অসংখ্য গ্রাহককে পথে বসিয়েছে এ যুগের ডিজিটাল মহাজন ‘র্যাপিড ক্যাশ’
অসংখ্য গ্রাহককে পথে বসিয়েছে এ যুগের ডিজিটাল মহাজন ‘র্যাপিড ক্যাশ’। কথিত এই ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ‘র্যাপিড ক্যাশ’ নিজেদের মাইক্রো ফিন্যান্সিয়াল অ্যাপ বলে দাবি করেছে ডিজিটাল মাধ্যমে।
গুগল প্লে স্টোর থেকে তাদের অ্যাপ ডাউনলোড করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলে সাত দিনের জন্য ২ হাজার টাকা (সর্বনিম্ন) ঋণের আবেদন করা যায়। তবে পরিশোধের পর ধাপে ধাপে ঋণের সীমা বাড়তে থাকে।
একটি অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিজেদের কোনও অফিস বা ঠিকানা না থাকলেও র্যাপিড ক্যাশ আবেদনের সময় গ্রাহকের এনআইডি, ছবি, বর্তমান ঠিকানা, দুজন জিম্মাদারের বিস্তারিত তথ্য, অফিসের নাম, পদ, ঠিকানা, ফোন নম্বরসহ বহু তথ্য নেয়।
আরও জানা যায়, ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সব কার্যক্রম অ্যাপের মাধ্যমে পরিচালিত হলেও র্যাপিড ক্যাশের কোনও কর্মকর্তার সঙ্গে গ্রাহকের দেখা হয় না। র্যাপিড ক্যাশ থেকে অনলাইনে ঋণের টাকা চলে আসে গ্রাহকের বিকাশ, নগদ কিংবা রকেট অ্যাকাউন্টে। তবে একজন গ্রাহককে ২ হাজার টাকা ঋণের বিপরীতে দেওয়া হয় ১ হাজার ৬৮৫ টাকা। আবেদন প্রক্রিয়াকরণ ফির নামে ১২০ টাকা, ডাটা অ্যানালাইসিস চার্জ হিসেবে ১৮০ টাকা এবং ভ্যাট চার্জ হিসেবে ১৫ টাকা কেটে রাখে তারা। তবে ঋণ নেওয়ার আগে গ্রাহককে টাকা কাটার বিষয়ে কোনও তথ্য জানানো হয় না। মাত্র ৫ টাকা সুদে ঋণের লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের প্রাচীন মহাজনি প্রথার ফাঁদে ফেলে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে বা টাকা দিতে না পারলে শতকরা হিসেবে বার্ষিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয় র্যাপিড ক্যাশ। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সুদ হারের প্রায় সাড়ে ৫ গুণ বেশি।
আরও জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে র্যাপিড ক্যাশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা কিংবা ঋণ দেওয়ার কোনও অনুমোদন নেয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মেজবাউল হক গণমাধ্যমে বলেন, র্যাপিড ক্যাশ নামে কোনও প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লাইসেন্স দেয়নি।
এদিকে অভিযোগ ওঠে, ঋণ নেওয়ার সময় অতিরিক্ত সুদের বিষয়ে কিছু জানায় না র্যাপিড ক্যাশ। নির্ধারিত সময়ে টাকা দিতে না পারলে তারা সামাজিকভাবে হয়রানি করে।
গেল জুনে র্যাপিড ক্যাশ থেকে ঋণ নেওয়ার পর ফেরত দিতে বিলম্ব করায় এক গ্রাহক ও তার পরিবারের লোকজনকে হুমকি দেয় প্রতিষ্ঠানটির লোকজন। এ ঘটনায় গুলশান থানায় জিডি করেন ভুক্তভোগী গ্রাহক।
জিডিতে ওই গ্রাহক উল্লেখ করেন, র্যাপিড ক্যাশ থেকে ফোন করে আমার কাছ থেকে সুদ হিসেবে যথাক্রমে ২৫০০, ৩৫০০ এবং সর্বশেষ ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। তারা আমার মোবাইলের অ্যাকসেস নিয়ে আমার স্ত্রী, মা ও বাবাকে ফোন দিয়ে হেনস্তা করেছে। আমার শ্বশুরকে ফোন করে ৭৮ হাজার টাকা দাবি করেছে। সর্বশেষ তারা আমাকে খুন করে আমার স্ত্রীকে তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
র্যাপিড ক্যাশের বিরুদ্ধে জিডির তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই বায়েজীদ বোস্তামি। তিনি গণমাধ্যমে বলেন, জিডির তথ্য ও অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এসএস
মন্তব্য করুন