• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মানজুকিচের গোলে বিদীর্ণ ইংলিশদের হৃদয়

স্পোর্টস ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ১২ জুলাই ২০১৮, ০৩:৩২

২৮ বছর ধরে সেমিফাইনালে পা রাখতে পারেনি ইংল্যান্ড। অবশেষে এবার সেই স্বপ্ন ধরা দেয় ইংলিশদের হাতে। তাই যেন শিরোপার ঘ্রাণ নাকে আসছিল বৃটিশদের। উল্লাসে মাতোয়ারা ছিল পুরো ইংলিশ শিবির। কিন্তু তারা আঁচ করতে পারেনি তাদের সামনে এবারের বিশ্বকাপের অদম্য একদল দাঁড়িয়ে আছে। যারা রেফারির শেষ বাঁশি বাজানো পর্যন্ত লড়তে জানে। অবশেষে আবারো স্বপ্নভঙ্গ। ভেঙে খান খান ৫২ বছরের অধরা শিরোপা তুলে ধরার উচ্ছ্বাস।

সেই ১৯৬৬ সালে প্রথম, এরপর আর সোনালী ট্রফিতে চুমু বসাতে পারেনি বৃটিশরা। একে একে কেটে গেছে ৫২ বছর। সকলে মনে করেছিল এবার বুঝি শিরোপা নিয়েই ঘরে ফিরবে ছেলেরা। ছেলেরা বাড়ি ফিরল ঠিকই কিন্তু খালি হাতে। এবার শিরোপা না পাওয়ার আফসোস বেড়ে দাড়ালো ৫৬ বছরে।

অথচ মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ৫২ বছর পর ট্রফি জয়ের মিশনে এসে ম্যাচের প্রথমার্ধেই ফাইনালের পথে এক পা দিয়েই রেখেছিল ডেভিড ব্যাকহাম, স্টিভেন জেরার্ডদের উত্তরসূরিরা। খেলা শুরুর পঞ্চম মিনিটেই এগিয়ে যায় ইংলিশরা। ক্রোয়েশিয়ান অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ ডি বক্সের বাইরে দেলে আলিকে ফাউল করলে ফ্রি কিক পায় ইংল্যান্ড। সরাসরি শটে গোল করে নিজ দলকে এগিয়ে দেন ট্রিপার। ২০০৬ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ফ্রি কিক থেকে গোল পায় ইংল্যান্ড। এছাড়া চলতি বিশ্বকাপে সেট পিসে করা তাদের নবম গোল ছিল এটি। ম্যাচের শুরুতেই গোল করে মানসিকভাবে এগিয়ে যায় থ্রি লায়নসরা।

১৫তম মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারত ইংল্যান্ড। কর্নার কিক থেকে উড়ে আসা বল হেড করেছিলেন মাগুইরি। কিন্তু বল চলে যায় সাইডবারের সামান্য পাশ দিয়ে। ম্যাচের ২২তম মিনিটে বাজে এক ভুল করে বসেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচ। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে তিনি দিয়ে দেন রহিম স্টার্লিংয়ের পায়ে। স্টার্লিং দুর্দান্ত চতুরতায় তা কেইনকে দিলেও, অফসাইডের ফাঁদে ধরা পড়েন ইংলিশ অধিনায়ক। সেই যাত্রায় বেঁচে যান সুবাসিচ।

২৯তম মিনিটে একেবারে সহজ সুযোগ মিস করেন ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেন। ৩১তম মিনিটে গোল পেতে পারতো ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু রেবিচের জোরালো শট দুর্দান্তভাবে ঠেকিয়ে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। তাই ১-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ইংলিশরা।

পুরো প্রথর্মাধে পরিচ্ছন্ন ফুটবলের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দুই দল। যার ফলে ৪৫ মিনিটে একবারের জন্যও কোনো কার্ড বের করতে হয়নি রেফারিকে। তবে প্রথমার্ধের ৫৩ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখেও কাজের কাজ গোল করতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। এসময় ইংল্যান্ডের ২টি শটের বিপরীতে ক্রোয়েশিয়া গোলমুখে করে ৩টি শট।

দ্বিতীয়ার্ধে নেমেই কার্ড দেখাতে বাধ্য হন রেফারি। ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগের শুরুতেই ক্রোয়েশিয়ার ফরোয়ার্ড মারিও মানজুকিচ কাইল ওয়াকারকে ফাউল করলে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। এর মিনিট পাঁচেক বাদেই ক্রোয়েটদের থ্রোইনে নিজে বল হাতে নিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন কাইল ওয়াকার।

কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলা ক্রোয়েশিয়াকে তখনো পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না ইংল্যান্ডের আক্রমণভাগে। বল দখলের লড়াইয়ে তারা এগিয়ে থাকলেও, তাদের খেলা সীমাবদ্ধ মাঝমাঠ বা নিজেদের রক্ষণভাগেই। তবে খেলার ধারার বিপরীতে গিয়ে ৬৪তম মিনিটে দুরপাল্লার এক শটে ইংলিশ রক্ষণ কাঁপিয়ে দেন ইভান পেরেসিচ।

