• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo
বেইলি রোড ট্রাজেডি / পেছাল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ
রাজধানীর বেইলি রোডে কোজি কটেজ ভবনের অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানিরঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়ে আগামী ৪ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে।  বুধবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুলতান সোহাগ উদ্দিন এই তারিখ ধার্য করেন। প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আজ দিন ধার্য থাকলেও তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় আদালত নতুন তারিখ ধার্য করেন।  আদালতের প্রসিকিউশন দপ্তরের রমনা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই নিজাম উদ্দিন ফকির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রসঙ্গত, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে আগুন লাগে। এ ঘটনায় ৪৬ জন প্রাণ হারান। সেইসঙ্গে আহত হন ১১ জন। নিহতদের মধ্যে ৮ শিশু ছাড়াও ২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ছিলেন।এ ঘটনায় ২ মার্চ সকালে রমনা মডেল থানার এসআই মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অবহেলা জনিত হত্যা মামলাটি করেন। মামলায় এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন—ভবনটির নিচতলায় থাকা চা কফির দোকান চুমুকের মালিক আনোয়ারুল হক (২৯), গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের মালিক আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ, ভবনের ম্যানেজার মুন্সি হামিমুল আলম বিপুল (৪০) এবং কাচ্চি ভাই নামে রেস্তোরাঁর মালিক মো. সোহেল সিরাজ (৩৪)। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ভবনটির মালিক ও ম্যানেজার সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট এবং দোকান ভাড়া দেন। রেস্টুরেন্টগুলো যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া রান্নার কাজে গ্যাসের সিলিন্ডার এবং চুলা ব্যবহার করে। রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য ভবনের মালিক ও ম্যানেজারের যোগসাজশে চুমুক, কাচ্চি ভাই, মেজবানী রেস্টুরেন্ট, খানাস ফ্ল্যাগশিপ, স্ট্রিট ওভেন, জেষ্টি, হাক্কা ঢাক্কা, শেখহলি, ফয়সাল জুসবার (বার্গার), ওয়াফেলবে, তাওয়াজ, পিৎজা–ইন, ফোকো এবং এম্ব্রোশিয়া রেস্তোরাঁর মালিকেরা ভবনটির নিচ তলায় বিপুল পরিমাণে গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করেন। তাঁরা জননিরাপত্তা তোয়াক্কা না করে অবহেলা, অসাবধানতা, বেপরোয়া ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ এবং বিপজ্জনকভাবে এই গ্যাস সিলিন্ডার এবং গ্যাসের চুলা ব্যবহার করে আসছিলেন। এই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। এই আগুনের তাপ ও প্রচণ্ড ধোঁয়া পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে বিভিন্ন ফ্লোরে থাকা রেস্টুরেন্ট ও দোকানে অবস্থানকারী লোকজন আগুনে পুড়ে ও ধোঁয়া শ্বাসনালিতে ঢুকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান এবং গুরুতর আহত হন। এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভবনটি আবাসিক ভবন হিসেবে নির্মিত হলেও পরবর্তীতে মালিক ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর ব্যবসায়িক কাজে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়। ভবনটির যেসব তলায় রেস্তোরাঁ ছিল, সেগুলোতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের জন্য ফায়ার সার্ভিসের কোনো অনুমোদন নেয়নি। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি ভবনটিতে ফায়ার এক্সিট সিঁড়িও নেই। আরও বলা হয়েছে, ভবনের মালিক, ম্যানেজার ও রেস্তোরাঁর মালিকেরা ভবন ব্যবহারের যথাযথ নিয়ম মানেননি। তাঁরা আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য ভাড়া দিয়েছেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দোকান পরিদর্শকদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে রেস্তোরাঁ স্থাপন করে, গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার ব্যবহার করেছেন। অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনার পর ভবনের কাচ্চি ভাইয়ের ম্যানেজার জিসান, চা চুমুকের মালিক আনোয়ারুল হক ও শাকিল আহমেদ রিমন এবং গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের ম্যানেজার হামিমুল হক বিপুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।  
২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৫৪

বেইলি রোড ট্র্যাজেডি / শর্টসার্কিটের আগুন ছড়ায় জমে থাকা গ্যাসে
রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আলোচিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত সম্পন্ন করেছে ফায়ার সার্ভিসের গঠিত কমিটি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে প্রতিবেদন জমাও দিয়েছে তারা।   ফায়ার সার্ভিসের ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ভবনের নিচ তলায় থাকা ‘চা চুমুক’ কফি শপের ইলেকট্রিক কেটলির শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এর মাত্র তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যে পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। মূলত ভবনে লিকেজ থেকে সৃষ্ট গ্যাস জমে থাকার কারণেই আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট ওই তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, তদন্তে পাওয়া গেছে যে হোটেলে যেখানে বসে মানুষ খাওয়া দাওয়া করতো, সেখানেও রাখা ছিল সিলিন্ডার। ভবনের একটিমাত্র সিঁড়ি, সেটাও স্টোর রুম বানিয়ে রাখা হয়েছিল। সিলিন্ডারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভর্তি করে রাখা ছিল সেখানে। এ ছাড়া ভবনের রুফটপও উন্মুক্ত ছিল না। মসজিদের পাশাপাশি অফিসসহ আরও কিছু মালামাল ছিল সেখানে। তদন্তে আরও উঠে আসে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) যে ধরনের নকশার অনুমোদন দিয়েছিল, সেটা পুরোটাই পাল্টে ওই ভবন নির্মাণ করেন মালিকরা। ২০০৩ এর আইন অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস থেকে অগ্নিনিরাপত্তার কোনো ট্রেনিংই তারা নেননি। মোটকথা, যতগুলো অনিয়ম করা যায় সবগুলো অনিয়ম ওই ভবনে ছিল। ভেন্টিলেশন পর্যন্ত ছিল না ভবনটিতে।   গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডটি ঘটে। দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ৪৬ জন। এ ছাড়া অন্তত ২২ জন গুরুতর আহত হন। ভবনের নিচতলা থেকে ছাদ পর্যন্ত অনেক রেস্তোরাঁ, কফি শপ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। বিশেষ করে রেস্তোরাঁর সংখ্যাই ছিল বেশি। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে রেস্টুরেন্টগুলোতে ভিড় হতো ভোজনপ্রেমীদের। কিন্তু, অগ্নিনির্বাপনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না ভবনটিতে।  ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, এ ধরনের ভবনে কমপক্ষে ৫০ হাজার গ্যালন পানি ধারণক্ষমতার ওয়াটার রিজার্ভার না থাকলে আমরা ছাড়পত্র দিই না। কিন্তু সেখানে পানির ক্যাপাসিটি মাত্র ১০ হাজার গ্যালন। পানি ছিল আরও কম। ভবিষ্যতে এ ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ফায়ার সেইফটি প্ল্যান ২০০৩ এবং রাজউক থেকে অনুমোদন করা নকশা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি।  
০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৯

বেইলি রোড ট্রাজেডি / দায়ীদের খুঁজছে রাজউক 
রাজধানীর বেইলি রোডে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে অগ্নিকান্ডের শিকার গ্রিন কোজি কটেজ ভবনটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন নিয়ে নির্মিত হলেও এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনিয়ম ঘটেছে বলে উঠে এসেছে প্রাথমিক তদন্তে। এখন এসব অনিয়মের জন্য দায়ী যারা, তাদের খোঁজ করছে রাজউকের তদন্ত কমিটি। রাজউক বলছে, নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট (ব্যবহার সনদ) ছাড়া বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা পর্যন্ত কোন সংস্থার কোন কোন কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা ছিল, সেটি নিরূপণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনে ব্যবসা পরিচালনার অনুমোদন–সংক্রান্ত নথিগুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে চাওয়া হয়েছে। ওই নথিগুলো পেলে অবহেলা ও গাফিলতিতে জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। প্রসঙ্গত, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের এই ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ঢাকার রমনা থানায় ২ মার্চ অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার ভবনটির ব্যবস্থাপক মুন্সি হামিমুল আলমসহ চারজনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। মামলাটি ইতোমধ্যে থানা-পুলিশ থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, সিআইডি আগুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তের অগ্রগতি পরে জানানো হবে।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অকুপেন্সি সার্টিফিকেট ছাড়াই ভবনটিকে ফায়ার লাইসেন্স দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রেস্তোরাঁসহ অন্য দোকানগুলোকে ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছে। ঘটনা তদন্তে রাজউকের পাশাপাশি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।  তদন্তের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মোহাম্মদ আবদুল আহাদের কাছে। তিনি বলেন, রাজউকের অনুমোদন নিয়ে ভবন তৈরি করা হলেও ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। তদন্ত চলছে। এখানে কার কী দায়দায়িত্ব ছিল, সেটি নিরূপণের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ অভিমত নেওয়া হবে। অবহেলা ও গাফিলতিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে।  
১০ মার্চ ২০২৪, ১১:২৫

গণপরিবহনে ৩৫ শতাংশ নারী আসন রাখার দাবি
