• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ঠেঙ্গারচরই ‘ন্যায়ামস্তি’, রোহিঙ্গাদের চায় না সন্দ্বীপবাসী

শানে আলম সজল/চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ০৪ মার্চ ২০১৭, ১১:২১

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের যে চরে (ঠেঙ্গারচর) পুনর্বাসনের চিন্তাভাবনা করছে সরকার তা নোয়াখালীর হাতিয়ার অংশ নয়। সেটি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের ডুবে যাওয়া ন্যায়ামস্তি ইউনিয়নের চর। তাই সেখানে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন না করে বাপ-দাদার ভিটা বাড়ি ফিরিয়ে দেবার দাবি জানিয়েছেন সন্দ্বীপবাসী।

এ নিয়ে গেলো মঙ্গলবার সন্দ্বীপে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে মানববন্ধন করে ৫ হাজার সন্দ্বীপবাসী। ঠেঙ্গারচরে (ন্যায়ামস্তি) প্রথম মানববন্ধন এবং সন্দ্বীপ উপজেলার সাইনবোর্ড স্থাপন করে ১০টি নৌকায় আসা এসব অধিবাসী।

তাদের দাবি, এটি ঠেঙ্গারচর নয়; ন্যায়ামস্তির সেই জেগে ওঠা চর। এ চর তাদের ফিরিয়ে দিয়ে পুনর্বাসন করা হোক। সেখানে কোনো রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন হবে না। রোহিঙ্গারা সেখানে গেলে বিভিন্ন খারাপ কার্যকলাপে লিপ্ত হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেলো ১ ফেব্রুয়ারি ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের ঘোষণা দেয়ার পর সেটি বসবাসের উপযোগী কি না তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এ চরের মালিকানা নিয়েও বিরোধ চাঙ্গা হতে থাকে।

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ আর নোয়াখালীর হাতিয়ার মাঝে বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠা চরের নাম ঠেঙ্গারচর। যার মালিকানা দাবি করছে সন্দ্বীপ ও হাতিয়ার জনগণ। গেলো কয়েকবছর ধরে ধীরে ধীরে জেগে ওঠা এ চরের আয়তন প্রায় ১০ হাজার একর। চরটিকে বিভিন্ন মহল ঠেঙ্গারচর নামে অবহিত করলেও সন্দ্বীপবাসীর দাবি, এটি এক সময় সাগরে ডুবে যাওয়া তাদের চর ন্যায়ামস্তি।

মো. গোলাম তোয়াহার (৮৩) আদি নিবাস ছিল সন্দ্বীপের ন্যায়ামস্তি ইউনিয়ন। তিনি সম্প্রতি মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধে মানববন্ধনে বলেন, প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ন্যায়ামস্তি চর ছিল আমাদের আদি নিবাস। ১৯৫৪ সাল থেকে ইউনিয়নটি পর্যায়ক্রমে ভাঙতে ভাঙতে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়। গেলো ৫ থেকে ৬ বছর ধরে চরটি জেগে ওঠা শুরু করে। যেভাবে জেগে উঠছে তাতে আসছে কয়েক বছরের মধ্যে সন্দ্বীপের দক্ষিণ অংশের সারিকাইনের সঙ্গে এটি যুক্ত হবে। আমরা আমাদের বাপ-দাদার ভিটায় ফিরে যেতে চাই।

শফিকুর ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমাদের দাবি সাগরে তলিয়ে যাবার আগে এখানে বসবাস ছিল পূর্বপুরুষদের। কাগজেও আছে তাদের জমি রয়েছে জেগে ওঠা সেই চরে। আমাদের ঠেঙ্গারচরে যেনো পূর্ণবাসন করা হয়।