সে যাত্রায় কাইল ওয়াকার জায়গামতো থাকায় গোল না খেয়েই বেঁচে যায় ইংল্যান্ড। তবে ৬৮তম মিনিটে ম্যাচে সমতা আনে ক্রোয়েশিয়া। ডি-বক্সের মধ্যে থাকা পেরিসিচকে লক্ষ্য করে ক্রস দেন ভিরসাজকো। ক্রস থেকে পা বাড়িয়ে দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে দেন পেরিসিচ।

সমতায় ফিরে আরো আগ্রাসী হয়ে ওঠে লুকা মদ্রিচরা। ইংল্যান্ডের রক্ষণে দারুণ চাপ সৃষ্টি করে খেলে তারা। ক্রোয়েশিয়ার একের পর এক আক্রমণে রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে পড়ে ইংলিশরা। টানা আক্রমণে গেলেও কোনভাবেই গোল পাচ্ছিল না ক্রোয়েটরা। কখনও ইংলিশ ডিফেন্স, কখনও গোলকিপার, কখনও গোলবার ক্রোয়েটদের হতাশায় পোড়াচ্ছিল।

৭৪তম মিনিটে রহিম স্টার্লিংকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেন ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। ক্রোয়েশিয়ানদের একের পর এক আক্রমণে পুরোপুরি কোণঠাসা হয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। ৮২তম মিনিটে নিজ দলকে আরো একবার বাঁচিয়ে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। মানজুকিচের কাছ থেকে বল পেয়ে গোল মুখে শট নেন ব্রোজোভিচ। তবে পিকফোর্ডের নিখুঁত পারদর্শীতায় সে যাত্রায় আবারো গোলবঞ্চিত হয় ক্রোয়েশিয়া। ইংলিশ খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষাতেই বোঝা যাচ্ছিল ক্রোয়েশিয়ানদের দাপটের কথা।

এর মাঝে ইংল্যান্ডও আক্রমণে যায়। কিন্তু গোলের দেখা তারাও পায় না। ফলে নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয় ১-১ গোলের সমতায়। অতিরিক্ত সময়ে শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারত ইংল্যান্ড। ম্যাচের ৯৯ মিনিটে কেইরান ট্রিপারের ক্রস থেকে পাওয়া বল দারুণ হেড নিয়েছিলেন জন স্টোনস। কিন্তু নিশ্চিত গোলটি রুখে দিয়ে সিমো ভ্রাজালকো সে যাত্রায় বাঁচান দলকে।

এরপর অতিরিক্ত সময়ের ১০৭তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু গোলরক্ষক পিকফোর্ডের প্রচেষ্টায় অল্পের জন্য বেঁচে যায় ইংল্যান্ড। কিন্তু ১০৯তম মিনিটে আর বাঁচতে পারেনি ইংলিশরা। ইংল্যান্ডের বক্সের মধ্য থেকেই বলটা প্রথমে ফিরে আসে। লাফ দিয়ে আলতো করে হেডে আবারও ইংল্যান্ডের জালের সামনে বলটা ঠেলে দেনেইভান পেরিসিচ। জন স্টোনকে পেছনে ফেলে বলটির নিয়ন্ত্রণ নিলেন মারিও মানজুকিচ। গোলরক্ষক পিকফোর্ডও বলের কাছে আর পৌঁছাতে পারলেন না। তার আগেই বাম পায়ের অসাধারণ এক গোল করেন মানজুকিচ।

এরপর শত চেষ্টা করেও আর গোল শোধ করতে পারেনি ইংলিশরা। শেষ পর্যন্ত রেফারি বাঁশি বাজালে উল্লাসে মেতে ওঠে পুরো ক্রোয়েট শিবির। আর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে ফাইনালে উঠে ক্রোয়েশিয়া। যেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ফ্রান্স। অন্যদিকে ১৪ জুলাই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে বেলজিয়ামের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড।

ক্রোয়েশিয়া এবার পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে। এর আগে বিশ্বকাপে তাদের সর্বোচ্চ অর্জন ছিল সেমিফাইনাল। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে সেমিফাইনালে খেলেছিল ক্রোয়েশিয়া। এরপর ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৪ সালে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ক্রোয়েশিয়া। অন্যদিকে, ইংল্যান্ড এবার তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল। তাদের সামনে সুযোগ ছিল দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠার। কিন্তু তারা সেটি পারল না।

এএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • খেলা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল শনিবার
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট ‘গিনেস বুকে’ স্থান পাবে : প্রতিমন্ত্রী
টিভিতে আজকের খেলা
‘ফুটবলের উজ্জ্বল তারকারা অবশ্যই ফর্মে ফিরবে’
X
Fresh