গণপরিবহনে নারীদের জন্য ৩৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখার দাবিতে সমাবেশ ও র‌্যালি করেছে সেভ দ্য রোড নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শুক্রবার (৮ মার্চ) দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সেভ দ্য রোডের মহাসচিব শান্তা ফারজানা বলেন, নির্মম বাস্তবতা হলো, গণপরিবহনে নারীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রতিদিন কমপক্ষে শতাধিক নারী নিপীড়িত হচ্ছেন কেবলমাত্র সড়ক পরিবহন নীতিমালা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায়। আমরা আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সব গণপরিবহনে ৩৫ শতাংশ নারী আসন নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সমাবেশে উপস্থিত বিশিষ্টজনরা সেভ দ্য রোডের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক শুভঙ্কর দেবনাথ, শ্রমিক নেতা ও মানবাধিকার কর্মী আনিসুর রহমান, সেভ দ্য রোডের ভাইস চেয়ারম্যান সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, বিকাশ রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিদুল মল্লিক, রাজনীতিবিদ সেলিম আহমাদ, সমাজসেবক আবদুল্লাহ আল মামুন, মনোয়ারা বেগম প্রমুখ।
০৮ মার্চ ২০২৪, ১৯:২৭

বেইলি রোডে আগুনের সূত্রপাতের ধারণা পেয়েছে সিআইডি
রাজধানীর বেইলি রোড ট্রাজেডির ঘটনায় ইলেকট্রিক কেতলি ও গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। তিনি বলেছেন, ঘটনাস্থল থেকে ১৫টির বেশি আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ফরেনসিক টিম। সেগুলো পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে স্পষ্ট হবে আগুনের নেপথ্যে কী ছিল কারণ। তবে অগ্নিকাণ্ডটি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে সূত্রপাতের সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।  সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস যখন সব কাজ শেষ করে আগুন নিভিয়েছে তখন সিআইডির একাধিক টিম সেখানে কাজ করেছে। সেখানে সিআইডির ফরেনসিক টিম, ডিএনএ টিম ও কেমিক্যাল টিম কাজ করেছে। বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই রিপোর্ট পাওয়া যাবে। সিআইডি প্রধান বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা যেটা জানতে পেরেছি, গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাতের সম্ভাবনাই বেশি। কেমিক্যালের আলামতও পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে সেখানে বিস্ফোরকজাতীয় কিছু ছিল কি না। আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। রিপোর্ট পেলেই নিশ্চিত হবে আগুনের কারণ। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুন লাগে। ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ১২ জনকে। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র সুরক্ষা সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে দেন হাইকোর্ট। কমিটি চার মাসের মধ্যে বেইলি রোডে আগুনের কারণ অনুসন্ধান করবে এবং কারা এর জন্য দায়ী, তা খুঁজে বের করবে। এ ছাড়া রাজধানীর ভবনগুলোতে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন হবে, তার সুপারিশ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে এ কমিটি।
০৭ মার্চ ২০২৪, ১৮:০৭

বেইলি রোড ট্রাজেডি / বিচারহীনতার ট্রেডিশন থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে
সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশে যেসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল রাষ্ট্র, যথাযথ কর্তৃপক্ষ, আমরা সেখান থেকে কি শিক্ষা গ্রহণ করেছি এমন প্রশ্ন সুস্থ সচেতন মহলে ঘোরপাক খাচ্ছে। দেশের জাতীয় খবরের কাগজে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত কনসার্ন দিয়েই আজকের জনগুরুত্বপূর্ণ জনসচেতনতামূলক লেখনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বেইলি রোডের যে বহুতল ভবনে আগুন লাগল, সেখানে কোনো ফায়ার এক্সিট নেই। উস্মা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, সরকার সব ভবনে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন এবং অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বারবার নির্দেশনা দিলেও তা মানা হচ্ছে না। ভবন নির্মাণের সময় নিয়ম-কানুন মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় আমাদের স্থপতিদের অনুরোধ করি, অন্তত যখন তারা ঘর বা বিল্ডিং ডিজাইন করেন, তখন একটি ছোট খোলা বারান্দা, একটি ফায়ার এক্সিট বা বায়ুচলাচলের স্থান রাখুন। কিন্তু যেসব স্থপতি ভবন নির্মাণ করতে চান তারা ঠিকমতো নকশা করাবেন না এবং মালিকরাও এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়তে চান না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগ উৎকণ্টার সাথে দেশের সুস্থ সচেতন সকল মানুষ একমত।  বেইলি রোডে অবস্থিত ‘কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট’ ভবনে লাগা আগুনে মোট ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। আমাদের লোকজনদের অনুরোধ করে আইন মানানো অসম্ভব কাজ। আইন প্রয়োগ করতে হয়। আইনের প্রয়োগে অন্তরায় কি? আইন অমান্য করলে কি শাস্তি, মানুষ কেন রাষ্ট্রপ্রদত্ত আইন মানছে না, এর কারণ উদঘাটন সময়ের দাবি। যারা দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য জ্ঞান, দেশের প্রচলিত health and safety নীতিমালা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করতে বাধা কোথায়? বাংলাদেশে কেন এর ব্যত্যয়, সরকারের পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব নিয়োজিত কর্তাব্যক্তিরা এর দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে অনুশীলন প্রয়োজন। এভাবে চলতে পারে না।  আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ লোক মনে করে আগুন দিয়ে আমরা মুরগির মাংস, গরুর মাংস রান্না করে খাই। সিগারেটে আগুন ধরিয়ে চোখ বুজে শেষ টান দেওয়া, অতঃপর জানালা দিয়ে সিগারেটের শেষের অংশ আগুনসহ ফেলে দেওয়া। আগুন নিয়ে আমরা খেলি কিন্তু আগুন কী জিনিস তা উপলব্ধি করতে পারি না। আসলেই আগুন কী? আগুন হলো- সাধারণত বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে জ্বালানির কার্বন ও হাইড্রোজেনের মিলনে সৃষ্ট এক বিশেষ রাসায়নিক বিক্রিয়া। আলোর মাধ্যমে এ রাসায়নিক বিক্রিয়া শক্তিতে প্রকাশ পায়। আগুন ও এর ভয়াবহতা নিয়ে বছর পূর্বে একটি সচেতনতামূলক আর্টিকেল লিখেছিলাম। ঢাকা বেইলি রোডের ভয়াবহ আগুন দুর্ঘটনার চিত্র দেখে আবারও এর পুনরাবৃত্তি। অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনার চেষ্টা করছি, যা হয়তো সামান্যতম সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে সহায়ক হবে। কেমন করে আমাদের অজান্তে আগুনের ধ্বংস লীলাখেলা সৃষ্ট হয় ইহা সরকারের যথাযথ মন্ত্রণালয় যথাযথ কর্তৃপক্ষ জানেন। উদাসীনতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, অবহেলা, অবজ্ঞা, ছোট ছোট স্বার্থসংশ্লিষ্টতার সঙ্গে আপোষহীন মনোভাব তৈরি না করতে পারাই আগুন দ্বারা সৃষ্ট দুর্ঘটনা বাংলাদেশে এলোমেলোভাবে ঘটছে। আইন অনুযায়ী ভবনের প্রতিটি ঘরে স্মোক ডিটেক্টর স্থাপন করতে হবে। ধোঁয়া বের করার ডিভাইসগুলি ডিজাইন এবং ইনস্টল করা প্রয়োজন যাতে তারা আগুন বা ধোঁয়ার প্রথম দিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়, অনেক লোক বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়েছিল কারণ পালিয়ে যাওয়ার কোনও পথ ছিল না। একটু স্টাডি করে দেখলাম বিল্ডিং কোড বলে যে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছয় তলা হওয়া উচিত। দুর্ভাগ্যবশত, ঢাকা মেট্রোপলিস বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন রুলস ২০০৮ একটি সিঁড়ি এবং প্রস্থানসহ ১০তলা আবাসিক ভবনের অনুমতি দেয়।  ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেছেন, তারা সড়কে থাকা সব ভবন মালিককে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়বার অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে চিঠি দিলেও কেউ তা মানেনি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী এস এম রেজাউল করিম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ঢাকার প্রায় ৬৬ শতাংশ ভবন বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করছে। সংসদে তিনি এ তথ্য জানান।  রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলছেন, প্রকৃত শতাংশ জরিপের চেয়ে বেশি। বিএনবিসি প্রণয়নের সাথে জড়িত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেছেন, যদিও অধিকাংশ ভবন মালিক বিএনবিসির নিয়মকানুন মানেন না, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্মাতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। আইন অনুযায়ী, বিল্ডারদের ফায়ার সার্ভিস সহ ১১টি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়, তবে বেশিরভাগই তা করে না। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ঘুষ দিয়ে এগিয়ে যায়। বাংলাদেশে বেশিরভাগ ভবন বিল্ডিং ও বাসাবাড়িতে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয় না। এ কারণেই অগ্নি দুর্ঘটনার সময় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে আসা যায় না। দেশের অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোন ভবন বা বাসাবাড়িতে অগ্নি দুর্ঘটনা ঠেকাতে বা এর ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে হলে ভবন নির্মাণ পর্যায় থেকেই নিতে হবে প্রস্তুতি। আমার সংক্ষিপ্ত স্টাডির মাধ্যমে উল্লেখিত প্যারাগ্রাফে যে চিত্র ফোটে উঠেছে তা হতাশাব্যঞ্জক। আগুন লাগলে সেটি ছড়িয়ে পড়া অনেকাংশেই ঠেকানো সম্ভব যদি আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যায়। কোন ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে ভবনে দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। অ্যাকটিভ সিস্টেম বা সক্রিয় ব্যবস্থা এবং অন্যটি প্যাসিভ সিস্টেম বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। অগ্নি নিরাপত্তায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাটাই সবচেয়ে জরুরী। এটা বাড়ি নির্মাণের সময় মূল নকশার সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে তা নিশ্চিত করতে হবে। যদি কোন ভবনে আগুন লাগে তাহলে সেক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার একটা উপায় হচ্ছে ফায়ার এবং স্মোক অ্যালার্ম সিস্টেম বসানো এবং সেটি ঠিক মতো কাজ করে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করা। অ্যালার্ম সিস্টেম কাজ করলে কোন এক জায়গায় আগুন লাগলে পুরো ভবনের বাসিন্দারাই আগুন সম্পর্কে জানতে পারে এবং দ্রুত তারা ভবন খালি করে নিচে নেমে আসতে পারে। এতে করে প্রাণহানি ব্যাপকভাবে কমানো সম্ভব। জরুরি বহির্গমন পথ নিশ্চিত করা ও ব্যবহার, ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখা ও ব্যবহার করা, কোন একটি ভবনে আগুন লাগার পর সেটি ছড়িয়ে পড়তে কিছুটা হলেও সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে যদি অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা দিয়ে সেটি নিভিয়ে ফেলা যায় তাহলে বড় ধরণের দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। আগুন দ্বারা সৃষ্ট দুর্ঘটনার সঙ্গে গত ২০ বছর ধরে কর্মক্ষেত্রে আমি পরিচিত। বিষয়টি আমার কাজের অংশ। প্রতিদিনই কর্তব্যরত আমাকে লন্ডন ফায়ার বিগ্রেড (LFB) অফিসারদের সঙ্গে কাজ করতে হয় যখন কোনো আগুন দুর্ঘটনার আলামত আমার কর্ম পরিমণ্ডলে সৃষ্ট হয়। আমাকে তৈরি থাকতে হয় তা মোকাবিলা করার জন্য। লন্ডনে আমি যে হাসপাতালে কাজ করি সেখানে প্রায়ই সৃষ্ট হয় ফায়ার ইন্সিডেন্ট। আমাদেরকে সমানই act করতে হয় যতক্ষণ না পর্যন্ত লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড অফিসার দ্বারা নিশ্চিত এটি সত্য বা মিথ্যা ফায়ার এলার্ম। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। লন্ডনের সঙ্গে বাংলাদেশকে তুলনা করা ঠিক হবে না। কিন্তু অ্যাকশন একি হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। দুর্ভাগ্যক্রমে যা বাংলাদেশে অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। আমাদের মনে রাখতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত আগুন আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে ততক্ষণ তা আমাদের বন্ধু। আবার একটু অবহেলার কারণে তা আবার শত্রু হতে বিন্দুমাত্র দেরি করে না। সতর্কতার অভাবে মুহূর্তেই অগ্নিকাণ্ড ভস্মীভূত করতে পারে আপনার প্রিয় সাজানো সংসার বসতবাড়ি অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠাকে। বেইলি রোডের যে বহুতল ভবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা আমাদের জন্য একটা এক্সাম্পল। এমন পরিস্থিতিতে আপনাকে অবশ্যই তিনটি প্রধান বিষয় মাথায় রাখতে হবে- প্রথমত : অগ্নিকাণ্ডের কারণ দ্বিতীয়ত : এ থেকে সতর্ক থাকার নিয়ম কানুন তৃতীয়ত : অগ্নিকাণ্ডের পর করণীয়। সচেতনতামূলক আলোচনা আমাকে শেষ করতে হবে। লম্বা লেখা পাঠকের জন্য অনেকটা বিরক্তির কারণ। আমরা খন্দকার মোস্তাক এবং তিশাকে নিয়ে ব্যস্ত। জানার আগ্রহ আমাদের একেবারে নেই। আপনাদের ধৈর্যচ্যুতির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। যা বলে লেখা শেষ করতে চাই- তদন্ত কমিটি গঠন হবে, রিপোর্ট দিবে, কোন বিচার হবে না এই ট্রেডিশন থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইন না মেনে যারা বিল্ডিং বানানোর অনুমতি দিয়েছে তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হউক। বিল্ডিং মালিক রেস্টুরেন্টে যারা লাইসেন্স ইস্যু করে, খাদ্য মান নিয়ন্ত্রণ BSTI রাজউক কেউ দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। এই হৃদয় বিদারক দুর্ঘটনার জন্য দায়ি সবাইকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি।  লেখক : জার্নালিস্ট, ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) লন্ডন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফায়ার ইন্সিডেন্ট টীম
০৪ মার্চ ২০২৪, ১৯:৫৩

বেইলি রোড ট্র্যাজেডি : কাচ্চি ভাইয়ের ম্যানেজারসহ ৪ জন কারাগারে
রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় করা মামলায় কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জেইন উদ্দিন জিসানসহ চারজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (৪ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হক এ আদেশ দেন। কারাগারে যাওয়া অন্য তিনজন হলেন, আগুন লাগা ভবন ‘গ্রিন কোজি কটেজ’র ম্যানেজার হামিমুল হক বিপুল এবং চা চুমুক রেস্টুরেন্টের দুই মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান রিমন। এর আগে, দুদিনের রিমান্ড শেষে আজ (সোমবার) তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাদের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাদের জামিন শুনানির জন্য মঙ্গলবার (৫ মার্চ) দিন ধার্য করেন। উল্লেখ্য, রাজধানীর বেইলি রোডের ওই ভবনে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে আগুন লাগে। এতে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ৮ জন শিশু। এ ঘটনায় ১ মার্চ অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করেন।
০৪ মার্চ ২০২৪, ১৮:৪২

রাজধানীর অর্ধশত রেস্তোরাঁয় অভিযান, আটক ৩৫
রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, মিরপুর, বসুন্ধরা ও উত্তরার প্রায় অর্ধশত রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। অভিযানে এসব রেস্তোরাঁ–ভবনে জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে কি না তা ঘুরে দেখেছে তারা। এ সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ভয়াবহ অনিয়ম নজরে আসায় কয়েকটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক ও কর্মীসহ অন্তত ৩৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার (৩ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব খাবারের দোকানে অভিযান চালানো হয়। পুলিশ বলছে, নগরবাসীর নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে এসব রেস্তোরাঁ–ভবনে জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে কি না, তা দেখতেই এই অভিযান চালিয়েছেন তারা। এ সময় জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি না থাকা, সিঁড়ি আটকে রান্নাঘর বসানো ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন দোকানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, রোববার রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপকও রয়েছেন। এছাড়া যেসব রেস্তোরাঁয় ছোটখাট অনিয়ম পাওয়া গেছে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা রেখে সতর্ক করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ধরা পড়েছে ধানমন্ডি এলাকায়। রোববার রাতে এখানকার ১৯টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, অভিযানকালে কয়েকটি খাবারের দোকানের ম্যানেজারসহ ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া কয়েকজনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর গুলশান এলাকায় ১০টির মতো খাবারের দোকানে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এ ব্যাপারে গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা দেখার চেষ্টা করেছি, খাবারের দোকান থাকা ভবনের জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি রয়েছে কি না। সিঁড়িতে বিপজ্জনক কোনও কিছু রাখা হয়েছে কি না, সেটাও দেখছি। দু–একটি ছাড়া সব কটির পরিবেশ সুন্দর ছিল। তাদের ব্যবস্থাপনা দেখে আমরা সন্তুষ্ট।’ উত্তরা এলাকার অন্তত ২০টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করার কথা জানিয়েছেন উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক পার্থ প্রতীম। নগরবাসীর নিরাপত্তা রক্ষায় তাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া বসুন্ধরা এলাকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা করেছে ভাটারা থানা পুলিশ। এ বিষয়ে ভাটারা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, অভিযানে খোঁজার চেষ্টা করেছি রেস্টুরেন্টে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে কি না এবং যথাযথ অনুমতি আছে কি না। এর মধ্যে ফুটপাত দখল করে বিভিন্নভাবে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করার দায়ে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে ফুটপাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খাবারের দোকানগুলোতে জলন্ত চুলা ও গ্যাস সিলিন্ডার উচ্ছেদ করে পুলিশ। এসময় আটক করা হয় ৮ জনকে।  নিউমার্কেট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ফুটপাত, মার্কেটের রাস্তা কিংবা সরুপথে অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে যারা বিভিন্ন ভাজাপোড়া তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। কেননা এই এলাকাটি অত্যন্ত জনবহুল এবং জনগুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন কাজে আসেন। তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আইন মোতাবেক আমরা এখানে কাজ করছি। অভিযানে মানুষের চলাচলের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে এমন ৮ জনকে আমরা আটক করেছি এবং সড়কের মালামাল অপসারণ করেছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। গত বৃহস্প‌তিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১১ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এখনও। তবে তারা কেউই শঙ্কামুক্ত নন। আর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে। গ্রিন কোজি কটেজ নামে ৭ তলা ওই ভবনের একটি তলা ছাড়া বাকি সবকটি তলায় ছিল রেস্তোরাঁ। একে ভবনটিতে ছিল না জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি, তার উপর ভবনের মূল সিঁড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা ছিল গ্যাসের সিলিন্ডার। ফলে আগুন লাগার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভয়াবহ আকার ধারণ করে তা। আর মর্মান্তিক এক ঘটনার সাক্ষী হয় দেশবাসী।   এ ঘটনার পরই রেস্তোরাঁ ও ভবনে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি আবার সামনে আসে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে অভিযানে নেমেছে পুলিশ।  
০৪ মার্চ ২০২৪, ০৯:১৭

প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে আকুতি জানালেন সেই বৃষ্টির মা
বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুনের মা বিউটি খাতুন প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার মেয়ের মরদেহ দাবি করেছেন।  বৃষ্টির মা বিউটি খাতুন বলেন, তার পেটেই জন্ম হয়েছে বৃষ্টির। ঢাকায় গিয়ে সে কেন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী হয়েছে সেটা জানেন না তারা। তার কলিজার টুকরার মরদেহটুকু চান তারা। বাড়িতেই তার দাফন কাফন করতে চান। জানা যায়, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রামে জন্ম বৃষ্টি খাতুনের। খোকসা উপজেলার বনগ্রামের শাবলুর আলম সবুজের ৩ মেয়ের মধ্যে সবার বড় বৃষ্টি ওরফে অভিশ্রুতি। মেজো বোন ঝর্ণা রাজবাড়ি কলেজে পড়েন। আর ছোট বোন বর্ষাকে নিয়ে মা বিউটি খাতুন থাকেন গ্রামের বাড়িতে। ২০১৮ সালে কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে ভর্তি হন ঢাকার ইডেন কলেজে। কুষ্টিয়ায় বেড়ে ওঠা বৃষ্টি বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি করতেন সাংবাদিকতা। দেখতেন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে সেই স্বপ্ন থামিয়ে দিলো বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। এলাকাবাসিরা বলছেন, মারা যাওয়া বৃষ্টি ঢাকায় কিভাবে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী হলেন তাও তাদের অজানা। তবে বৃষ্টি ফেসবুকে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে পরিচিত। কিছু বন্ধু বান্ধবীর কাছেও সে এই নামে পরিচিত। তাই মৃত্যুর পরে সে মুসলিম না কি হিন্দু তা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ফলে মরদেহ হস্তান্তরে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। নিথর মরদেহটি পড়ে আছে এখনো হাসপাতালের হীম ঘরে।  ঢাকার রমনা কালীমন্দিরের সভাপতি জানান, অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ৮ থেকে ৯ মাস ধরে মন্দিরে যাতায়াত করতেন এবং পূজা করতেন। সে সূত্রেই তার সঙ্গে পরিচয়। অভিশ্রুতি শাস্ত্রী জানিয়েছিলেন, তার মা-বাবা বেনারসে থাকতেন। তারা মারা যাওয়ায় দাদুর হাত ধরে ঘটনাচক্রে তিনি কুষ্টিয়ায় এসেছিলেন ছোটবেলায়। অভিশ্রুতির দাদু মারা গেলে একটি পরিবার তাকে দত্তক নিয়েছিল। তবে এ পরিবার মুসলিম না হিন্দু ছিল, তা তিনি বলেননি। তাই অধিকতর তদন্ত করে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল পরিচয় সামনে আনা জরুরি।  মেঝ বোন ঝন্না ও ছোট বোন বর্ষা এ বিষয়ে বলেন, পরিচয় নিয়ে জটিলতা কেনো হবে। কোনো হিন্দু পরিবারের মেয়েকে মুসলিম পরিবারে দত্তক দেওয়া হয় না। এটা নিছক গল্প। বৃষ্টি কেন নিজেকে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী পরিচয় দিত সেটা তারা জানেন না। বৃষ্টির এখানেই জন্ম, এখানেই লেখাপড়া, আমাদের সঙ্গেই বেড়ে ওঠা। এলাকাবাসী সব জানেন। এদিকে, অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টির গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসাতে চলছে শোকের মাতম। শেষবার এক নজর দেখার অপেক্ষায় পরিবার পরিজন।পরিচয় নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে এসব নিয়ে অজানার মধ্যে এলাকাবাসি। তাদের দাবি সব প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত মৃতদেহ পরিবারের কাছে দেওয়া হোক। 
০৩ মার্চ ২০২৪, ১৪:৪১

ব্যক্তিগত লোভের আগুনে পুড়েছে বেইলি রোড
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো হাহাকার। বেইলি রোডের আগুনে পুড়ে ৪৬ জনের মৃত্যুতে প্রায় সবাই শোকে মুহ্যমান, প্রতিবাদে উত্তাল। কিন্তু কেন এই অনিয়ম? কেন বিস্ফোরণ? কেন কর্তৃপক্ষ সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার রাখলো? কেন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে হোটেল বানানো হলো? এরকম হাজারো প্রশ্ন আজ মানুষের সামনে৷ সবাই খুব অবাক হওয়ার প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। যেন এরকম ঘটনা জীবনে প্রথম দেখলেন। আমার মনে হচ্ছে, সবাই অবাক হয়ে দায়িত্ব পালন শেষ করছেন।  অবশ্য অবাক আমিও। তবে কারণ ভিন্ন। যদি সব কিছু মিলিয়ে বলি, তাহলে বলতে হবে মানুষের এত অবাক হওয়া দেখেই আমি অবাক। এখন অবাক বন্ধুরা যদি বলেন, আমার অবাক হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। আমি খুব যে প্রতিবাদ করবো তা নয়। কারণ কোন অনিয়ম আজকাল আর আমাকে অবাক করতে পারে না। কেউ একজন খুব হন্তদন্ত হয়ে এসে বললেন, আগুনে পুড়ে...  জন মারা গেছেন। অথবা সড়ক দুর্ঘটনায়...  জন নিহত। আমার প্রতিক্রিয়া হয় " ও আচ্ছা " বড় জোর খোঁজ নেই নিহতের তালিকায় পরিচিত কেউ আছে কী না। থাকলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি, এই তো..  "মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই" এই বিষয়টাতো অনেক আগেই নিশ্চিত হয়েছে। কেন নেই এনিয়ে হাজারটা বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু নেই যে এনিয়ে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। দিন দিন অনিশ্চিত হচ্ছে জীবন। রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছেন, আপনার মাথায় ইট পড়তে পারে। রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে বসে চা পান করছেন, আপনার ওপর একটি চলন্ত ট্রাক এসে আছড়ে পড়তে পারে। আপনি রিকশার করে বাসায় ফিরছেন, মুহূর্তে রাশি রাশি আগুন আপনাকে গ্রাস করতে পারে। কত কী যে হতে পারে সে তালিকা অনেক দীর্ঘ।  