সন্দ্বীপের জেগে ওঠা ভূমিরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক ও মাইটভাঙা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লায়ন মিজানুর রহমান বলেন, ঠেঙ্গারচর সন্দ্বীপের পশ্চিমে সাগরে ভাঙনে বিলুপ্ত হওয়া ন্যায়ামস্তি ইউনিয়নের অংশ। সেখানে আমরা কোনো রোহিঙ্গাদের চাই না। রোহিঙ্গারা সেখানে আসলে সন্দ্বীপ চুরি-ডাকাতি, জলদস্যূ ও মাদক চোরাচালানির পথ হবে।

সন্দ্বীপ উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা জানান, নতুন ভূমি জেগে ওঠার পর দিয়ারা জরিপ করা হয়। কিন্ত এ চর নিয়ে হাইকোর্টে রিট থাকায় দিয়ারা জরিপের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ জরিপ না হওয়ায় নদী সিকস্তি ও নদী পয়স্তি আইনেরও প্রয়োগ হচ্ছে না। আর প্রয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এ চরের মালিকানা থাকবে সরকারের। কোনো ভূমি নদী বা সাগরে বিলীন হবার ৩০ বছরের মধ্যে যদি তা জেগে ওঠে তাহলে ওই ভূমির আদি নিবাস যাদের ছিল তারা তা ফিরে পাবেন। আর যদি ৩০ বছর পর জেগে ওঠে তাহলে এর মালিকানা হবে সরকারের।

সারিকাইত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, চরটির একমাত্র মালিক দাবিদার সন্দ্বীপ। সন্দ্বীপ থেকে আধ ঘণ্টায় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঠেঙ্গারচরে পৌঁছানো যায়। সেখানে রোহিঙ্গাদের যেনো পুনর্বাসন না করে সরকার। রোহিঙ্গাদের কোনো পাহাড়ী অঞ্চলে কিংবা অন্য চরে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. গোলাম জাকারিয়া বলেন, সন্দ্বীপের দক্ষিণে নতুন জেগে ওঠা চরটি আসছে কয়েক বছরের মধ্যে পুরোপুরি ব্যবহার উপযোগী হয়ে যাবে। এছাড়া যেভাবে দক্ষিণ অংশ দিয়ে চর জাগছে তা অব্যাহত থাকলে হয়তো ৫-৬ বছর পরে তা মূল সন্দ্বীপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, রেকর্ডে সন্দ্বীপের ৬১টি মৌজা ছিল। এখন ৩৮টি মৌজা বিদ্যমান রয়েছে। বিলীন হয়ে যাওয়া বাকি মৌজাগুলো শনাক্তের কাজ চলছে। এক সময় কিছু জলদস্যু এ চরে বসবাস করতো। পরে নৌবাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদের বিতাড়িত করে। এখন ওখানে কেউ নেই। সন্দ্বীপবাসীর দাবির যুক্তিকতা বিবেচনা করে ঠেঙ্গারচরের ব্যাপারে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করেন ইউএনও জাকারিয়া।

সন্দ্বীপের সারিকাইন থেকে ট্রলারে করে ঠেঙ্গারচরে যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টার কম। সন্দ্বীপের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার জেগে ওঠা এ চরের পূর্ব দিক দিয়ে ঘুরে দেখা যায়, চরের মাঝখান দিয়ে একটি খাল রয়েছে। জোয়ারের সময় এ খালে ৬ থেকে ৮ ফুট গভীর পানি থাকলেও ভাটার সময় প্রায় ভূমি ভেসে উঠে। আর শুধু চরটির পূর্ব প্রান্ত ট্রলার দিয়ে ঘুরতে ২ ঘণ্টা সময় লেগেছে। কিন্তু হাতিয়া থেকে দূরত্ব ১০ কিলোমিটারের বেশি।

গুগল স্যাটেলাইট ম্যাপ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সন্দ্বীপের দক্ষিণ অংশে জেগে ওঠা চরটির নাম রয়েছে ‘পিয়া চর’। এ চরের মাঝখান সবুজ দেখালেও নিচের অংশে পুরো পলি মাটির আস্তরণ রয়েছে। এ পলির আস্তরণ সন্দ্বীপ উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত।

ডিএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh