ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ
শততম টেস্ট জিতে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার দেয়া ১৯১ রানকে সহজ টার্গেট বানিয়ে ৪ উইকেটের জয় তুলে নিলো মুশফিকবাহিনী। এ সুবাদে চতুর্থ দেশ হিসেবে শততম টেস্টে জেতার বিরল কীর্তি গড়লো টাইগাররা। এর আগে নিজেদের শততম টেস্টে জয় পায় বিশ্ব ক্রিকেটের ৩ পরাশক্তি-অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এ টেস্ট জয়ের ফলে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি দলীয় সাফল্য পেয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লঙ্কা জয় করেছে টাইগাররা। সঙ্গে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টেস্ট সিরিজ ড্র করলো লাল সবুজের দল। এ জয়ের আগে টেস্টে বাংলাদেশের রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ছিল ২টি। এ নিয়ে হলো ৩টি। আর মোটের ওপর ১৮তম টেস্টে এসে লঙ্কা জয় করলো তারা। সার্বিকভাবে এটি বাংলাদেশের নবম জয়। জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের পর চতুর্থ দল হিসেবে শ্রীলঙ্কাকে হারালো মুশফিকবাহিনী। দেশের বাইরে এটি টাইগারদের চতুর্থ জয়ও।
কলম্বো টেস্টে ব্যক্তিগত অর্জনও কম নয় বাংলাদেশের। শততম টেস্টে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়েছেন সাকিব আল হাসান। ২২তম হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন তামিম ইকবাল। তার ৮২ রানের ইনিংসটি রান তাড়ায় বাংলাদেশ জিতেছে এমন ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ক্যারিয়ারে ১৭তম হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন মুশফিকুর রহিম। দীর্ঘদিন পর ক্রিকেটে ফিরে মুস্তাফিজুর রহমান জানান দিয়েছেন তার সব অস্ত্রই ঠিক আছে।
যে টেস্টে এতো দলীয় ও ব্যক্তিগত অর্জন তা জেতা খুব সহজ ছিল না বাংলাদেশের। স্মরণীয় টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে পঞ্চম ও শেষ দিনে ১৯১ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি টাইগারদের। দলীয় মাত্র ২২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে টাইগাররা। ‘বার্থ ডে বয়’ রঙ্গনা হেরাথকে ডাউন দ্য উইকেটে মারতে গিয়ে উপুল থারাঙ্গাকে ক্যাচ দিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন সৌম্য সরকার (১০)। হেরাথের পরের বলেই স্লিপে গুণারত্নকে ক্যাচ দিয়ে একই পথে হাঁটেন ইমরুল কায়েস (০)।
এর সঙ্গে শুরুতেই ভীষণ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে হার্ডহিটার সাব্বির রহমানকে নিয়ে ধীরে ধীরে সেই চাপ কাটিয়ে ওঠেন তামিম ইকবাল। তাদের শক্ত জবাবে শুরুর ধাক্কা সামলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা। দু’জনের ব্যাট থেকে ছুটে রানের ফোয়ারা। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল তারাই টেস্ট জিতে মাঠ থেকে বেরিয়ে আসবে। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। দলীয় ১৩১ রানে পেরেরাকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। তার আগে সাব্বিরের সঙ্গে ১০৯ রানের মহামূল্যবান জুটি গড়েন তিনি। বামহাতি ব্যাটসম্যান খেলেন ১২৫ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৮২ রানের অসাধারণ ইনিংস।
সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি সাব্বির রহমান। দলীয় ১৪৩ রানে দিলরুয়ান পেরেরার বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান করেন ৪১ রান। তার বিদায়ের সঙ্গে শঙ্কা জাগে বাংলাদেশ কি তাহলে টপাটপ উইকেট হারাতে যাচ্ছে! তবে তা উবে যায় সাকিব-মুশফিক অবিচ্ছিন্ন উইকেট জুটিতে চা বিরতি গেলে।
চা বিরতির পর ক্রিজে এসেই পেরেরার বলে বোল্ড হয়ে সাকিব ফিরে গেলে ফের সেই শঙ্কা জেগে উঠে। তবে মোসাদ্দেককে নিয়ে তা হতে দেননি অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। এক পর্যায়ে তারা জয় নিয়েই মাঠ ছাড়বেন-এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে যায়। তবে নাটকের তখনো কিছু বাকি ছিল। জয় থেকে মাত্র ৩ রান দূরে থাকতে সাজঘরে ফেরেন মোসাদ্দেক। তিনি করেন ১৩ রান।
তবে মোসাদ্দেকের আউট গ্যালারির দর্শক ও বাংলাদেশের কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর উচ্ছ্বাস থামাতে পারেনি। ২ বল পরেই হেরাথকে স্কয়ার লেগে সুইপ করে ২ রান নিয়ে সবাইকে বাঁধভাঙা আনন্দে মাতান মিরাজ। সমআনন্দে মাতেন ক্রিকেটাররাও। তবে বেশি উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায় অধিনায়ক মুশফিকের। শেষ পর্যন্ত তিনি অধিনায়কোচিত ২২ রান করে অপরাজিত থাকেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩৩৮
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৬৭
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ৩১৯
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৫৭.৫ ওভারে ১৯১/৬ (তামিম ৮২, সৌম্য ১০, ইমরুল ০, সাব্বির ৪১, সাকিব ১৫, মুশফিক ২২*, মোসাদ্দেক ১৩, মিরাজ ২*; পেরেরা ৩/৫৯, হেরাথ ৩/৭৫, ডি সিলভা ০/৭, সান্দাকান ০/৩৪, লাকমল ০/৭, গুনারত্নে ০/৪)
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ১-১ ব্যবধানে ড্র
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তামিম ইকবাল
ম্যাচ অব দ্য সিরিজ: সাকিব আল হাসান
- উচ্ছ্বাসের ছোঁয়া তারায় তারায়
- আনন্দ জোয়ার দেশ জুড়ে
- তোমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছ, জয় বাংলা : প্রধানমন্ত্রী
- স্বামীর কীর্তিতে মুগ্ধ শিশির
- বিসিবি’র কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা
- শততম টেস্ট জয় টাইগার ভক্তদের উৎসর্গ
- টিএসসিতে জয়ের উল্লাস
- ঐতিহাসিক টেস্টেও জ্বলজ্বলে সাকিব
ডিএইচ/জেএইচ
মন্তব্য করুন