আজকাল প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর কারণ বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায় এর বেশিরভাগই এখন আর শুধু  প্রাকৃতিক নেই। প্রায় প্রত্যেকটা দুর্যোগের পেছনে মনুষ্য প্রভাবকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বেইলি রোডের সাম্প্রতিক আগুনসহ আমার দেখা অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, আমাদের দৈনন্দিন যত দুর্ঘটনা এর বেশিরভাগের পেছনে মানুষের হাত রয়েছে। মানুষের জীবনের ঝুঁকি  মানুষই ডেকে আনছে।  ডেকে আনছে না বলে বলা ভাল মানুষই মানুষ মারছে। আবার যদি বিপরীত দিক থেকে সত্যের কাছে আসি, তাহলে বলতে হবে মানুষ নিজেই নিজের প্রাণ রক্ষা করছে না। শুধু প্রাণই বা বলি কেন?  মানুষই ধ্বংস করছে, নিজের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতির পুরোটাই।  পাঠক আমার কথায় আরেক দফা অবাক হলেন?  আচ্ছা হোন আপাতত। বিস্তারিত ব্যাখ্যায় একটু পরে আসছি। তার আগে ভাবুনতো এই বেইলি রোডের ভবনে কেন সরু সিঁড়ি? কেন সিঁড়ি জুড়ে সিলিন্ডার?  বারবার নোটিশ দেয়ার পরেও কেন ভবন নিরাপদ হলো না? তারা যে কথা শুনলো না, সেটা কেউ কেন দেখলো না? কেন ভবনে আগুন লাগলে বের হওয়ার জরুরি পথ নেই?   প্রতিটি প্রশ্নের ভিন্ন ভিন্ন উত্তর আছে। আমি কিন্ত সবগুলো বিশৃঙ্খলার একটি কারণ খুঁজে পাই। যে কারণটি না ঘটলে পুরো দুর্ঘটনাটিই হতো না। সেটি হচ্ছে মানুষের লোভ। অর্থাৎ স্বাভাবিক যে পাওনা তার চেয়ে জোর করে বেশি আদায়ের ইচ্ছা।  আমার কথা মিলিয়ে নিন। ভবন মালিক ছোট জায়গায় বেশি প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ভাড়া আদায়ের লোভ করেছে৷ ছোট ঘরে বেশি মানুষ ডেকে লাভ করার লোভ করেছে রেস্ট্রুরেন্ট মালিক। তাকে দেয়া নোটিশ অবহেলা করার শাস্তি না দিয়ে ব্যবসায়ী এবং ভবন মালিকের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার লোভ করেছে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা। মোটামুটি পুরো দুঘর্টনাটাই একটা লোভ বাস্তবায়নের  সমন্বয়। বেইলি রোডের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। মানুষের লোভ চর্চার যে গতি, আমারতো মনে হয় সেই তুলনায় দুর্ঘটনা অনেক কম। মানুষই বিপদজনক করে রেখেছে তার চারপাশ। প্রতিদিন এরকম দু-একটি  দুর্ঘটনা হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।  বেইলি রোডের ঘটনাটব আসলে দীর্ঘদিনের অনিয়ম প্রবণ বাংলাদেশ একটি খণ্ড চিত্র মাত্র। এই দায় সরকার চাপানো সহজ হয়তো। সেই সহজ কাজটি আমরা করছিও ইনিয়ে বিনিয়ে। কিন্তু ভাবুনতো চাইলে কী দ্রুত একটি জনগোষ্ঠীর চিন্তার ত্রুটি সারাতে পারবে কেউ? কীভাবে মানুষ সভ্য চিন্তা করতে পারবে সেটা নিয় আলোচনা হতে পারে। কিন্ত এত মরদেহ সামনে নিয়ে সেই গুরুগম্ভীর আলোচনায় যাওয়াটা কতটুকু সমীচিন সেটাও ভাববার বিষয়। বিপদ আরও আছে, ধরুণ আপনি মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবতে চান "কেন বেইলি রোডের আগুন"?  দেখবেন মাথাঠাণ্ডার আগেই কাছাকাছি আরেকটি একই রকম ঘটনা এসে হাজির।  অনেকের মনে হতে পারে আমি বুঝি ধান ভানতে শিবের গীত ধরেছি। বিষয়টি মোটেও তা নয়। চিন্তা করে দেখুনতো আমারা কী লোভের চর্চা করতে গিয়ে আমাদের মানবিক বোধ  হারিয়ে ফেলছি না? কারণ আমাদের তো লক্ষ্য যে কোন দামে পকেটে প্রচুর টাকা আসতে হবে। তাই কেউ ব্যবসা করে আবার কেউ চাকরির ছল করে অন্যের অর্থ ছিনিয়ে নিচ্ছি। আমরা যারা ছিনতাই করছি কিম্বা ছিনতাই হচ্ছি প্রত্যেকেই বিষয়গুলো জানি। তার চেয়ে বড় কথা আমরা প্রায় সবাই কোন না ভাবে লোভীর তালিকায় ঢুকে পড়ছি। এটা ব্যক্তির মনস্তত্ত্ব। এখানে মানুষ নিজেই নিজেকে না আটকালে কোন আইন বা কর্তৃপক্ষ দিয়ে তার চিন্তা বদলে দেয়া প্রায অসম্ভব।  এই লোভই যত অশান্তির গোড়া। আগুন ছাড়া আর যত দুর্ঘটনা আছে, এর কোনটিই আগুনের অশান্তির চেয়ে কম নয়। কিন্ত আমরা ক্রমাগত বিচার বিবেচনা না করে শুধু নিজের চাহিদা বাড়াচ্ছি। বিষয়টা অনেকটা এরকম যে, সব আমাকে পেতে হবে। আমি যোগ্য কী যোগ্য না সেটা ভাবার সময় নেই। সামনে শুধু দৌড়। সব কিছুতেই অশ্লীল অসম প্রতিযোগিতা। তা সে রাস্তায় পরিবহন চালানো হোক, কিম্বা বই মেলায় বই প্রকাশ করা হোক। সবকিছু আমার হতে হবে। তা সে তদবির করে হোক, সোস্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে হোক, কিম্বা গ্রেনেড ফাটিয়ে হোক। মানুষ বা প্রকৃতি বাঁচবে না মরবে, কী হবে ভবিষ্যতে তা ভাবার সময় নেই।  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং নিয়মিত গণমাধ্যমে সবখানেই বেইলি রোডের আগুন এখনও সরব। নানা তথ্য আসছে। যে কোন দুর্ঘটনার পর এমনই আসে। এরপর তদন্ত কমিটি হয়। তারপর আবার কাছাকাছি রকম আরেকটি ঘটনা চলে আসে। আমরা সবাই সেটা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ি। বেইলি রোডের ক্ষেত্রেও তাই হবে। দুর্ঘটনায় পড়া ভবনের মালিক  পরে আরও ভবন বানাবেন, রেস্টুরেন্ট বানাবেন৷ অতপর আবারও একটি আগুন লাগবে। এভাবেই চলতে থাকবে৷ আমরাও অপেক্ষা করবো আরেক বেইলি রোড অথবা চুড়িহাট্টার৷ কিন্তু লোভ কমাবো না কিম্বা লোভীদের থেকে সতর্ক হবো না।  লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
০৩ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৬
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়