর্যন্ত জঙ্গি হামলার ঘটনায় মামলা হয়নি। কিশোরগঞ্জজুড়ে ছিল কড়া নিরাপত্তা। শোলাকিয়ার ঘটনার পর চেকপোস্ট বসিয়ে রাজধানীতেও বাড়ানো হয় নিরাপত্তা।

এদিকে জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির সময় ঝর্ণা রানী (৪৫) নামে এক গৃহিণী বাসার ভেতরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। শোলাকিয়ার ঘটনায় গুরুতর আহত ছয়জনকে ওই দিন তাৎক্ষণিকভাবে হেলিকপ্টারে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। তবে জঙ্গি হামলায় ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় এ বছর অনুষ্ঠিত ১৮৯তম ঈদ জামাত পণ্ড হয়নি। মূল ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ এবার নামাজ পড়াতে পারেননি।

গুলশানে হামলার ছয় ঘণ্টার মধ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করে ছবিসহ বার্তা পোস্ট করলেও এখনও শোলাকিয়ার ঘটনায় দেশি-বিদেশি কোনো উগ্রপন্থি সংগঠন দায় স্বীকার করেনি। তবে পুলিশ বলছে, দুটি হামলা একই সূত্রে গাঁথা। দুই ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) জড়িত। সব মিলিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকা ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণ গেল। নিহতদের মধ্যে চারজন পুলিশ সদস্য। ১৭ জন বিদেশি নাগরিক। অন্যরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার। দুই ঘটনায় নিহত হয়েছে সাত জঙ্গি।

এদিকে গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেছেন, গুলশানে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া_ দুটি হামলার জন্যই জঙ্গি সংগঠন জেএমবি দায়ী। গুলশানে যারা হামলা করেছে, তারাই শোলাকিয়ায় হামলা চালিয়েছে, তারা জেএমবি জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য।

আইএসের বিষয়ে তিনি বলেন, আইএস দেশ-বিদেশে সব হামলার ক্ষেত্রেই দায়িত্ব স্বীকার করে। আইএস কেন হামলার দায় স্বীকার করে, এ দাবিটা কাদের মাধ্যমে করে, কেন করে তা উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি।

১ জুলাই গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর গোয়েন্দা তথ্য ছিল— জনবহুল এলাকায় যে কোনো সময় আরও হামলা হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা আর ভীতি। এরপর ঈদে রাজধানীসহ সারাদেশেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শোলাকিয়ায় নেওয়া হয়েছিল বাড়তি নিরাপত্তা। ঈদগাহে প্রবেশের ১০টি রাস্তায়ই পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছিল। পুরো ঈদগাহ ঘিরে ছিল নিরাপত্তা বেষ্টনী। তল্লাশি এড়িয়ে কারও পক্ষে ঈদগাহে প্রবেশ সম্ভব ছিল না। কার্যত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে দুই জঙ্গি পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে পুরনো শঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করল। পুলিশকে দিল আরও কঠিন বার্তা।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান সমকালকে বলেন, পুলিশের প্রতিরোধের কারণে জঙ্গিরা মূল জামাতে হামলা করতে পারেনি। পুলিশ সাহসের সঙ্গে পুরো পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান জানান, ঈদের জামাতে ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। ঈদগাহে প্রবেশের আগে কমপক্ষে দু'বার তল্লাশি করা হয়েছে মুসলি্লদের। ঈদগাহে প্রবেশ করতে না পেরেই জঙ্গিরা পুলিশের চেকপোস্টকে হামলার লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয়।

গুলশানের হামলার সঙ্গে শোলাকিয়ার হামলার মিল-অমিল: উগ্রপন্থিদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে খোঁজ রাখেন— এমন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, গুলশানে হামলার পর ধারণা ছিল, জঙ্গিরা কেবল বিদেশি নাগরিকদের টার্গেট করেছে। কিন্তু শোলাকিয়ায় পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত দুই তরুণ নিজেরা ঈদের নামাজে অংশ না নিয়ে উল্টো মুসল্লিদের ওপর হামলার পর উগ্রপন্থিদের প্রতি সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

তবে একজন দায়িত্বশীল গোয়েন্দা কর্মকর্তা সমকালকে জানান, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গিদের টার্গেটে ছিলেন। বিশেষ করে এক লাখ আলেম-ওলামা নিয়ে জঙ্গিবিরোধী ফতোয়া দেওয়ার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় তার ওপর হুমকি বাড়ছিল। এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে নিরাপত্তা দিয়ে আসছিল। শোলাকিয়ায় হামলাকারীদের টার্গেটে মাওলানা ফরিদ থাকলেও তার ওপর হামলা চালানোর মতো সুযোগ সেখানে 'সীমিত' দেখে জঙ্গিরা হয়তো তাদের টার্গেট পাল্টায়। এর পর মূল জামাতে হামলার সিদ্ধান্ত হয়। তবে হামলার আগেই চেকপোস্টে বাধার মুখোমুখি হওয়ায় তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে বসে।

