• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

করোনা হেরে গেল অপরাধের কাছে

আরটিভি ডেস্ক

  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:৪১
National Women's Commission
প্রতীকী ছবি।

একটি অ্যাম্বুলেন্সে দুইজন করোনায় আক্রান্ত নারীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ তাদের আলাদা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল৷ প্রথমে বছর চল্লিশের করোনা আক্রান্ত নারীকে অ্যাম্বুলেন্স চালক হাসপাতালে নামিয়ে দেয়৷ তারপর ১৯ বছরের তরুণীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করে৷ তারপর তাকে হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়৷

আর এই ঘটনাটি ঘটেছে কেরালায়৷ কয়েকদিন আগে৷ পরে অবশ্য সেই চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ করোনাকালে এমন নানা অপরাধ নিয়ে ডয়চে ভেলের রিপোর্টটি তুলে ধরা হলো।

অভিযোগ উঠেছে, ২১ আগস্ট গরু চুরির অপবাদ দিয়ে পারভিন বেগম, তার দুই মেয়ে, এক ছেলে ও ছেলের বন্ধুকে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে রাস্তায় হাঁটিয়ে মারধর করতে করতে কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ আর সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিরানুল ইসলাম মিরানও তাদের মারধর করেন৷ বুধবার মিরানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়৷

দিল্লিতে করোনা-কেন্দ্রের ভেতরে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল দুই যুবক৷ কিছুদিন আগে৷ সেই করোনা-কেন্দ্রে আরও রোগী ছিলেন৷ বাইরে নিরাপত্তারক্ষী ছিল৷ করোনা-কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো৷ তা সত্ত্বেও বাথরুমের কাছে নিরালা জায়গা বেছে ধর্ষণ করে ওই দুই যুবক তাই করোনা নামক ভয়ংকর মহামারিও হেরে যাচ্ছে এই অপরাধীদের কাছে৷ তারা ধরা পড়বে জানে, ধর্ষণের আইন এখন খুব কড়া, সে সবও তাদের অজানা নয়, তা সত্ত্বেও এই ধরনের অপরাধ করে যাচ্ছে৷ বস্তুত, করোনাকালে কোন অপরাধটাই বা কমেছে ভারতে?

উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে খুন লেগেই আছে৷ তিনজন সাংবাদিক খুন হয়েছেন খুব কম সময়ের ব্যবধানে৷ দিন দুয়েক আগেই বুলন্দশহর থেকে দিল্লি ফেরার পথে এক ট্যাক্সিচালক খুন হয়েছেন৷ পরিবারের অভিযোগ, ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় তাকে খুন করে দুই সওয়ারি৷ পুলিশ অবশ্য তা মানতে চায়নি৷ নিজের মেয়েকে বেচে দিয়েছেন এই গুজবের ভিত্তিতে মৈনপুরিতে একজন দলিতকে তারই বাড়ির ছাদে পিটিয়ে মেরেছে পাঁচজন লোক৷ কুশীনগরে তো পুলিশের সামনেই খুনের দায়ে এক অভিযুক্তকে পিটিয়ে মারা হয়েছে৷ লকডাউন হওয়ার আগে গত জানুয়ারিতে উত্তর প্রদেশে একদিনে ১৩টা খুন হয়েছিল৷ দেখা যাচ্ছে, করোনার সময়েও যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে সেই চরিত্রের বদল হয়নি৷

রাজধানী দিল্লিই বা কম যায় কীসে? পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ১ জুন থেকে দিল্লিতে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি করে ছিনতাই হচ্ছে৷ দিন কয়েক আগের ঘটনা৷ মূলচন্দ থেকে নেহরু প্লেস আসার পথে অটোতে বসা এক বাঙালি মেয়ের হাত থেকে ব্যাগ টান মারে এক বাইক আরোহী৷ মেয়েটিও পাল্টা টান দেয়, তখন তাঁর হাত চেপে ধরে দুষ্কৃতী৷ ভয়ে মেয়েটি ব্যাগ ছেড়ে দেয়৷ এটিএমে গিয়ে পিন বদলে ১৫ হাজার টাকা তুলে নেয় দুষ্কৃতীরা৷ রাস্তায় চলার সময় মোবাইল, গলার হার ছিনতাই তো নিত্যদিনের ঘটনা৷ সেই সঙ্গে গাড়ি চুরি, ডাকাতি, হত্যা, মহিলা নির্যাতন সহ সব ধরনের অপরাধেরই বাড়বাড়ন্ত৷

