• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo
পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচন : জনপ্রিয়তায় এগিয়ে ডা. শফিক
পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে পুরো পৌর শহরে বইছে ভোটের হাওয়া। হোটেল, রেস্তোরাঁ, হাট-বাজার এবং চায়ের দোকানগুলোতে বসছে নির্বাচনী আড্ডা। সেখানে প্রতিনিয়ত চলছে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা এবং ভোটের হিসাব-নিকাশ।   এ দিকে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীরা কাক ডাকা ভোর থেকে রাত অবধি ছুটছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি এবং চাচ্ছেন ভোট ও দোয়া। কেউ কেউ আবার ভোটারদের মন পেতে এবং আকৃষ্ট করতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও।  তবে এ পৌর নির্বাচনে মোট পাঁচজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক মেয়র ডা. শফিকুল ইসলামের প্রচার-প্রচারণায় বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হবে বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ এবং সাবেক মেয়র ডা. শফিকুল ইসলামের মধ্যেই।  সরেজমিনে পৌর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জনপ্রিয়তা বাড়ছে সাবেক মেয়র ডা. শফিকুল ইসলামের। পরিবর্তনের হাওয়ায় এবার পৌরবাসীও ডা. শফিককে মেয়র হিসেবে চাচ্ছেন।  পৌরবাসীর কাছে ডা. শফিক ‘গরিবের ডাক্তার’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। বিগত ২ দশক ধরে এ শহরের গরিব-অসহায় এবং দুস্থ-ছিন্নমূল মানুষজনকে বিনা টাকায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে তিনি এ পৌরসভার মানুষের কাছে নিজের ক্লিন ইমেজ সৃষ্টি করতে পেরেছেন। যাদের ওষুধ ক্রয় করার সামর্থ্য ও সক্ষমতা ছিল না তাদেরকে ওষুধও কিনে দিয়েছেন তিনি। এ কারণে পৌর শহরবাসীর কাছে ডা. শফিক একজন ‘মানবতার ডাক্তার’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। তাই এবারের পৌর নির্বাচনে মানবতার ডা. শফিককে মেয়র হিসেবে দেখতে চান পৌরবাসী।         জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনে সব ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৪১ জন ও ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  এদের মধ্যে মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী হলেন বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ (জগ প্রতীক), সাবেক মেয়র ডা. মো. শফিকুল ইসলাম (মোবাইল প্রতীক), মো. এনায়েত হোসেন (নারিকেল গাছ প্রতীক), আবুল কালাম আজাদ (রেল গাড়ি) ও মো. নাসির উদ্দিন খান (কম্পিউটার প্রতীক)। এবারের পৌর নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৫০ হাজার ৬৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩ হাজার ৯৪৭ এবং নারী ভোটার ২৬ হাজার ৭৫০ জন। এ ছাড়া হিজড়া ভোটার আছেন দুজন। বিগত ২০১৯ সালের নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনে ৫ হাজার ৫৫৫ জন ভোটার বেশি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৪৫ হাজার ১৪৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৮২২ জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৩২২ জন।  পৌর শহরের ৬নং ওয়ার্ডের স্বনির্ভর রোড এলাকার ব্যবসায়ী মো. আবুল কালাম (৫০) বলেন, ‘মোরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সামান্য আয়-রোজকার করে পরিবার-পরিজন নিয়ে নদীর পাড়ে বসবাস করতাম। কিন্তু আমাদেরকে নদীর পাড় থেকে উচ্ছেদ করে দেয় এবং ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। অথচ শফিক ডাক্তার যখন মেয়র ছিলেন তখন আমাদের কোনো ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলেননি এবং কাউকে উচ্ছেদও করেননি। বরং আমরা তার (ডা. শফিক) কাছ থেকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা পেয়েছি। তাই মোরা শফিক ডাক্তারকেই ভোট দিমু।’      পৌর শহরের ৫নং ওয়ার্ডের শিশুপার্ক এলাকার মোসা. নাজমা আক্তার (৪৫) বলেন, ‘গেলো ৫ বছরে যা পাইছি হ্যাতে কইজ্যা ফুডা হইয়্যা গ্যাছে। মাথায় চাউলের বস্তা দিয়া আবার নামাইয়া লইয়া গ্যাছেন। হেই কথা মোরা ভুইল্যা যাই নাই।’  শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. সাইদুর রহমান গাজী (৫৭) বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে কিছু সংখ্যক মানুষ টাকার মালিক হয়েছেন। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হয়নি। হয়নি পৌর শহরের কোনো উন্নয়ন। শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সড়কে ফোর লেন করে বাহবা নিতে চাচ্ছেন বর্তমান মেয়র। অথচ পুরো পৌরবাসী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।’  পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে মেয়র প্রার্থী মো. নাসির উদ্দিন খান (কম্পিউটার প্রতীক) বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ৫০ বছর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছি। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে পৌর কর, পানির বিল কমিয়ে দেওয়া হবে এবং পৌর শহরের মধ্যে নদী পারাপারের খেয়া ভাড়া ১০ টাকার স্থলে ৫ টাকা করা হবে। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য চিকিৎসা সেবা ফ্রি এবং পঞ্চাশোর্ধ রিকশা, অটোবাইক ও ভ্যানচালকেদের শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। ওইসব শ্রমিকদের সপ্তাহে একদিনের খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য কাজ করবো।’   সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম (মোবাইল প্রতীক) বলেন, ‘আমি আট বছর মেয়র ছিলাম, তখন কোনো ব্যবসায়ীকে হয়রানি করিনি। আমি যদি আবার মেয়র নির্বাচিত হতে পারি তাহলে শহরের ব্যবসায়ীরা সবাই নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারবেন।’  তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন মেয়র ছিলাম তথন এ পৌরসভায় কম-বেশি বরাদ্দ পেয়েছি। সেই বরাদ্দকৃত অর্থেই এখন কাজগুলো হচ্ছে। এখানে বর্তমান মেয়রের কোনো কৃতিত্ব নেই। আমি সেবক হয়ে পৌরবাসীর পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি এবং জীবনে যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিনই সেবক হয়েই আপদে-বিপদে পৌরবাসীর পাশে থাকবো।’  বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ (জগ প্রতীক) বলেন, ‘আমি বিগত পাঁচ বছর পৌর শহরের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। কতটুকু সফল হয়েছি তার বিচারের ভার পৌরবাসীর ওপর। যদি ভালো কাজ করে থাকি পৌরবাসী আমাকে আবার নির্বাচিত করবেন। তবে পৌরবাসী যাকেই মেয়র নির্বাচিত করবেন আমি তাকেই স্বাগত জানাবো এবং পৌর শহর উন্নয়নে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।’ 
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:০৭
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়