ওই কর্মকর্তার যুক্তি, এর আগে জঙ্গিরা প্রথম টার্গেট মিস হওয়ার পর দ্বিতীয় টার্গেট নির্ধারণ করে বর্বর কায়দায় হামলা চালিয়েছিল। গত বছর আশুলিয়ায় বিকেএসপিতে বিদেশিকে টার্গেট করে হামলা করতে যায় জঙ্গিদের একটি দল। সেটা ব্যর্থ হয়ে ফেরার পথে তারা আশুলিয়ায় চেকপোস্টে হামলা করে কনস্টেবল মুকুলকে হত্যা করে। এবারও শোলাকিয়ায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। গুলশানের হামলার সঙ্গে শোলাকিয়ার হামলার মিল হলো— দুই ঘটনায় উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সমন্বয়ে জঙ্গিরা হামলার ছক সাজায়। একই ধরনের অস্ত্র ও বোমা উভয় ঘটনায় ব্যবহার করা হয়েছে। হামলাকারীদের কাছে 'ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)' ছিল। দুই ঘটনায় জঙ্গিরা চাপাতি ব্যবহার করেছে।

আহতরা শঙ্কামুক্ত: পুলিশের সূত্র জানায়, শোলাকিয়ার ঘটনায় সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছয় পুলিশ সদস্য এখন শঙ্কামুক্ত। তারা হলেন— এএসআই নয়ন মিয়া, কনস্টেবল রকিবুল ইসলাম, তুষার আহমেদ, প্রশান্ত দেবনাথ, জুয়েল মিয়া ও মশিউর রহমান।

হামলা ও অভিযান: কিশোরগঞ্জের মূল শহরের রেললাইন পার হলেই চরশোলাকিয়া। ঈদগাহ থেকে এলাকাটির দূরত্ব মাত্র ২৫০-৩০০ গজ। চরশোলাকিয়া সবুজবাগ আবাসিক এলাকার প্রবেশমুখে মিলিত হয়েছে তিনটি সরু গলি। রাস্তার পশ্চিম পাশে আজিম উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়। তার সামনেই মুফতি মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদ। মসজিদের পাশেই পুলিশের চেকপোস্ট। ১২ জন পুলিশ সদস্য মুসলি্লদের তল্লাশি করছিলেন। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ১৯-২০ বছর বয়সী দুই যুবক ব্যাগ ও জায়নামাজ নিয়ে চেকপোস্টের কাছাকাছি আসে। পুলিশ তাদের তল্লাশি করার আগেই হামলাকারীরা চেকপোস্ট লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে। তারা জায়নামাজে মুড়িয়ে পিস্তল ও চাপাতি এনেছিল। ব্যাগে ছিল চায়নিজ কুড়াল।

হামলাকারীর বোমায় চেকপোস্টের ১১ পুলিশ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। হামাগুড়ি দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। নিকটবর্তী চেকপোস্টের পুলিশ সদস্যরা তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার পর অনেক পুলিশ প্রাণভয়ে বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নেন। মসজিদের অজুখানায় আশ্রয় নেন পুলিশ কনস্টেবল জহিরুল। হামলাকারীরা চাপাতি দিয়ে জহিরুলের ঘাড়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পুলিশ সদস্য আনছারুলের মাথায় কোপ দেয় আরেক জঙ্গি আবীর রহমান।

হামলার পর দুই হামলাকারী প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে সবুজবাগ এলাকার দিকে দৌড়ে যায়। ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী এক বাড়ির সিসি ক্যামেরা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আকাশি রঙের পায়জামা, পাঞ্জাবি পরিহিত আবীরের ডান হাতে পিস্তল, বাম হাতে চাপাতি। আটক জঙ্গি শফিউলের পরনে ছিল বাদামি পায়জামা ও পাঞ্জাবি। তার হাতে ছিল পিস্তল। শফিউলের বাবা আবদুল হাই দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় বিএনপির কর্মী। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা রয়েছে।

দুই হামলকারী সবুজবাগ আবাসিক এলাকার গলিতে ঢুকে পড়ে। গলির শেষ প্রান্তে একটি ডোবা। পাশেই মাদ্রাসার প্রভাষক নাসরিন আক্তারের বাড়ি। বাড়ির পেছনে পায়ে হেঁটে চলার পথ আছে। এ পথে মূল সড়কে যাওয়া যায়। প্রত্যক্ষদর্শী নাসরিন জানান, বোমা বিস্ফোরণের শব্দের পর পরই তিনি জানালা দিয়ে দেখেন, দুই যুবক পুকুরে একটি ব্যাগ ফেলে যায়। শুক্রবার দুপুরে র‌্যাব ব্যাগটি উদ্ধার করে। ব্যাগে ছিল দুটি চায়নিজ রাইফেল।

