• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

রাশিয়া বিশ্বকাপ স্টেডিয়াম পরিচিতি (১)

স্পোর্টস ডেস্ক

  ১০ মে ২০১৮, ১২:৩১

আর মাত্র ৩৬ দিন। এরপরই পর্দা উঠতে যাচ্ছে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত বিশ্বকাপ ফুটবলের। একবিংশতম ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের গুরুদায়িত্ব পেয়েছে ভৌগলিকভাবে বিশ্ব মানচিত্রের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়া। বিংশ শতাব্দীর সেরা গোলরক্ষক ‘স্পাইডার’ লেভ ইয়াসিনের বদৌলতে ফুটবলে রাশানদের আছে আলাদা নামডাক। এবার সেটা ছাপিয়ে যাবার চ্যালেঞ্জ পুতিনের দেশের। ইতিহাস সমৃদ্ধ ও প্রকৃতিদেবীর অপার সৌন্দর্য্যে ঘেরা এই স্বর্গ রাজ্যে বিশ্বকাপকে ঘিরে সবকিছুই করা হচ্ছে বেশ ঢালাওভাবে। বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে রাশিয়ার ১১টি শহরে প্রস্তুত করা হয়েছে ১২টি স্টেডিয়াম, যার ছয়টিই তৈরি হয়েছে বিশ্ব আসর উপলক্ষ্যে! বিশ্বকাপে স্টেডিয়াম নির্মাণ ও পুনঃসংস্কারে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!

বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম নিয়ে ছয় পর্বের ধারাবাহিকের প্রথম দিনে আজ থাকছে দুটি স্টেডিয়ামের টুকিটাকি।

লুজনিকি স্টেডিয়াম, মস্কো
রাশিয়ার লুজনিকি স্টেডিয়াম। বাইরে থেকে দেখলে এ যেন এক সুবিশাল রাজপ্রাসাদ। আর স্টেডিয়ামের ভিতরে চোখ ধাঁধানো গ্যালারি এবং সবুজ ঘাস। এই মাঠেই হবে ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনাল। তাই নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। শুধু সাজিয়ে বললে কম বলা হয়। ঝলমলে আলোর রোশনাইয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে স্টেডিয়ামের বাইরের অংশ। দর্শক আসন প্রায় ৮১ হাজার।

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : ভিয়ারিয়ালকে উড়িয়ে দিলো বার্সেলোনা
--------------------------------------------------------

মস্কোর এই স্টেডিয়ামেই ১১ নভেম্বর রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফেন্ডলি ম্যাচে টিম আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে রাশিয়াকে হারিয়েছে। এর আগে ফুটবলের যুবরাজ লিওনেল মেসির দেশের আগমন উপলক্ষে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল গোটা স্টেডিয়াম। এর আগে সেখানে হিমাঙ্কের নীচে মাইনাস এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় প্রস্তুতি সারেন মেসিরা।

রাশিয়ার লুজনিকি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয় সোভিয়েত আমলে ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৬ সালে। প্রথমে এর নাম ছিল সেন্ট্রাল লেনিন স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটির অবস্থান রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে, মস্কোভা নদীর তীরে। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভক্তের পর এর নাম পরিবর্তন করে ‘লুজনিকি স্টেডিয়াম’ রাখা হয় এবং বর্তমানে এটি রাশিয়ার জাতীয় স্টেডিয়াম। ১৯৮০ সালের অলিম্পিক গেমস আয়োজিত হয় এখানেই। ২০১৩ সালেও বিশ্ব-অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করা হয় এখানে।

নব্বই দশক পর্যন্ত স্টেডিয়ামটি ছাদবিহীন ছিল। সে সময় এর ধারণ ক্ষমতা ছিল ১ লাখ। তবে পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে স্টেডিয়ামটির ব্যাপক সংস্কার করা হয়, এতে ছাদ সংযোজন করা হয় এবং এর আসন পুনর্বিন্যাস করে ১ লাখ থেকে হ্রাস করে ৮১ হাজারে নামিয়ে আনা হয়।

রাশিয়া ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর বিশ্বকাপের প্রস্তুতিস্বরূপ লুজনিকিকে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে সংস্কার করা হয়। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে এর আকার সবচেয়ে বড়। বিশ্বকাপ উপলক্ষে মাঠটি আবারও সংস্কার করা হয়। এ বছরের জুন মাসে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়। এই সুবিশাল রাজপ্রাসাদ সদৃশ মাঠে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ও ফাইনাল ম্যাচ ছাড়াও আরো সাতটি ম্যাচ আয়োজনের ভার এ স্টেডিয়ামের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম, সেন্ট পিটার্সবার্গ
রাশিয়ার প্রধান শহর মস্কো থেকে ৭১২ কিলোমিটার দূরে সেন্ট পিটার্সবার্গ। এটি রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এই শহরের প্রাচীন নিদার্শন পর্যটকদের চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে। ঐতিহ্য, শিল্প আর আধুনিকতার জন্য রাশান সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিলো সেন্ট পিটার্সবার্গ। ইউরোপ ফুটবল দাপিয়ে বেড়ানো রাশিয়ার ফুটবল ক্লাব জেনিথ সেন্ট পিটার্সবার্গের হোম গ্রাউন্ড হলো এই স্টেডিয়াম।

২০০৫ সালে রাশান ফুটবল ক্লাব জেনিত সেইন্ট পিটার্সবাগ তাদের নিজস্ব মাঠের জন্য সেন্ট পিটার্সবার্গে স্টেডিয়াম নির্মাণের অনুমতি পেলে পিটার্সবার্গের সমুদ্র তীরবর্তী ক্রেস্তভস্কি এলাকায় স্টেডিয়ামটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পূর্বে এখানে ‘কিরোভ স্টেডিয়াম’ ছিল। এটি ভেঙ্গেই নতুন করে পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়। পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামটি ২০০৯ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা থাকলেও নির্মাণাধীন ঠিকাদারের কাজের গাফিলতিতে তা হয়ে ওঠেনি।

বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর রাশিয়া সরকার বিশ্বকাপের ভেন্যু হিসেবে প্রস্তুত করার জন্য ‘সেন্ট পিটার্সবার্গ স্ট্রেট গভমেন্ট’ এর কাছে নির্মাণ কাজের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করতে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে রাশিয়া সরকার। ২০১৭ সালে উদ্বোধন করে সে বছরের ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের ভেন্যু হিসেবে পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয় পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামকে। এই স্টেডিয়ামের রয়েছে নানান নামের পরিচিতি। পিটার অ্যারেনা, জেনিত অ্যারেনা, ক্রেস্তভস্কি অ্যারেনাসহ বিভিন্ন নাম। তবে, মজার ব্যাপার হলো। অত্যাধুনিক এই স্টেডিয়াম ইন্ডোর সিস্টেম। যতো প্রতিকূলতা আসুক না কেনো খেলায় কোন প্রভাব পড়বে না। এর আসন সংখ্যা প্রায় ৬৭ হাজার।

ফিফা বিশ্বকাপের অন্যতম ভেন্যুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভেন্যু হলো সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম। গ্রুপ পর্বের ৪টি আর রাউন্ড অব সিক্সটিন ও সেমিফাইনালের একটি ম্যাচ ছাড়াও, সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নিধার্রনী ম্যাচ। সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের সৌন্দর্য পর্যটকদের আলাদাভাবে দৃষ্টি কাড়ে।

এছাড়াও, স্টেডিয়াম এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, শুধু ফুটবল-ই না রাগবি, বেস বল কিংবা ক্রিকেট সব ধরনের খেলাই যখন তখন আয়োজন করা সম্ভব এখানে।

২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের মোট ৭টি সহ ১৪টি দল এই স্টেডিয়াম খেলবে। ফুটবল পিপাসুদের দুর্বীণ দৃষ্টি থাকবে সেন্ট পিটার্সবার্গে। কারণ স্বাগতিক রাশিয়া ছাড়াও, আসরের দুই হট ফেবারিট আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে সেন্ট পিটার্সবার্গে।

সেই ধারাবাহিকতায় ১৫ জুন মরক্কো ও ইরানের ম্যাচের মধ্যে দিয়ে অভিষেক হবে সেন্ট পিটার্সবার্গের। ব্রাজিলের খেলা ২২ আর মেসির আর্জেন্টিনা খেলবে ২৬ জুন। বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল ১০ জুলাই আর তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচ হবে ১৪ জুলাই।

এই স্টেডিয়ামটির আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে। তবে, বিশ্বকাপের ম্যাচ মঞ্চায়নের জন্য তীর্থের কাকের মতোই চেয়ে আছে আয়োজকরা। অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন দর্শনীয় স্টেডিয়ামই শুধু না। সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের ইতিহাস ঐতিহ্য নিশ্চিতভাবে মুগ্ধ করবে পর্যটকদেরও।

আরও পড়ুন :

এএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • খেলা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল শনিবার
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট ‘গিনেস বুকে’ স্থান পাবে : প্রতিমন্ত্রী
টিভিতে আজকের খেলা
‘ফুটবলের উজ্জ্বল তারকারা অবশ্যই ফর্মে ফিরবে’
X
Fresh