• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo
ফ্ল্যাট কেনায় প্রভাবশালীদের ভয়াবহ কর ফাঁকি
রাজধানীর ধানমন্ডি, গুলশান ও বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট কেনায় ভয়াবহ কর ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। তালিকায় রয়েছেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, আইনজীবী ও খেলোয়াড়। তাদের কারণে সরকার অর্ধশত কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। সম্প্রতি অনুসন্ধানে সিআইসি দেখতে পায়, ঢাকার অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারা ও বনানীতে জমি, ফ্ল্যাট বা ফ্লোর স্পেসের মূল্য আকাশছোঁয়া হলেও ডেভেলপার কোম্পানি ও ক্রেতা যোগসাজশ করে কম দাম দেখাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন পেশাজীবী, ব্যবসায়ী শ্রেণির করদাতার বাণিজ্যিক ও আবাসিক স্পেস ক্রয়ে অর্ধশত কোটি টাকার কর ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। উত্তর গুলশানে দক্ষিণমুখী লেকের পাড়ে অবস্থিত একটি বহুতল ভবনে একজন চিকিৎসক ফ্ল্যাট কেনেন। ডাক্তারি পেশা থেকে অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করার জন্য ৪ হাজার ৩৭৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ১৩ কোটি টাকায় কিনলেও সাড়ে ৪ কোটি টাকা মূল্যে রেজিস্ট্রেশন নেন। বাকি সাড়ে ৮ কোটি টাকার সম্পদ খুব সহজেই বৈধ করে নিয়েছেন। জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন ক্রিকেটার আবাসিক ভবনটিতে ১২ কোটি ৪০ লাখ টাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করলেও তিনি তা আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেননি। আবার একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ৯ হাজার ৭০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ৪৯ কোটি টাকায় কিনলেও ১০ কোটি টাকায় রেজিস্ট্রেশন নিয়েছেন। এতে ওই ব্যক্তি ৩৯ কোটি টাকার সম্পদের উৎসের ওপর কর ফাঁকি দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী ফ্ল্যাট ক্রয়ে প্রায় ১৩ কোটি টাকা পরিশোধ করলেও এখনো আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেননি। অন্যদিকে একজন ব্যবসায়ী গুলশান ৫০ নম্বর রোডের বহুতল ভবনে প্রায় ২৮ কোটি টাকার স্পেস ক্রয় করলেও আয়কর রিটার্নে তা প্রদর্শন করেননি। অন্যদিকে বনানী-তেজগাঁও লিংক রোডের একটি বাণিজ্যিক ভবনে একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানি স্পেস ক্রয়ে ৭৩ কোটি টাকা পরিশোধ করলেও অডিট রিপোর্টে প্রদর্শন করেছেন মাত্র ৫৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে পুরো বিনিয়োগের প্রায় ৭২ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়ে বৈধ করা হয়েছে। একই ভবনে আরেকটি কোম্পানি স্পেস কেনার ক্ষেত্রে খরচ করেছে ১৩ কোটি টাকা; কিন্তু অডিট রিপোর্টে তা প্রদর্শন করেনি। এমন রাজস্ব ফাঁকির আরও ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইসির এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে যেসব ব্যক্তি ও কোম্পানি করদাতার আয়কর নথিতে তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের তলব করে বিনিয়োগের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এ ছাড়া গুলশান, বনানী এলাকায় কর ফাঁকির আরও বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করতে একটি টিম কাজ করছে। এদিকে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সহজ পথে পরিণত হয়েছে আবাসন খাত। এর কারণ হলো- স্বাভাবিক নিয়মে যেখানে একজন করদাতাকে নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে টাকা বৈধ করতে হয়, সেখানে আবাসন খাতে ‘বিশেষ’ ব্যবস্থা রাখায় ২-৪ শতাংশ জরিমানা দিয়েই টাকা বৈধ করা যাচ্ছে। একটি গোষ্ঠী সেই সুযোগটাই নিয়ে তাদের কালো টাকা সাদা করছেন। এর ফলে সরকার অনেক কম কর আদায় করতে পারছেন। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, এ ধরনের প্রভিশন চিরস্থায়ী ভিত্তিতে রাখা ঠিক নয়। অর্থনীতির প্রয়োজনে সাময়িকভাবে এ ধরনের সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলেও আবাসন খাত থেকে বেশি রাজস্ব আসছে না। তাই এ বিধান রাখার যৌক্তিকতা নেই। এতে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন এবং অপ্রদর্শিত অর্থ উপার্জনের বা অর্থ লুকানোর প্রবণতা তৈরি হয়।
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:১৮
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়