• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র পেশ করলেন ভারতীয় হাই কমিশনার

আরটিভি নিউজ

  ০৮ অক্টোবর ২০২০, ২১:৫১
ছবিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী তার পরিচয়পত্র পেশ করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে এই পরিচয়পত্র পেশ করেন ভারতীয় হাই কমিশনার।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতে নতুন হাই কমিশনার কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রেস সচিব জানান, রাষ্ট্রপতি নবনিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। এ সম্পর্ক কূটনৈতিক পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে বাণিজ্য-বিনিয়োগ, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, নবনিযুক্ত হাইকমিশনার দায়িত্ব পালনকালে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সম্ভাবনাময় প্রতিটি ক্ষেত্রকে কাজে লাগাতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাবেন।

রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র উপস্থাপন করার পর গুলশানে ইন্ডিয়া হাউস-এ বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, বাংলাদেশের ভাই-বোনদের প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জাননোর সুযোগ পেয়ে আমি গণমাধ্যমের বন্ধুগণের কাছে কৃতজ্ঞ। এটি আপনাদের সাথে আমার পরিচিত হবার এবং আপনাদের বন্ধুত্ব ও সমর্থন কামনার সুযোগ, তবুও আমি মনে করি কিছু কথা আমার বলা উচিত। প্রথমত, আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই যে, বাংলাদেশ সবসময় ভারতের অত্যন্ত বিশেষ অংশীদার ছিল, আছে এবং থাকবে।

ভারতীয় হাই কমিশনার বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব কৌশলগত অংশীদারিত্বের অনেক ঊর্ধ্বে, কারণ এই বন্ধুত্ব রচিত হয়েছে অভিন্ন ত্যাগ, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি ও আত্মীয়তার অনন্য সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে। আমি একটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে চাই যে, বাংলাদেশকে ভারত সর্বোচ্চ স্তরের গুরুত্ব দেয় এবং এটি কখনোই হ্রাস পাবে না। আমাদের অংশীদারিত্বের উৎস পারস্পরিক শ্রদ্ধা।

তিনি বলেন, ঐতিহাসিক জনযুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের ভিত্তিতে একটি জাতিকে রূপদানকারি হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের চেতনার প্রতি আমরা গভীরভাবে প্রশংসা ও সম্মান জানাই। আপনারা অসংখ্য মৃত্যু ও মা-বোনদের প্রতি বর্বর নির্যাতন উপক্ষো করে অনন্য সাহস এবং বীরত্বের সাথে নিজেদের উপর হওয়া অত্যাচার ও কঠোরতম মুখোমুখি হয়েছিলেন। আপনাদের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের অন্যতম অনুপ্রেরণা। মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের সহায়তা করতে পারা আমাদের জন্য সবসময়ই সম্মানের বিষয় হয়ে থাকবে যেমনভাবে, প্রায় ৫০ বছর পরেও আপনাদের সাহসের প্রতি ভারতে আজও আমরা সম্মান জানাই।

বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, সামাজিক সূচকে উল্লেখযোগ্য উন্নতির জন্য বাংলাদেশ আজ সমানভাবে সম্মানিত। একই ভাবে, দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম গতিতে আপনাদের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আমরা অভিনন্দন জানাই। সেই সাথে আমরা আপনাদের বিশ্বখ্যাত আন্তরিকতা এবং আতিথেয়তার চেতনার প্রশংসা করি। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক সাফল্য বা ক্রিকেট পিচে টাইগারদের অপ্রতিরোধ্য মনোবল যাই হোক না কেন, সারাবিশ্ব বাংলাদেশকে নতুন সম্মানের সাথে দেখছে। এবং আমরা আপনার নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে, এই উপযুক্ত স্বীকৃতিতে আনন্দিত।

তিনি বলেন, এই চেতনায় এবং মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং আমাদের দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশতম বার্ষিকীর স্মরণীয় বছরগুলোর স্বীকৃতি হিসেবে আমি মুক্তিযুদ্ধের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই অংশীদারিত্বের জন্য আমার সেবা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যারা আমাদেরকে ইতিহাসের এই মুহূর্তে নিয়ে এসেছেন। তাই আমি আখাউড়া স্থল সীমান্ত থেকে সরাসরি ধানমন্ডিতে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘর পরিদর্শন করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আমার বিনীত ও আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি এবং আমি আজ সাভারে যাচ্ছি বাংলাদেশের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

ভারতীয় হাই কমিশনার বলেন, আমি স্বীকার করি যে, নিকটতম সম্পর্কেরও পরিচর্যা করা প্রয়োজন। আমার সরকার আমাকে ঠিক তাই করার নির্দেশ দিয়েছে। আমি এবং আমার সহকর্মীরা এই অংশীদারিত্বকে সর্বস্তরে প্রচার করতে কোনো সুযোগই ছাড়ব না। আমরা উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা মাধ্যমে এই অংশীদারিত্বের পক্ষে সর্বোচ্চ সমর্থন জানাব। এই নির্দেশ আমাদের সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে যে, বাংলাদেশের সাথে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের অন্যতম সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

তিনি বলেন, কোভিড মহামারির মধ্যেও আমাদের পররাষ্ট্র সচিব বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক ভ্রমণ স্থগিতের পরে বাংলাদেশকে তার প্রথম সফরের গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। আমরা খুব শিগগিরই বিমান চলাচল শুরু করার জন্য আপনার সরকারের সহায়তায় একটি বিশেষ ‘এয়ার বাবল’ ব্যবস্থা চালু করব। আমরা কোভিড মোকাবিলায় যৌথভাবে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এমনভাবে কাজ করব যাতে আপনারা স্বচ্ছন্দ বোধ করেন এবং যা আপনাদের অগ্রাধিকারের প্রতি পূর্ণ সম্মান নিশ্চিত করে এবং এই বন্ধুত্বের প্রতি আমাদের মূলবোধকে প্রকাশ করে।

ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী আরও বলেন, আমি নিশ্চিত, আমরা যতই বাংলাদেশের স্বাধীনতা পঞ্চাশতম বার্ষিকীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের নেতারা আমাদের সম্পর্কের জন্য তাদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেবেন। আমাদের এই প্রচেষ্টায় সবসময় গণমাধ্যমের বন্ধুদের সহায়তা কামনা করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রত্যাশা পূরণে আমি এবং আমার সহকর্মীরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব এবং আপনাদের সমর্থন ও শুভেচ্ছার জন্য কৃতজ্ঞ থাকব। আমরা বন্ধু অংশীদার এবং প্রতিবেশী হিসাবে সর্বদা আপনাদের জন্য উপলব্ধ থাকব।

রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামান, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ, ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ঢাকায় হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে আসা রীভা গাঙ্গুলী দাশের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বিক্রম দোরাইস্বামী। ১৯৯২ ব্যাচের কর্মকর্তা বিক্রম দোরাইস্বামী অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংগঠন ও সম্মেলন বিভাগে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়া ও উজবেকিস্তানে ভারতের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও সামলেছেন এই পেশাদার কূটনীতিক।

এম

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh