• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

‘আল-কুদ্স দিবস ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি প্রতীক’

আরটিভি নিউজ

  ০৮ মে ২০২১, ০০:০৬
আল-কুদস কমিটির আলোচনা

আন্তর্জাতিক আল-কুদ্স দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (৭ মে) বিকেলে আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশ এর উদ্যোগে এক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক ও আল-কুদ্স কমিটি বাংলাদেশ এর সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. শমশের আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মাদ রেজা নাফার।

এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ. কে. এম বদরুদ্দোজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিকুর রহমান খান, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক জামাল উদ্দিন বারী, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মওলানা এ. কে. এম. মাহবুবুর রহমান ও দৈনিক আজকের ভোলার সম্পাদক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ শওকাত হোসেন। ওয়েবিনার সঞ্চালনায় ছিলেন আল-কুদ্স কমিটি বাংলাদেশ এর সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফা তারেকুল হাসান। ক্বারী এ. কে. এম. ফিরোজের সুমধুর কণ্ঠে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে ওয়েবিনারটি শুরু হয়।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির ভাষণে ড. এম শমশের আলী বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিকামী দেশ এবং সবসময় শান্তির পক্ষে কথা বলে আসছে। তিনি যুবকদের জন্য আয়োজিত একটি বিজ্ঞান কনফারেন্সে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, সে কনফারেন্সের আলোচনার একটি বিষয় ছিল পারমাণবিক শক্তির বিধ্বংসী ব্যবহার নয় যেটি হিরোশিমা-নাগাশাকির ক্ষেত্রে ঘটেছিল, বরং পারমাণবিক শক্তির ইতিবাচক ব্যবহার করতে হবে। তিনি হল্যান্ডে আয়োজিত আরেকটি কনফারেন্সের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে তিনি লর্ড নোয়েল বেকারের সাক্ষাৎ লাভ করেন যিনি লীগ অব নেশন্স-এর প্রথম সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন, তিনি বলেন, আমি বাদশাহ আবদুল আজিজকে বলেছিলাম যে, ইসরাইলিরা এখানে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। আবদুল আজিজ জবাব দেন, ইহুদিরা যেহেতু জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক উন্নত তাই তারা যদি আমাদের পাশে আসে তাহলে আমরা শুধু উপকৃতই হব। কিন্তু তারা এটি চিন্তা করেনি যে, এতে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ভূমিতেই উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে।

বিশেষ অতিথি মোহাম্মদ রেজা নাফার একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, মহানবি (সা.) বলেছেন : ‘যদি কোন মুসলমান অপর কোন মুসলমানকে আহ্বান করে আর সে তার ডাকে সাড়া না দেয় তবে সে মুসলমান নয়।’ এ হাদিস অনুযায়ী ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণের আহ্বানের বিষয়টি আমাদের স্মরণ করা উচিত। পৃথিবীব্যাপী করোনা মহামারির মধ্যে ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য এই ওয়েবিনারের মাধ্যমে আমরা ফিলিস্তিনের জনগণের কাছে এ বার্তাই পৌঁছাতে চাই যে, ফিলিস্তিন ইস্যু আজও জীবন্ত।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে ইসরাইল বিশ্বের ১৬০টি দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ২০টি দেশে এখনও ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেনি যাদের মধ্যে বাংলাদেশ ও ইরান রয়েছে। ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।

আল-কুদ্স হলো মুসলিম বিশ্বের জন্য রেড লাইন। কারণ, এটি অনেক নবি-রাসূলের জন্মভূমি, মহানবির মেরাজ যাত্রার সূচনা ও মুসলমানদের প্রথম কিবলা যেটি যায়নবাদীরা দখল করে আছে। ইমাম খোমেইনী (রহ.) কর্তৃক আল-কুদ্স দিবস ঘোষণা ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি প্রতীক।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অপরিবর্তনীয় ও অফিসিয়াল সুস্পষ্ট অবস্থান হলো দখলদার যায়নবাদীদের বিরুদ্ধে। ইরান ফিলিস্তিনিদের সর্বব্যাপী স্বাধীনতার সমর্থক। ফিলিস্তিনিদের মুক্তির একমাত্র পথই হলো যায়নবাদীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত প্রতিরোধ। ফিলিস্তিনিদের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে, বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়া ফিলিস্তিনিদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে, জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণা করতে হবে।

পরিশেষে তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে, মহান আল্লাহর অনুগ্রহে আগামী ২০ বছর পরে ইসরাইল নামক কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব এ অঞ্চলে থাকবে না।

ওয়েবিনারের সভাপতি ড. কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণ দীর্ঘদিন যাবৎ অত্যাচার, নির্যাতনের মধ্যে অতিবাহিত করছে। অনেকে শহীদ হয়েছেন। শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। শিশুহত্যা, দেশ থেকে বিতাড়ন, নির্যাতন সবকিছুরই শেষ রয়েছে।

তিনি বলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনী মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আল-কুদ্স দিবস ঘোষণা করেন যাতে মাজহাব নির্বিশেষ সকলে ফিলিস্তিন ইস্যুতে একত্র হতে পারে।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। কিন্তু কতিপয় আরব দেশ ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছে, সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের চেষ্টা করছে যেটি ঠিক নয়। আমাদেরকে শত্রু-মিত্র চিনতে হবে। নিজেদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য থাকলেও অভিন্ন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা বিভক্ত হয়ে পড়লে সেটি ইসলাম ও মানবতার দুশমনদের জন্য ভাল হবে যেটি কাম্য নয়। তাই আমাদের ইমানকে সমুন্নত করতে হবে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতি সাধন করতে হবে, নৈতিকতাকে উন্নত করতে হবে, সর্বোপরি ঐক্যবদ্ধভাবে ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর রমযান মাসের শেষ শুক্রবার- জুমআতুল বিদাকে আন্তর্জাতিক আল-কুদ্স দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনী (রহ.) জুমআতুল বিদাকে আন্তর্জাতিক কুদ্স দিবস হিসেবে ঘোষণা দেন এবং ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা ও তাদের সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য এ দিবসটি পালনের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তারপর থেকে বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh