ম্যাশের ব্যাটে রংপুরের জয়
সিলেটের মুখের খাবার কেড়ে নিলেন রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। জয়ের স্বপ্নে বিভোর সিলেট। শেষ ওভারে প্রয়োজন ৯ রান। প্রথম বলে ওয়াইড দিলেন ইংলিশ বোলার ব্রেসন্যান। দ্বিতীয় বলে কোনো রান নিতে পারলেন না ম্যাশ। তৃতীয় বলে বিশাল ছক্কা। খেলা রংপুরের নিয়ন্ত্রণে। চতুর্থ বলে এক রান নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন নাহিদকে। পঞ্চম বলে ৪ মেরে বাকি কাজটি সারলেন তিনি।
আগের ম্যাচে ওয়ানডাউনে নেমে ১৭ বলে খেলেন ৪২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচেও ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন মাশরাফি। সাত নম্বরে নেমে সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন রংপুর অধিনায়ক। এ নিয়ে শেষ তিন ম্যাচে তাদের জয় আসে শেষ ওভারে।
এর আগে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে নাসির-সাব্বিরদের ব্যাটিংয়ে পাঠান রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি। নির্ধারিত ওভার শেষে পাঁচ উইকেটে ১৭৩ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায় সিক্সার্সরা।
বোলিংয়ে নেমে ম্যাচের শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে নিয়ে নেয় রংপুর। দলে ফেরা স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। প্রথম ৩ উইকেট পকেটে পুরেন বাঁহাতি স্পিনার।
সোহানকে (৫) এলবি করার পর নাসিরকে (৪) স্ট্যাম্পড করান নাজমুল। ১৭ বলে ২৬ রান করে আন্দ্রে ফ্লেচার রানের চাকা অব্যাহত রেখেছিলেন। নিজের শেষ ওভারে ফ্লেচারকে ফিরিয়ে রংপুরকে উল্লাসে ভাসান ম্যাচসেরা নাজমুল। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ক্যারিবীয় ওপেনার।
ক্রিজে এসে বাবর আজম আজও ছিলেন ধারাবাহিক। রুবেলের বলে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলা বাবর নাজমুলের থ্রোতে সাজঘরে ফেরার আগে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন সর্বোচ্চ ৫৪ রান। মাঝের সময়টুকুতে ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়িয়ে যান পাকিস্তানের এ ক্রিকেটার। ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের চারে থাকা এ ব্যাটসম্যানকে কেন ভবিষ্যতের তারকা বলা হচ্ছে তা আরো একবার বুঝিয়ে দেন তিনি। তার প্রতিটি শটে ছিল আত্মবিশ্বাস।
মাশরাফির করা ১৬তম ওভারের চতুর্থ বলে মিড অনে ড্রাইভ করেন সাব্বির। ফিল্ডারের হাতে বল রেখে রান চুরি করতে চেয়েছিলেন বাবর। সাব্বির তাকে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু নিখুঁত থ্রোতে রানআউট হন ৩৭ বলে ৫৪ রান করা বাবর। ৪ চার ১ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান বাবর। তাকে সঙ্গে দেন সাব্বির। মাশরাফির পরবর্তী ওভারে বোল্ড হওয়ার আগে সাব্বির ৫ চারে ৩৭ বলে করেন ৪৪ রান। এ দুই ব্যাটসম্যানের ৫১ বলে ৭৪ রানের জুটিতে মূলত শুরুর ধাক্কা সামলে সিলেট বড় সংগ্রহ পায়।
রংপুরের হয়ে তিনটি উইকেট শিকার করেন বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম। একটি উইকেট নেন মাশরাফি।
বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রংপুরের শুরুতেই প্রয়োজন ছিল বড় জুটির। ম্যাককালামকে তিনে নামিয়ে আজ ক্রিস গেইলের সঙ্গী করে জিয়াউরকে পাঠান টম মুডি। জিয়ার ব্যাট হাসলেও ফ্লপ গেইল। ইনিংসের চতুর্থ বলে ব্রেসন্যানের হাতে ক্যাচ দেন ৫ রান করা গেইল।
দ্বিতীয় উইকেটে ম্যাককালাম ও জিয়াউর ৫৯ রানের জুটি গড়েন। এতে জিয়াউর অবদান ৩৫ রান। পাওয়ার প্লে’র সুবিধা কাজে লাগিয়ে দুই ব্যাটসম্যান ওভারপ্রতি ১১ করে রান তুলতে থাকেন। পাওয়ার প্লে’ শেষ হওয়ার দুই বল আগে এই জুটি ভেঙে সিলেটকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন নাবিল। জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে বল মিস করেন ১৮ বলে ৩৬ রান করা জিয়াউর। উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো সোহান স্ট্যাম্প ভেঙে উল্লাসে ফেটে পড়েন। কারণ জিয়াউরের পা ছিল ক্রিজের বাইরে।
আগে ম্যাচে রংপুরের হয়ে সর্বোচ্চ রান করা মিথুনের ব্যাট আজ হাসেনি। ১৭ বলে ১৮ রান করে মিথুনকে ফেরান ব্রেসন্যান। একপ্রান্ত আগলে রান করে গেলেও লক্ষ্যের পথে দলকে এগিয়ে নিতে পারেননি ম্যাককালাম। রাজুর স্লোয়ারে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেয়ার আগে ম্যাককালাম ৩৮ বলে করেন ৪৩ রান। তখনো রংপুরের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫৭ রান। নাসিরের অসাধারণ এক থ্রোতে সামিউল্লাহ সেনওয়ারি আউট হলে মাঠে নামেন মাশরাফি।
১৭তম ওভারে দু’বার জীবন পেয়েও সোহেল তানভীরের ওভার থেকে ছক্কা আদায় করেন বোপারা। মিড উইকেটে দুটি ক্যাচই ছাড়েন শুভাগত হোম। জয় থেকে ২৮ রান দূরে থেকে মাশরাফি-বোপারার ভুল বোঝাবুঝিতে আউট হন ৩৩ রান করা বোপারা। তানভীরকে ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন মাশরাফি। বাঁহাতি পেসারের স্লোয়ার দারুণভাবে পিক করে মাশরাফি বল পাঠান গ্যালারিতে। পরের ৫ বলে আরো ৫ রান যোগ করেন ব্যাটসম্যানদ্বয়।
টিম ব্রেসন্যান শেষ ওভারের প্রথম বলে ওয়াইড করলেও দ্বিতীয় বলটি ডট করেন। কিন্তু পরের বলটি দিয়ে দেন ফুলটস। মাশরাফি একটু সরে এসে লং অনের ওপর দিয়ে বল বাউন্ডারিতে পাঠান। উল্লাস শুরু হয়ে যায় রংপুর শিবিরে। পরের বলে মাশরাফি নেন ১ রান। চতুর্থ বলে নাসির ক্লোজ ইন ফিল্ডার নিয়ে আসেন। কিন্তু ব্রেসন্যানের ফুলটস বল বাউন্ডারিতে পাঠাতে বেগ পেতে হয়নি নাহিদুলকে। নাহিদুল ১৪ ও মাশরাফির ১৭ রানে ২ বল আগেই জয় নিশ্চিত হয় রংপুরের।
এএ/ওয়াই
মন্তব্য করুন