• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

টিকটক ইস্যু: ভারতে আরেক বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে লোমহর্ষক নির্যাতন

আরটিভি নিউজ

  ০২ জুন ২০২১, ১১:০৩
আরও এক ভুক্তভোগী তরুণীর সন্ধান পেয়েছে পুলিশ
পাচারে জড়িত সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ৩ আসামি

টিকটক হৃদয় বাবুর মামলা তদন্তে নেমে আরও এক ভুক্তভোগী তরুণীর সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। ওই তরুণী হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (তেজগাঁও বিভাগ) মো. শহীদুল্লাহ শ্যামলীস্থ নিজ কার্যালয়ে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে একথা জানান।

তিনি আরও বলেন, তরুণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পরবর্তী রিসোর্টে হ্যাংআউট পার্টি করে ভারতে পাচার করতো চক্রটি। ওই চক্রের অখিল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের পুলিশ। চক্রের সদস্যরা ওই তরুণীর সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব তৈরি করে। পরে দেশের বিভিন্ন রিসোর্টে হ্যাংআউট পার্টি আয়োজন পরবর্তী সময়ে ভারতে পাচার করে দেওয়া হয়।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ভারতে পাচার হওয়া এক কিশোরী তিনমাসের নির্যাতন ও বন্দিদশা থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন। পাচারে জড়িত ৩ জন আসামিকে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের একজন ১০০০ এর বেশি নারী পাচারে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

দ্বিতীয় ভুক্তভোগীর ঘটনা উল্লেখ করে পুলিশ আরও জানায়, ভারতে পাচার হওয়া এক কিশোরী তিন মাসের নির্মম নির্যাতন ও বন্দিদশা থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার প্রতিরোধে ও দমন আইনে মামলা করেছে। এই মামলার এজাহারনামীয় ১২ জন আসামিদের মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

ডিসি আরও বলেন, পাচারকৃত ভিকটিমের সঙ্গে ২০১৯ সালে হাতিরঝিলে মধুবাগ ব্রিজে আসামি হৃদয় বাবুর পরিচয় হয়। টিকটক স্টার বানাতে চেয়ে ও ভালো বেতনের চাকরির অফার দিয়ে ভিকটিমকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে হৃদয় বাবু। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কে ৭০-৮০ জনকে নিয়ে টিকটক হ্যাংআউট এবং ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের আফরিন গার্ডেন রিসোর্টে ৭০০-৮০০ জন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে পুল পার্টির আয়োজন করে হৃদয় বাবু। ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় বাউল লালন শাহ মাজারে আয়োজিত টিকটিক হ্যাংআউটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় এই মানবপাচারকারী চক্রের অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় কৌশলে ভিকটিমকে ভারতে পাচার করে হৃদয় বাবু।

তিনি আরও জানান, পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পরার পর থেকে পালিয়ে দেশে ফেরা পর্যন্ত তার লোমহর্ষক করুণ কাহিনী কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। ভারতে পাচারের পর ভিকটিমকে ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায় পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বাসায় রাখা হয়। এ সময় ভারতে অবস্থানকালে হাতিরঝিল থানার অভিযোগকারী ভিকটিম এ চক্রের দ্বারা পাচারকৃত আরো কয়েকজন বাংলাদেশি ভিকটিমকে সেখানে দেখতে পান, যাদেরকে সুপার মার্কেট, সুপার শপ বা বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়েছে। ব্যাঙ্গালুরুতে পৌছার কয়েকদিন পরই ভিকটিমকে চেন্নাইয়ের OYQ HOTEL এ ১০ দিনের জন্য পাঠানো হয়। অমানবিক শারীরিক ও বিকৃত যৌন নির্যাতনে সামান্য দয়া ও করুণাও দেখায়নি চক্রের সদস্যরা। বরং কৌশলে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে কিংবা জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে পরিবারের সদস্য ও পরিচিতদের তা পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে জিম্মি করে রাখা হয় ভিকটিমকে। ভারতে পাচারের ৭৭ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওর ঘটনার ভিকটিম জেসমিন মীমের সহযোগিতায় হাতিরঝিল থানায় অভিযোগকারী ভিকটিমসহ আরো ২ জন বাংলাদেশি ভিকটিম এ চক্রের ব্যাঙ্গালুরুতে অবস্থিত আস্তানা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ আসতে সক্ষম হয়।

এই মামলায় এজাহারনামীয় ১২ আসামিদের মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী দাবকপাড়া কালিয়ানী এলাকা থেকে ভিকটিমকে ভারতে পাচারে জড়িত ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের হেফাজত থেকে ভিকটিমকে পাচারের ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল, একটি ডায়রি, ৪টি মোবাইল ফোন ও একটি ভারতীয় সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি মেহেদী হাসান বাবু (৩৫) মামলার ভিকটিমসহ এক হাজারের বেশি নারী পাচারে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। সে প্রায় ৭-৮ বছর ধরে মানবপাচারে জড়িত। তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মোবাইল ও ডায়রিতে হৃদয় বাবু, সাগর, সবুজ, ডালিম ও রুবেলের ভারতীয় মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ডায়রিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওর ঘটনার ভিকটিম জেসমিন মীমের আধার নম্বর ও ভারতে পাচারকৃত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভিকটিমের নাম ও মানবপাচারে জড়িত ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে।

গ্রেপ্তারকৃত অপর দুই আসামি মহিউদ্দিন ও আব্দুল কাদের আলোচ্য ভিকটিমসহ পাঁচশতাধিক ভিকটিমকে সীমান্তবর্তী এলাকায় পাচারের কাজে ব্যবহারের জন্য নির্মিত কক্ষে অবস্থানে সহায়তার পাশাপাশি মোটরসাইকেলযোগে সীমান্তের শেষ প্রান্তে ভারতীয় দালালের হাতে তুলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
কেএফ/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh