বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক ধর্ষণ নাকি প্রতারণা?
ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধিত) আইন, ২০০০’ এর খসড়া আজ রোববার (২৫ অক্টোবর) চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মানুষের প্রশ্ন, প্রেমের সম্পর্ক, বিয়ের প্রলোভন কিংবা স্বেচ্ছায় পূর্ণ বয়স্ক নারী পুরুষের শারীরিক সম্পর্কের পর তা কী ধর্ষণ মামলা হবে? অনেক ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দেয়া হয়রানির নতুন এক মাত্রা যোগ হয়েছে।
পূর্ণবয়স্ক মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে। সে চাইলেই কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং আইনের চোখে এই সম্পর্ক স্থাপনের ফলাফল সে জেনে বুঝেই সম্পর্ক করেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই আদালত ধরে নেবে যে একজন সুস্থ মানুষ একটি সম্পর্ক, তার ফলাফল ও তার ঝুঁকি সম্পর্কে সজাগ থাকবে। এখন সে যদি সব বুঝে শুনে এগিয়ে যায়, তখন সে পরবর্তীতে এটা বলতে পারে না যে আমি বিষয়টি বুঝিনি বা আমি ভুল করেছিলাম বা আমাকে কোনো বিষয় নিয়ে প্রলুব্ধ করা হয়েছিল।
পূর্ণ বয়স্কদের বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন দরকার বলে মনে করেন অনেকে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা ৯(১)-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘‘যদি কোন পুরুষ বিবাহবন্ধন ব্যতীত [ষোল বছরের] অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করে, অথবা [ষোল বছরের] কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলে গণ্য হবেন৷’’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘‘ধর্ষণে নারীকে জোরপূর্বক বা বলপ্রয়োগের বিষয় থাকে তা এখানে অনুপস্থিত৷ প্রেমের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে যখন শারীরিক সম্পর্ক হয় তখন সেটা ধর্ষণ নয়৷ কিন্তু পরে যখন বিয়ের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয় না তখন ধর্ষণ মামলা করা হয়৷ আমার বিচেনায় এটা প্রতারণা৷ আমার মনে হয় আইনে এটার ব্যাখ্যা এবং আলাদা শাস্তির বিধান থাকা উচিত৷
আরও পড়ুনঃ
শারীরিক সম্পর্ক শেষে অন্যকে বিয়ের প্রস্তুতি, হলুদের আসরে হাতকড়া
প্রেমিকের বাড়িতে টিভি দেখতে গিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রী
কলেজছাত্রীকে তুলে নিয়ে রাতভর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
রাতভর ধর্ষণের পর নবম শ্রেণির ছাত্রীকে প্রেমিকের হাতে তুলে দিলো ধর্ষকরা
দণ্ডবিধির ৪৯৩ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীকে প্রতারণামূলকভাবে আইনসম্মত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করান, কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্মতভাবে না হয় এবং ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন, তবে অপরাধী সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে৷ আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, এই আইনটি মামলা দায়ের বা চার্জশিটের সময় বিবেচনা করা যায়।
এফএ/এমকে
মন্তব্য করুন