রাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ: তদন্ত কমিটিতেই সীমাবদ্ধ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক বিষ্ণু কুমারের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীর আনীত যৌন হয়রানীর অভিযোগ তদন্ত কমিটিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। অভিযোগের এক বছর তিনমাস পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তদন্ত কমিটি ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অভিযোগের এতদিন পরেও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন অভিযোগকারী দুই শিক্ষার্থী।
অভিযোগকারী এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেখতে দেখতে ১ বছর ৩ মাস কেটে গেলো। কিন্তু কোনো সমাধান পেলাম না। কিন্তু কেনো? সত্যি কি তাহলে একটা জিনিসের সত্যতা প্রমাণে একবছরের বেশি সময় লাগে? আমি দ্রুত সুষ্ঠু বিচার চাই।
এর আগে গত বছরের ২৫ জুন রাবি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রী এবং ২৭ জুন দ্বিতীয় বর্ষের আরেক ছাত্রী ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক বিষ্ণু কুমারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ ইনস্টিটিউটের পরিচালকের কাছে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দায় করেন। এরপর ইনস্টিটিউট পরিচালক আবুল হাসানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ইনস্টিটিউট। অভিযোগকারী দুই শিক্ষার্থীকে তাদের অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষক নানাভাবে চাপ দেন উল্লেখ করে গত ২৮ জুন নগরীর মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ৩ জুলাই ইনস্টিটিউটের স্নাতক পর্যায়ের চারটি বর্ষের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে তাকে অব্যাহতি দেয় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল।
আইইআর সূত্রে জানা যায়, এর আগেও সান্ধ্যকোর্সের কয়েক ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর অভিযুক্ত শিক্ষককে ওই ব্যাচের কার্যক্রম থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, ২০১২ সালে ‘নারী ঘটিত’ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুম ইন্টারন্যাশনাল ডরমেটরি থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়।
এছাড়াও বিষ্ণু কুমার অধিকারীর বিরুদ্ধে পছন্দের শিক্ষার্থীকে নম্বর বাড়িয়ে অপছন্দের শিক্ষার্থীদের নম্বর কমিয়ে দেয়া, চেম্বারে ডেকে হয়রানি, ফেসবুকে বিভিন্ন ব্যাচের গ্রুপের কথোপকথনের স্ক্রিনশট নিয়ে হয়রানিরও অভিযোগ রয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের গঠিত তদন্ত কমিটি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পায়।
গত বছরের ২১ জুলাই আইইআর ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কমিটির আহ্বায়ক ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল হাসান চৌধুরী। তিনি সভায় বলেছিলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সত্যতার আলামত মিলেছে। যৌন হয়রানির বিষয়ে হাইকোর্ট যে ধরনের ব্যাখ্যা দিয়েছে তার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের মিল রয়েছে এবং কমিটি তার সত্যতা পেয়েছে। ওই দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের কথা-বার্তা, অঙ্গভঙ্গি এবং আচরণ যৌন হয়রানির মতোই ছিল বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌসকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে তদন্ত শেষ না করেই অদৃশ্য এক কারণে তিনি তদন্ত কমিটি থেকে অব্যাহতি নেন।
এরপর নতুন আরও একটি তদন্ত কমিটি করা হয় চলতি বছরের মার্চ মাসের ৩০ তারিখে। সেই কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর রেজিনা লাজকে এবং সদস্য সচিব করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রহমতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক রোকসানা বেগমকে।
নতুন তদন্ত কমিটি হওয়ার ছয় মাস অতিক্রম হলেও সেই তদন্ত কমিটি তাদের তদন্তের কোন ধরনের অগ্রগতি করতে পারেনি বলে জানা গেছে। এদিকে নতুন তদন্ত কমিটি থেকে সদস্য সচিব রোকসানা বেগম অব্যাহতি নেবেন বলেও জানা গেছে।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, পারিবারিক বিভিন্ন ঝামেলার কারণে তদন্ত কাজে আমি সহায়তা করতে পারছি না। সে কারণে আমি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে জানিয়ে কমিটি থেকে অব্যাহতি নেব।
তবে তদন্ত প্রতিবেদন আর কিছু দিনের মধ্যেই জমা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক রেজিনা লাজ।
তিনি বলেন, আমরা তদন্ত কাজ অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছ করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। তাই আমরা মার্চ মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত তেমন কোন কাজ করতে পারেনি। তবে গত আগস্ট মাস থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে আমরা কয়েকটা মিটিং করেছি। আশা করছি দ্রুত আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।
জিএ
মন্তব্য করুন