সাইকোলজি অব ভায়োলেন্স জার্নালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শেরি হামবির মতে, ‘‘ধর্ষণ যৌনসুখের উদ্দেশ্যে নয়, বরং অপরপক্ষকে দমিয়ে রাখতে ক্ষমতার প্রদর্শন হিসাবে করা হয়৷’’ কিছু ক্ষেত্রে এই ক্ষমতার প্রকাশ শুধু নারীদের বিরুদ্ধে হয়৷ অন্যদিকে, ধর্ষণ কাজ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘জাতে ওঠার’ পন্থা হিসাবে৷ এছাড়া ধর্ষণের পেছনে রয়েছে নানাবিধ মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, যা বুঝতে বিজ্ঞানীরা নানা ধরনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন৷

কেন এই অবস্থা? দিল্লি পুলিশের একটা ব্যাখ্যা হলো, করোনার পর জেলগুলোকে খালি করার দরকার হয়৷ কারণ, রাজধানীর জেলে উপচে পড়া ভিড় ছিল৷ সেখানে সামাজিক দূরত্ব মানার জন্য যে সব অপরাধীর সাত বছরের কম হাজতবাসের সাজা ছিল, তাদের অনেককেই প্যারোলে ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ ছাড়া পেয়ে তারা আবার অপরাধ করতে শুরু করেছে৷ আইজি জেল রাজ কুমার সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে-কে জানায়, ‘‘দিল্লির জেল থেকে চার হাজার ৩০০ জনকে ছাড়া হয়েছিল৷ তারপর আবার ৫০ জনকে বিভিন্ন অপরাধের কারণে ধরা হয়েছে৷’’

এদিকে লকডাউনের ফলে প্রচুর লোকের চাকরি গেছে৷ ব্যবসা মার খেয়েছে৷ আনলকের পর সব খুলেছে ঠিকই, কিন্তু চাকরি, ব্যবসা কিছুই আর আগের মতো নেই। তাই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি এ সব বাড়বে তা জানা কথা৷ তা সত্ত্বেও করোনার বাজারে অপরাধের সংখ্যা মাত্রাছাড়াভাবে বেড়েছে৷ ১ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত দিল্লিতে ৪৭১টা ছিনতাই হয়েছে৷ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ২২৬টা খুন, ২৩৬টা খুনের চেষ্টা, প্রায় ৫৭ হাজার চুরি, ৭০০ ডাকাতি এবং ১৩ হাজারেরও বেশি গাড়ি চুরি হয়েছে৷

পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও৷ সেখানে আবার রাজনৈতিক খুন লেগেই আছে৷ বিজেপি-র অভিযোগ, তাদের হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়কে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে৷ অবশ্য এটাকে আত্মহত্যা বলেছে৷ আরও কিছু বিজেপি নেতা ও কর্মীকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ৷ করোনাকালেও নিয়মিত তৃণমূল বনাম বিজেপি কর্মীদের লড়াই হয়েছে৷ সব মিলিয়ে অপরাধের হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও খারাপ৷

জাতীয় মহিলা কমিশনের তথ্য বলছে, ২৩ মার্চ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ লকডাউনের প্রথম পর্যায়ে তারা নারী নির্যাতনের ৫৮৭টি অভিযোগ পেয়েছে৷ তার মধ্যে ২৩৯টি গার্হস্থ হিংসার৷ করোনা কেটে গেলে যখন পুরো হিসাব আসবে, তখন বোঝা যাবে, গার্হস্থ হিংসার প্রকৃত ছবি৷
ফলে করোনাকালে অপরাধের বাড়বাড়ন্ত ভারতে৷ কোনো অপরাধই কমেনি৷ বরং তা বাড়ছে৷

এম

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩০০ ফুট খাদে বাস, নিহত ১০  
ভারতের নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে যে মন্তব্য করল জাতিসংঘ
ভারতীয় পণ্য বয়কট নিয়ে কথা বললেন আব্দুল মোমেন
স্পেনে বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল
X
Fresh