পেঁয়াজের বীজ চাষ করেই সাহিদা এখন কোটিপতি
পেঁয়াজ নিয়ে প্রতিবছর নানান কাণ্ড দেখা যায়। এমন অনেকেই আছেন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পেঁয়াজ উৎপাদন না করে কিনে খেতে পছন্দ করেন। তবে দেশে এমনই একজন আছেন যিনি শুধু পেঁয়াজ উৎপাদন করেন না বরং পেঁয়াজের বীজের চাহিদা পূরণ করেন।
তিনি ফরিদপুর জেলার সাহিদা বেগম। এই নারী উদ্যোক্তা পেঁয়াজের বীজ চাষ করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন।
সাহিদা বেগম জানান, প্রায় ১৮-১৯ বছর ধরে পেঁয়াজের বীজের আবাদ করছেন তিনি। চলতি বছর প্রায় ২০০ মণ পেঁয়াজের বীজ বিক্রি করেছেন তিনি। মণ প্রতি বীজের দাম ২ লাখ টাকা।
চলতি বছর বীজ উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে সাহিদা বেগম বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আমরা পেঁয়াজ লাগাই। বীজ উৎপাদনের জন্য যে পেঁয়াজ এখন লাগানো হচ্ছে তার ফলন আসবে আগামী এপ্রিল-মে মাসে।
উদ্যোক্তা হবার বিষয়ে সাহিদা বেগম জানান, কৃষক পরিবারের বউ তিনি। এজন্য আগে থেকেই কৃষিকাজের সাথে পরিচয় ছিল তার। শ্বশুর মূলত পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের আগ্রহী ছিলেন। তিনি নিজে অনেকটা শখের বশেই এই চাষ শুরু করেন। আশপাশের কেউ কেউ খুব কম করে পেঁয়াজের বীজ চাষ করতো। আমার মনে হলো আমি করে দেখি। তাই করলাম।
সাহিদা বেগম কাজ শুরু করেন ২০০৪ সালে। ২০ শতক জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেন তিনি। সে বছর দুই মন বীজ উৎপাদন হয়। সেগুলো বিক্রি করেন ৮০ হাজার টাকায়। পরের বছর বেশি পরিমাণ জমিতে পেয়াজের চাষ করতে শুরু করেন। সেবছর পান ১৩ মণ বীজ। বীজ উৎপাদনে লাভ আছে দেখে পরের বছর চাষের জমির পরিমাণ বাড়ান সাহিদা। সেবার ৩২ মণ বীজ পান তিনি। এভাবেই তার কাজের পরিধি বাড়তে থাকে।
সাহিদা বেগম জানান, গত বছর ১৫ একর আর চলতি বছর ৩০ একর জমিতে পেঁয়াজের বীজের চাষ করেছেন। দুই বছরে তিনি উৎপাদন করেছেন ২০০ মন বীজ। পেঁয়াজের বীজের অনেক যত্ন করতে হয়। বার মাসই লেবার থাকে। দেশে এবার পেঁয়াজের বীজের অনেক চাহিদা।
তবে পেঁয়াজ চাষে খরচও কম নয় বলে জানান তিনি। এছাড়া অতিরিক্ত কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি, ঝড়-বৃষ্টি বেশি হলেও বীজ নষ্ট হয়।
সাহিদা বেগমের পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের কাজে সহায়তা করেন তার স্বামী বক্তার উদ্দিন খান। যিনি পেশায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। সাহিদা বেগম ও বক্তার উদ্দিন দম্পতির আছে দুই মেয়ে।
পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন ছাড়াও সাহিদা বেগম নিজেই গড়ে তুলেছেন পেয়াজের বীজের কারখানা। সেখান থেকেই বীজ প্যাকেটজাত করা এবং ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করেন তিনি। তার তৈরি করা বীজ পরিচিত পেয়েছে খান সিডস নামে।
সাহিদা বেগম বলেন, স্থানীয় অনেকে এই কারখানায় কাজ করেন। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে পেয়াজের বীজ চাষ করতে শুরু করেছেন স্থানীয় অনেক নারী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছর পেঁয়াজের বীজের চাহিদা বেশি ছিল। প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দরে। সে হিসেবে সাহিদা বেগম প্রায় চার কোটি টাকার বেশি বীজ বিক্রি করেছেন।
ফরিদপুর জেলায় পেয়াজের বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেরা চাষি হিসেবে পুরষ্কারও পেয়েছেন সাহিদা বেগম। বর্তমানে তিনি উৎপাদন করছেন, রাজশাহী তাহিরপুর, সুপারকিং, সুখসাগর ও নাসিরকিং নামে পেঁয়াজের বীজ। এছাড়া হাইব্রিড পেঁয়াজের বীজও উৎপাদন করেন তিনি।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, দেশে পেয়াজ উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে ফরিদপুরের অবস্থান দ্বিতীয়।
সূত্র- বিবিসি বাংলা
জিএ
মন্তব্য করুন