দুপুরে প্রেসক্লাবে নেওয়া হবে আবুল মকসুদের মরদেহ
দেশের খ্যাতিমান কলাম লেখক, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদের মরদেহ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে নেওয়া হবে।
আজ বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় স্কয়ার হাসপাতাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবে নেওয়া হবে তার মরদেহ।
সেখানে সাংবাদিকরা শ্রদ্ধা জানানোর পর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সবার শ্রদ্ধার জন্য মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। সেখানে নাগরিকদের শ্রদ্ধার পর বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান আবুল মকসুদ।
এসএস
মন্তব্য করুন
দেশে কওমি মাদরাসা থাকা নিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরলেন শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, কওমি মাদরাসা বাংলাদেশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদেরও যাতে কর্মসংস্থান হয় সেটাও আমরা চাই। এ জন্য তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিন কওমি মাদরাসা নিয়ে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। তার এ বক্তব্যকে বিকৃত করে একটি রাজনৈতিক দল প্রচার করছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটি জেলা থেকে একটি আলোচনা এসেছিল, অনিবন্ধিত, নাম-পরিচয়হীন নুরানি মাদরাসার নামে কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। সেগুলো নিবন্ধনের প্রক্রিয়া কী? সেই প্রেক্ষিতে আমি বলেছিলাম, যেসব নুরানি মাদরাসা গড়ে উঠছে, সেগুলোর যথাযথ নিবন্ধন আছে কি না, সেগুলোতে কীভাবে শিক্ষাক্রম পরিচালিত হচ্ছে? অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যাতে সাংঘর্ষিক না হয়, সে বিষয়ে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব, কীভাবে তা ইউনিফরমিটির মধ্যে আনা যায়।
বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, নুরানি বা কওমি মাদরাসার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে—এই ধরনের মন্তব্য (কওমি মাদরাসা বন্ধ) আমি করিনি। এই আলোচনা সৃষ্টি করে এক পক্ষ গুজব রটাচ্ছে। গুজব রটিয়ে কওমি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টির নোংরা অপচেষ্টা করছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তারা আগে আরও অনেক ধরনের মানহানিকর এবং আপত্তিকর কথা বলছে।
তিনি বলেন, বারবার বলছি, কওমি মাদরাসা বাংলাদেশে আছে, অবশ্যই থাকবে। কারণ আমরা আইন দিয়ে কওমি মাদরাসা শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কওমি মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স স্বীকৃতি দিয়েছেন। কওমি মাদরাসা বাংলাদেশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু সেখানকার শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ন্যূনতম লিটারিসির কথা বলছি, তারা যাতে কর্মসংস্থান পায়, সে সমস্ত বিষয় নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করতে চাচ্ছি, আগামীতেও কাজ করব। তাদের বারবার আমন্ত্রণও জানিয়েছি। এখানে মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়ার মতো কথা কেউ কখনো বলেননি।
তিনি আরও বলেন, একটি পরিকল্পনার মধ্যে থেকে, নিবন্ধনের মধ্যে থেকে, কী পড়ানো হচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে, আমার শিক্ষার্থী, আমাদের এই প্রজন্মকে কী পড়াচ্ছি, সেটা জাতীয় শিক্ষাক্রম হোক, কওমি মাদরাসা হোক বা ইংরেজি মাধ্যমে হোক, সেটির ওপর রাষ্ট্রের নজর তো অবশ্যই থাকতে হবে। রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু যদি পড়ানো হয়, সেটা যেকোনো প্রতিষ্ঠানে হোক; আমরা দেখেছি, অনেক পাবলিশিং হাউজের নাম করে উসকানি দেওয়ার জন্য বই ছাপানো হয়েছে এবং পড়ানো হচ্ছে, সেগুলো আমাদের অবশ্যই দেখতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে।
রমজানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে
আসন্ন রমজান মাস জুড়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রমজানে স্কুল খোলা রাখার যে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল তাও স্থগিত করা হয়েছে।
রোববার (১০ মার্চ) এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতির কে এম কামরুল কাদের ও খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এসময় স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত কেনো বাতিল করা হবে না জানতে রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত। এছাড়াও ২ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে স্কুল খোলা রাখার প্রজ্ঞাপন।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী মো. ইলিয়াছ আলী মন্ডল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট দায়ের করেন। এতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা সচিব, উপসচিব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, উপসচিব শিক্ষা সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি), শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছিল।
গত ৮ ফেব্রুয়ারিতে গণশিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ দিন খোলা রাখার প্রজ্ঞাপন দেয়। একইদিন মাউশি প্রজ্ঞাপন দেয় ১৫ দিন স্কুল খোলা রাখার।
রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘বন্ধ’ নিয়ে যা জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয়
পবিত্র রমজান মাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। এর আগে রমজানে স্কুল খোলা রাখতে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে।
পরে রোববার সন্ধ্যার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয় জানায়, এখনো রায়ের কপি পাওয়া যায়নি। রায়ের কপি পেলে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণকল্পে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ছুটির তালিকা ও শিক্ষাপঞ্জি আংশিক সংশোধন পূর্বক আসন্ন পবিত্র রমজানের প্রথম ১০ দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
রোববার (১০ মার্চ) রমজান মাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতির কে এম কামরুল কাদের ও খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এসময় স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত কেনো বাতিল করা হবে না জানতে রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত। এছাড়াও ২ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে স্কুল খোলা রাখার প্রজ্ঞাপন।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী মো. ইলিয়াছ আলী মন্ডল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট দায়ের করেন। এতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা সচিব, উপসচিব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, উপসচিব শিক্ষা সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি), শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছিল।
ডিএনএ পরীক্ষায় সেই অভিশ্রুতির পরিচয় শনাক্ত
অবশেষে বেইলি রোডের আগুনে মারা যাওয়া সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুনের (অভিশ্রুতি শাস্ত্রী) পরিচয় নিয়ে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হলো। ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) পরীক্ষায় তার পরিচয় শনাক্ত হয়েছে।
বাবা সবুজ শেখ ওরফে শাবলুল আলম এবং মা বিউটি খাতুনের দেওয়া ডিএনএ নমুনার সঙ্গে মিলেছে বৃষ্টির ডিএনএ। অর্থাৎ অভিশ্রুতিই আসলে বৃষ্টি খাতুন।
রোববার (১০ মার্চ) এই তথ্য নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিআইজি এ কে এম নাহিদুল ইসলাম।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা যান বৃষ্টি খাতুন। বৃষ্টি তার বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে অভিশ্রুতি নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি মূলত মুসলিম পরিবারের সন্তান। কিন্তু অভিশ্রুতি নামে নিজেকে পরিচয় দেওয়ার কারণে তার লাশ হস্তান্তর নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। মৃত্যুর পর মন্দিরের পুরোহিত তাকে সনাতন ধর্মালম্বী দাবি করেন।
অন্যদিকে সবুজ শেখ ও বিউটি খাতুন বাবা-মা দাবি করে জানান, নিহত তরুণী অভিশ্রুতি নয়, তার নাম বৃষ্টি খাতুন। বৃষ্টি তাদের সন্তান। এমন পরিস্থিতিতে পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। নমুনা নেওয়ার ১১ দিন পর বৃষ্টির ডিএনএ’র সঙ্গে তার বাবা-মায়ের ডিএনএ মিলেছে।
বৃষ্টির গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বনগ্রাম গ্রামের পশ্চিমপাড়ায়। কলেজের সার্টিফিকেট, জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর নাম বৃষ্টি খাতুন।
মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা থানার কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া গণমাধ্যমকে বলেন, মরদেহ শনাক্তের বিষয়ে সিআইডি এখনও আমাদের কোনোকিছু জানায়নি। ডিএনএ যদি শনাক্ত হয়, তবে অবশ্যই পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
এ বিষয়ে বৃষ্টির বাবা শাবলুল আলম সবুজ জানান, মরদেহ নেওয়ার জন্য এখনও তাদের কিছু জানানো হয়নি। অপেক্ষায় আছেন।
মুক্তিপণ না পেলে বাংলাদেশি জিম্মিদের মেরে ফেলার হুমকি জলদস্যুদের
আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে গতকাল মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামে বাংলাদেশি পতাকাবাহী একটি জাহাজ। সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি আছেন জাহাজটির ২৩ জন নাবিক। এরই মধ্যে ভয়ানক হুমকির খবর ভেসে এসেছে জিম্মি জাহাজটি থেকে।
মুক্তিপণ না পেলে বাংলাদেশি জিম্মি নাবিকদের এক এক করে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দিয়েছে জলদস্যুরা। গতকাল মাগরিবের পর মুঠোফোনে জিম্মি জাহাজটির প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খান একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন তার স্ত্রীর কাছে। ওই বার্তা এসেছে গণমাধ্যমের হাতে।
অডিও বার্তায় আতিক উল্লাহ খানকে বলতে শোনা যায়, ‘এই বার্তাটা সবাইকে পৌঁছে দিয়ো। আমাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলেছে। তাদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলেছে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিয়ো।’
এর আগে গতকাল বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। জলদস্যুদের কবলে পড়া চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের এই জাহাজটি পরিচালনা করছে গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এস আর শিপিং লিমিটেড। জাহাজে আতিক উল্লাহসহ ২৩ বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন। খবর চাউর হওয়ার পর থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে নাবিকদের স্বজনদের।
আতিকের বাড়ি চন্দনাইশের বরকল এলাকায়। মা, স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে শহরের নন্দনকানন এলাকায় থাকেন তিনি। মা শাহানুর আকতার কাঁদতে কাঁদতে জানান, মাগরিবের সময় ছেলের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তখন আতিক তাকে বলেছেন, তাদের ৫০ জন জলদস্যু ঘিরে রেখেছে। একটা কেবিনে বন্দি সবাই। তাদের সোমালিয়া নিয়ে যাচ্ছে। আড়াই দিনের মতো লাগবে ওখানে পৌঁছাতে। সবার জন্য দোয়া চেয়েছেন আতিক।
জলদস্যুদের দাবি ৫০ লাখ ডলার!
বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহসহ জিম্মি ২৩ নাবিককে মুক্তি দিতে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। দুই দিন ধরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে রয়েছে জাহাজটি। শিগগিরই দাবি করা ৫০ লাখ ডলার না দিলে তাদের একে একে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে তারা।
পণ্যবাহী জাহাজটি কয়লা নিয়ে ভারত মহাসাগর হয়ে মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। জাহাজটির গন্তব্য ছিল দুবাই। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে।
জিম্মি ২৩ নাবিকের হলেন জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিসিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্ম শ্মসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জিম্মির পর তাদের একটি কেবিনে রাখা হয়েছিল। এরপর নাবিকরা নিজেদের মোবাইল থেকে কয়েকটি ভিডিও বার্তা পাঠালেও সেগুলো জলদস্যুরা জব্দ করে নেওয়ার পর থেকেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে জাহাজটি প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খান তার স্ত্রীকে পাঠানো সর্বশেষ এক অডিও বার্তায় বলেন, আমাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। টাকা না দিলে তারা একে একে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে। তাদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলেছে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিয়ো।
জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। গ্রুপের গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এ রকম ঘটনা অহরহ ঘটে। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতাও আছে। আশা করছি, নাবিক ও জাহাজটি ফিরিয়ে আনতে পারব। প্রয়োজনে মধ্যস্থতা সংস্থা ও ব্রিটিশ বীমা কোম্পানির সহায়তা নেওয়া হবে।
জাহাজটিতে ২০-২৫ দিনের খাবার রয়েছে। ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি রয়েছে বলে জানা গেছে।
যেদিকে যাচ্ছে জিম্মি জাহাজ, গন্তব্যে পৌঁছাতে লাগবে যতদিন
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে প্রায় পাঁচ নটিক্যাল মাইল গতিতে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই গতিতে চললে জাহাজটি উপকূলে পৌঁছাতে আরও তিন থেকে চার দিন সময় লাগবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে এস আর শিপিংয়ের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এমভি আব্দুল্লাহর ক্যাপ্টেনের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। জলদস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি ফিশিং ট্রলারে এমভি আব্দুল্লাহ থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করেছে । এখন জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে জলদস্যুরা। জাহাজে নাবিকদের জন্য দুই মাসের খাদ্য মজুদ আছে। জাহাজের পরবর্তী গন্তব্য থেকে খাবার পানি নেওয়ার কথা ছিল ক্যাপ্টেনের।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, জিম্মি নাবিকরা জানিয়েছেন জাহাজে এখন প্রায় ৫০ জন জলদস্যু অবস্থান করছে। জিম্মি অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে জাহাজে খাদ্য সংকট হতে পারে। এখন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে প্রায় ২০০ টন খাবার পানি মজুদ আছে।
তিনি বলেন, জলদস্যুরা জাহাজের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বন্ধ করে দিয়েছে। যাতে করে সহজে জাহাজটিকে ট্র্যাকিং (চিহ্নিত) করা না যায়। তারপরও আমরা মাঝে মধ্যে ট্র্যাক করতে পারছি। বর্তমানে জাহাজটি পাঁচ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলছে এবং সোমালিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেখা যাক জাহাজটি কোথায় গিয়ে থামে।
এর আগে, ভারত মহাসাগরে এমভি আবদুল্লাহ নামের বাংলাদেশি জাহাজটি মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে সোমালিয়ার জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর জাহাজে থাকা ২৩ বাংলাদেশি নাবিককে জিম্মি করে।
জানা গেছে, নাবিকদের ছাড়তে ‘৫০ লাখ’ মার্কিন ডলার চেয়েছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। মুক্তিপণ না পেলে বাংলাদেশি নাবিকদের মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
জাহাজটি প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খান তার স্ত্রীকে পাঠানো সর্বশেষ এক অডিও বার্তায় বলেন, আমাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। টাকা না দিলে তারা একে একে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে। তাদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলেছে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিও।
দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ২০১৬ সালে তৈরি জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্ত ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। পরে বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। এটি একটি বাল্ক কেরিয়ার।