ঈদের আগে বকেয়া পরিশোধ না করলে কর্মবিরতির ঘোষণা সব পৌরসভায়

আসন্ন ঈদুল আজহার আগে পৌরসভা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ বকেয়া বেতন পরিশোধ না করলে দেশের পৌরসভাগুলোতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

ইউনিয়ন পরিষদের আদলে সংশোধিত বাজেটে বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন না করলে আগামী ২৫ জুলাই থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।

আজ শনিবার (১২ জুন) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রীর বিবেচনার জন্য ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি আব্দুল আলীম মোল্যা।

দাবিগুলো হলো উচ্চ আদালতের আদেশ দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা, পৌরসভাগুলো আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন না করা পর্যন্ত জাতীয় বাজেটে পৌরসভার কর্মচারীদের বেতন খাতে আর্থিক অনুদান বাড়িয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মতো সংশোধিত বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার পাশাপাশি প্রতিবছর এ বরাদ্দ অব্যাহত রাখা, স্থানীয় সরকার বিভাগের গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সব বকেয়া বেতন-ভাতা ও অবসরকালীন ভাতা স্থানীয় সরকার বিভাগের গঠিত কমিটির প্রস্তাবিত ৭৯২ কোটি টাকা বেতন খাতে বরাদ্দ দেওয়া, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মরহুম জিল্লুর রহমানের ঘোষণা বাস্তবায়ন করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে অবসরকালীন ভাতা দেওয়া, পৌরসভা বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে রাজস্ব খাত থেকে দরপত্র আহ্বান বা অন্যান্য ব্যয় যাতে করতে না পারে সে জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের তদারকি জোরদার করা, রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য এ সংক্রান্ত কমিটিতে জনপ্রতিনিধির পরিবর্তে কর্মকর্তাদের পদায়ন করা, স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে আয়-ব্যয়সংক্রান্ত বিষয়ে সব পৌরসভাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার ব্যবস্থা করা এবং সব ধরনের নিয়োগে স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্টতা বাড়ানো যাতে কর্মকর্তারা অনৈতিক কার্যকলাপে বাধা দিলে হয়রানির শিকার না হন সে জন্য কর্মকর্তাদের যোগদান গ্রহণ ও অবমুক্তির বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রাখা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুল আলীম বলেন, 'জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের ৫১(১) অনুচ্ছেদে পৌরসভাকে প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু সরকারের অন্যান্য প্রশাসনিক ইউনিটের কর্মচারীদের সঙ্গে সীমাহীন বৈষম্য থাকার কারণে পৌরসভার কর্মচারীদের দুর্দশা চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক পৌর কর্মচারীদের রাতদিন পরিশ্রমের কারণে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। অথচ পৌর কর্মচারীরা বেতন না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

আব্দুল আলীম আরও বলেন, বাংলাদেশের ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ পৌরসভায় ২ থেকে ৭০ মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। এ পর্যন্ত ১০২৬ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর প্রায় ৩৮৫ কোটি টাকা অবসরকালীন ভাতা বকেয়া রয়েছে। তাছাড়া ৩২৯টি পৌরসভায় ১১ হাজার ৬৭৫ জন পৌর কর্মচারীদের প্রায় ৮৭৫ কোটি টাকা বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। বেতন-ভাতা না পেয়ে কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারীদের বেতন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেলেও পৌর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে গতবছরের মতো মাত্র ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জাতীয় বাজেটের পরিমাণ হাজার হাজার কোটি টাকা বাড়লেও পৌর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে কোনো বরাদ্দ বৃদ্ধি না হওয়ায় এমন বৈষম্য আচারণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিশেনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, ঢাকা বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ম ই তুষার, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা সরকার দলিল উদ্দিন, সহ-সভপতি আখতার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন দত্ত, শফিকুল ইসলাম আগুন, রোকসানা পারভীন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম পাটোয়ারী জিসান বাবু, অর্থ সম্পাদক মজিবুর রহমান, মহিলা সম্পাদক সাজেদা আক্তার, চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি আবুল কালাম, ময়মনসিংহ বিভাগের সভাপতি কামরুল হক, সেক্রেটারি ইসহাক, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টাসহ কেন্দ্রীয়, বিভাগ, জেলা ও ইউনিটের নেতারা।

এইচ/ এমকে