‘ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রে আটকে গেছে প্রান্তিক জীবন’
দেশে ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থায় প্রান্তিক মানুষের জীবনমানে কোনো উন্নয়ন আসেনি। দারিদ্র থেকে মেলেনি মুক্তিও। চড়া সুদে ঋণ নিতে নারীদের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো ব্যক্তিরা নিজেদেরকে বিশ্ব দরবারে চেনাতে এ ক্ষুদ্র ঋণকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে পশ্চিমা বিশ্বকে সুযোগ করে দিচ্ছে।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে এডিটরস গিল্ডের ‘ক্ষুদ্র ঋণ বির্তক’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এমনটাই দাবি করেছেন বিশিষ্টজনরা। গোলটেবিল আলোচনা সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু।
এ সময় বক্তারা বলেন, দেশের টেকসই উন্নয়নে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গড়ে ১০ শতাংশ মানুষও তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনি বরং দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রে আটকে গেছে। গোষ্ঠীভিত্তিক ঋণ জামানত, চড়া সুদ, স্বল্প অর্থ এসব দিয়ে এদেশের মানুষকে মানসিকভাবে আরও বেশি ক্ষুদ্র করে তুলছে।
বক্তাদের পরামর্শ, ক্ষুদ্র ঋণে আদায় মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত নয় বরং এ ব্যবস্থাকে আরও ঢেলে সাজানো উচিত। এটিকে টাকা ছড়ানোর কোনো মডেল না বানিয়ে বরং স্থিতিশীল প্রকল্প বানানো উচিত।
অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জমান বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের মডেল কতোটা কাজ করে? সুদের হার, ঋণ দিয়ে পরের সপ্তাহে কিস্তির চাপ। সুদের হার চক্রাকারে বাড়তে থাকে। ৯০ দশকে এটি রীতিমতো ব্যবসা হয়ে গেল।
তিনি বলেন, গ্রামীন ব্যাংকের সুদ হার ২০-২২ শতাংশের কম নয়, অনেক জায়গায় ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ। এসব কখনো সামনে আনা হয় না, মানুষ জানে না। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হয় না, শুধু প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমাজবিজ্ঞানী সাদেকা হালিম বলেন, ক্ষুদ্র ঋণে নারীদের কেন টার্গেট করা হয়? পুরুষরা ঋণের অর্থ নিলে সেটি নিয়ে চলে যায়, কিন্তু নারীরা নিলে তা কাজে লাগায়। নারী পালাতে পারবে না, নারীদের টার্গেট করা সহজ। নারীরা ঋণ নিলে ক্ষমতায়ন হয়েছে এটি একেবারে সত্য নয়। এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীরা ঋণ নেওয়ার ঢাল হয়েছে। নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। একেকজন চারটা বিয়ে করে, একজনকে ব্র্যাক, একজনকে আশা আরেকজনকে অন্যখানে পাঠায়। তবে এখন সে অবস্থা কিছুটা পরিবর্তন হলেও মোটাদাগে যায়নি।
তিনি বলেন, সরকারের অনেক প্রকল্প আছে, সেগুলো কেন জনপ্রিয় হতে পারল না সেটি নিয়ে প্রশ্ন করা উচিত। কেন রুট লেভেলে গ্রামীন ব্যাংকের মতো এনজিওগুলো সফলতা পেলো। ক্ষুদ্র ঋণ সামাজিক সম্পর্ক ও পরিবেশ নষ্ট করছে।
গোলটেবিল আলোচনার সঞ্চালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ বিতর্ক বিষয়টি এমন যে, এটি অনেক আগে থেকে প্রচলন আছে। রবীন্দ্রনাথের সময় থেকে যেটি শুরু। ড. ইউনূস এটি বাংলাদেশে প্রচলন করেছে। এটি নিয়ে বির্তক আছে, আসলে এটি দারিদ্রতা ঠিক কতোটা কমাতে পেরেছে? ক্ষুদ্র ঋণকে কি পশ্চিমারা ব্যবহার করছে নাকি নারী ক্ষমতায়নের নামে পণ্য হিসাবে ব্যবহার করছেন সেটি নিয়েই আলোচনা।
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৩৪