শেষ বলে রংপুরের রোমাঞ্চকর জয়
শেষ ওভারের খেলা চলছিলো। ঘুরেফিরে দু’দলের ড্রেসিংরুম দেখাচ্ছিলেন ক্যামেরাম্যান। ড্রেসিংরুমের টান টান অবস্থা। আফ্রিদি, নারাইন চুপচাপ বসে, সুজন তাকিয়ে আছেন মাঠ পানে। অন্যদিকে রংপুরের ড্রেসিংরুমেও একই অবস্থা। সবার লক্ষ মাঠে কি হচ্ছে সেখানে। কে জিতবে? ব্যাটিংয়ে পোলার্ড বল হাতে পেরেরা। প্রথম দুই বল ডট, ম্যাচ ঝুঁকে গেল রংপুরের দিকে। পরের বলে সবার মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকালেন পোলার্ড। মুহূর্তেই যেন মাথায় বাজ পড়ল রংপুর সমর্থকদের। চতুর্থ বল আবারও ডট। খানিকটা চিন্তা কমল মাশরাফিদের। পঞ্চম বলে পোলার্ডকে বোল্ড করে জয়টা প্রায় ধরেই ফেলল রংপুর। শেষ বলে জিততে ঢাকার দরকার ৪ রান। এককথায় অসম্ভবকে সম্ভব করা! সে আর হলো না। ঢাকার শেষ ব্যাটসম্যানকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়ে রোমাঞ্চকর জয় মঞ্চস্থ করলো রংপুর ।
মিরপুরের শের-এ-বাংলা স্টেডিয়ামে এদিনের দুটি ম্যাচেই দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। গ্যালারী ভর্তি দর্শকরা উপভোগ করেছেন জমজমাট ব্যাটিং-বোলিংয়ের লড়াই।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই হয় রংপুরের। গেইল আর ব্রেন্ডন ম্যাককালামের স্বপ্নের ওপেনিং জুটি বড় স্কোরই দেখাচ্ছিলো। দলীয় ৩৬ রানে ৬ রান করা ম্যাককালামকে ফেরান পাকিস্তানি লেগস্পিনার শহিদ আফ্রিদি। ম্যাককালাম ফিরে গেলেও থেমে থাকেনি গেইল ঝড়। ২৬ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন। গেইলকে আটকাতে পরের ওভারেই অফস্পিনার মোসাদ্দেককে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক সাকিব। অর্ধশতকের পর পরই গেইলকে বিদায় করেন মোসাদ্দেক। আউট হওয়ার আগে ২৮ বলে ৫ চার ৪ ছয়ে দলকে উপহার দেন ৫১ রানের ঝলমলে ইনিংস।
এরপর মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে আসা শাহরিয়ার নাফিস মাত্র ৯ রান করেই সাজঘরে ফিরেছেন। তবে মাশরাফি ১ চার ১ ছয়ে খানিকটা ঝড়ের আভাস দিলেও নিভে গেছেন খুব দ্রুত। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ২২ রান যোগ করেন মিথুন।
ঢাকার পক্ষে একাই ৫টি উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। ২টি উইকেট দখলে নিয়েছেন আফ্রিদি। ১টি করে উইকেট ঝুলিতে পুরেন মোসাদ্দেক এবং আমির।
১৪৩ রানের লক্ষে খেলতে নেমে ঢাকার ওপেনার এভিন লুইস করেন ২৫ বলে ২৮ রান। আরেক ওপেনার সুনীল নারাইন ০ রানে সাজঘরে ফেরেন। তিন নম্বরে নামা সাকিব ১১ বলে করেন ১১ রান। মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে আসে ২ রান।
মেহেদি মারুফ ২৪ বলে ১৫ রান করে বিদায় নেন। কাইরন পোলার্ড ১৪ বলে ১২ এবং নাদিফ চৌধুরি ২ রান করে বিদায় নেন। অতিরিক্ত থেকে আসে ১৯ রান। শেষ ওভারের শেষ দুই বলে দুই উইকেট তুলে নেন রংপুরের পেসার থিসারা পেরেরা। ঢাকার ইনিংস থামে ১৩৯ রানের মাথায়।
রংপুরের দলপতি মাশরাফি ৪ ওভার বল করে ৩০ রান খরচায় তুলে নেন দুটি উইকেট। সোহাগ গাজী ৪ ওভারে ১৮ রান করে নেন দুটি উইকেট। রুবেল হোসেনের ৪ ওভার থেকে ২৯ রান আসলেও তিনি তুলে নেন দুটি উইকেট। লাসিথ মালিঙ্গা ৪ ওভারে ২০ রান খরচ করে তুলে নেন একটি উইকেট। আর থিসারা পেরেরা ৪ ওভার বল করে ৩৭ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন।
রংপুর রাইডার্স
১৯.৫ ওভারে ১৪২/১০ (ম্যাককালাম ৬, মিথুন ২২, গেইল ৫১, নাফিস ৯, মাশরাফি ১৫, পেরেরা ১৫, বোপারা ১২, জিয়া ৪, গাজী ০, মালিঙ্গা ১*, রুবেল ০; আবু হায়দার ০/৯, সুনিল নারাইন ০/২৯, আমির ১/৩৪, আফ্রিদি ২/৩৯, মোসাদ্দেক ১/৪, সাকিব ৫/১৬, কাইরন পোলার্ড ০/৬)
ঢাকা ডায়নামাইটস
২০ ওভার ১৩৯/১০ (এভিন লুইস ২৮, সুনিল নারাইন ০, সাকিব আল হাসান ১১, জহুরুল ইসলাম ২৯, মোসাদ্দেক হোসেন ২, মেহেদী মারুফ ১৫, শহীদ আফ্রিদি ২১, কাইরন পোলার্ড ১২, নাদিফ চৌধুরি ২, মোহাম্মদ আমির ০*, আবু হায়দার রনি ০; মাশরাফি বিন মুর্তজা ২/৩০, সোহাগ গাজী ২/১৮, লাসিথ মালিঙ্গা ১/২০, রুবেল হোসাইন ২/২৯, থিসারা পেরেরা ২/৩৭)
ফলাফল: রংপুর রাইডার্স ৩ রানে জয়ী
প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: ক্রিস গেইল (রংপুর রাইডার্স)
এএ
মন্তব্য করুন