পুকুরে ব্যাগ ফেলে জঙ্গিরা আবার হামলাস্থলের কাছাকাছি যায়। রেনু নামের এক ব্যক্তির বাড়ির পাশে অবস্থান নেয়। রেনুর বাড়ি ও পাশের একটি চারতলা বাড়ির দেয়ালের মধ্যে মাত্র ২০ ইঞ্চি প্রস্থ ও প্রায় ৫০ ফুট লম্বা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। পেস্ট রঙের টিনশেড বাড়ির সামনে রয়েছে কয়েকটি ফুলের গাছ। এ কারণে রাস্তা থেকে কিংবা সামনে ফাঁকা জায়গা থেকে সরু এই জায়গা দেখা যায় না।

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুর্শেদ জামান জানান, ৯টা ৫০ মিনিটে তিনি হামলার খবর পান। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে পাঁচ-ছয় মিনিটের মধ্যে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। শুরু হয় অভিযান। বাড়ির আড়ালে লুুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। প্রায় এক ঘণ্টা জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশের গুলিবিনিময় হয়। এতে ঘটনাস্থল-সংলগ্ন এক বাসায় নিহত হন সবুজবাগের বাসিন্দা ঝর্ণা রানী ভৌমিক (৪৫)।

পুলিশ জানায়, একপর্যায়ে হামলকারী আবীরের পিস্তল জ্যাম হয়ে যায়। গুলি ছুড়তে না পেরে চাপাতি হাতে পুলিশের দিকে তেড়ে আসে। পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েও হামলার চেষ্টা করে। পরে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আবীর। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চাপাতি হাতে ধরা ছিল। অন্য জঙ্গি শফিউল পুলিশের অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে ধরা পড়ে। তার বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট। সে মাদ্রাসার ছাত্র। ঘটনার সময় হামলাকারীরা পালানোর চেষ্টা করেনি। তারা দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, আরও প্রাণহানি ঘটাতে ফিরে আসে।

গোলাগুলি চলাকালে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা নাসরিন আক্তার জানান, প্রাণভয়ে তিনি সন্তানদের নিয়ে খাটের নিচে আশ্রয় নেন। তবে প্রশাসনের বুদ্ধিমত্তায় রক্ষা পায় বহু মানুষ। সবুজবাগে গোলাগুলি চললেও মাত্র ২৫০ মিটার দূরের ঈদগাহে মুসলি্লরা টের পাননি। ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে বহনকারী হেলিকপ্টার কিশোরগঞ্জ স্টেডিয়ামে অবতরণ করলেও তিনি ঈদ জামাতে পৌঁছাতে পারেননি। ইমামতি করেন শাহাবুদ্দিন মসজিদের ইমাম শোয়াইব আবদুর রউফ। মাত্র ১০ মিনিটে নামাজ শেষ করা হয়। উপস্থিত প্রায় তিন লাখ মুসল্লি নির্বিঘ্নে নামাজ শেষ করেন। তখনও গোলাগুলি চলছিল। একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ঈদগাহে হামলার খবর পৌঁছালে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতো। লাখো মানুষ ভীত হয়ে দৌড়াদৌড়ি করলে পদপিষ্ট হয়েই মারা যেতে পারতেন হাজারো মুসল্লি।

হামলাকারী দু'জন?: শোলাকিয়ায় হামলাকারী কতজন ছিল, তা এখনও জানায়নি পুলিশ। তবে অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন, হামলাকারী ছিল দু'জন। তাদের সহযোগিতায় অন্য কেউ থাকতে পারে। তবে মূল 'অপারেশনে' অংশ নেয় আবীর ও শফিউল। তারাই পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে ও কোপায়। অভিযানের সময়ও দুই হামলাকারীকেই গুলি ছুড়তে দেখা গেছে।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ধরা পড়া জঙ্গি শফিউল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, পাঁচ জঙ্গি ২৭ রমজান কিশোরগঞ্জে আসে। দু'দিন তারা ঘটনাস্থল রেকি করে। ঈদের আগের দিন তিনজন চলে যায়। সে অন্যদের চেনে না। 'ওস্তাদের' নির্দেশে হামলা চালাতে এসেছে।

র‌্যাব-১৪-এর মেজর সাইফুল সাজ্জাদ জানান, শফিউল দাবি করেছে, তার সঙ্গে আরও চারজন ছিল। তবে তাদের পরিচয় সে জানে না। কিশোরগঞ্জ আসার পর 'ওস্তাদ' তাদের নির্দেশ দেয় কোথায় হামলা চালাতে হবে।

আটক দুই: শফিউল ছাড়াও হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কিশোরগঞ্জ শহরের তারাপাশা এলাকার মো. আবদুস সাত্তারের ছেলে জাহিদুল হক (২৪) ও শহরের বয়লা এলাকার আবদুল হাইয়ের ছেলে আহসান উল্লাহকে (২৫) আটক করছে পুলিশ। তবে জাহিদুলের পরিবার দাবি করেছে, সে মানসিক ভারসাম্যহীন। পুলিশ জঙ্গিদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, একটি ধারালো চাপাতি ও তিনটি গুলি উদ্ধার করে।

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh