• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo
‌‘সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে অপরাধ করা ব্যক্তিদের ছাড় নয়’
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে অপরাধ করা ব্যক্তি যতই প্রভাবশালী হোক কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। সোমবার (১১ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।  ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচন যথাযথভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন দু-একটা ঘটনা ঘটেছে। সরকার যেহেতু অপরাধের দায়ে কাউকে ছাড় দিচ্ছে না, তাই বুঝতে হবে সরকার নির্বাচনে যেকোনো অনিয়মের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে।’ তিনি বলেন, ‘ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ সারাদেশে একযোগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনগুলো মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে উল্লেখ করার বিষয় হচ্ছে, এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশে-বিদেশে অনেক অপপ্রচার হয়েছে। ভোটাদের টার্ন আউট নিয়ে অনেক অপবাদ ছড়ানো হয়েছে। কেউ কেউ বিবৃতি দিয়ে নির্বাচনের ব্যাপারে বিতর্কিত তথ্য পরিবেশন করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের প্রতি জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে— এই ধরনের অপপ্রচার যারা করে, তাদের অপপ্রচারের বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। দেশের জনগণের নির্বাচন, রাজনীতির প্রতি ক্রমেই আগ্রহ বাড়ছে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ভোটাদের টার্ন আউট প্রমাণ করে বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের ব্যাপারে আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এ দেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন ব্যবস্থা নিরাপদ। এই কথাটি আজকে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিদেশি কারও আদেশে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে না। তবে বিদেশিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে আওয়ামী লীগ।’
১১ মার্চ ২০২৪, ১৬:২৩

গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
গাজায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বন্ধের জন্য ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। পাশাপাশি ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানান তিনি। তুরস্কের পর্যটন নগরী আনতালিয়ায় স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে আনতালিয়া ডিপ্লোমেসি ফোরামে অংশগ্রহণ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাজায় যা হচ্ছে সেটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। শুধু মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ নয়, সেখানে জাতিগত নিধন চলছে। সেখানকার মৃত্যু সংখ্যা বর্তমানে ৩০ হাজারের বেশি এবং এর বেশির ভাগ নারী ও শিশু। যুদ্ধের সব ধরনের প্রথা ভঙ্গ করছে ইসরায়েল। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যুদ্ধ, গণহত্যা থামানোর জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। যুদ্ধ থামানোর জন্য আনতালিয়া ডিপ্লোমেসি ফোরাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান, ৭০ জনের বেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এখানে অংশগ্রহণ করছেন। সম্মিলিতভাবে গাজায় সহিংসতা, গণহত্যা, জাতিগত নিধন বন্ধে ইসরায়েলকে ঠেকানোর জন্য একসঙ্গে কাজ করতে পারি।
০৩ মার্চ ২০২৪, ১৮:২৬

নতুন নতুন অপরাধ দমনে পুলিশকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সমাজে নতুন নতুন অপরাধ দেখা দিচ্ছে উল্লেখ করে যথাযথভাবে সেসব অপরাধ দমনে পুলিশকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) নিজ কার্যালয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষ যত বাড়ছে, অপরাধও তত ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে। নতুন নতুন অপরাধ দেখা দিচ্ছে। সেগুলো যথাযথভাবে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের পুলিশ বাহিনী যেন প্রস্তুত থাকে। এ বিষয়ে আমরা যথেষ্ট নজর দিচ্ছি। কারণ, অপরাধের সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে মোকাবিলা করার পদ্ধতিটা যদি না চলে তাহলে কিন্তু যথাযথভাবে সেটা (মোকাবিলা) করা যায় না। তিনি বলেন, যেকোনও কর্মস্থলে নারী-পুরুষ-শিশু যারাই থাকুক, তাদের আপনজন বিবেচনা করে তাদের প্রতি আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের সেবা করবেন, এটাই সবাই চায়। পুলিশকে জনগণের বন্ধু মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনী এখন মানুষের বন্ধু হিসেবে কাজ করছে। আজকাল মানুষ আর আগের মতো ভয় না, এখন তারা আস্থা ফিরে পেয়েছে। পুলিশকে নিজের বন্ধু এবং আস্থার জায়গা হিসেবে এখন বিবেচনা করে সাধারণ মানুষ। মানুষের এই বিশ্বাস এবং আস্থাটা ধরে রাখতে হবে। পুলিশের ওপর নাশকতার প্রসঙ্গে তুলে তিনি বলেন, এই যে আগুন দেওয়া, পুলিশকে মারা, পুলিশকে আগুনের মধ্যে ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার মামলাগুলো যথাযথভাবে চলে না, দীর্ঘসূত্রিতায় আটকে যায়। আমি মনে করি, যারা এ ধরনের অপরাধ করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা এবং সাজাটা যদি দ্রুত হয়ে যায় তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের নাশকতা সৃষ্টির সাহস পাবে না। তিনি আরও বলেন, আগামীতে কেউ যেন আর এভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে না পারে, সেটা ওই রাজনীতির নামে হোক, সন্ত্রাসের নামেই হোক। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবে না আর আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটাতে পারবে না। মানুষের জানমালের ক্ষতি করতে পারবে না, জাতীয় সম্পদের ক্ষতি করতে পারবে না। এ বিষয়ে পুলিশকে অবিচল থাকতে হবে। যখনই যেভাবে দরকার, সেভাবে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে কেউ আর ওই তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের চোখে দেখে না। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে নিজের একটা স্থান করে নিতে পেরেছে। এখন সবাই বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। শেখ হাসিনা বলেন, এটাকে ধরে রেখে আমাদের সামনে এগোতে হবে। সেজন্য আমাদের যেকোনও কাজ বা প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। যেকোনও অপরাধ মোকাবিলা এবং সাজা নিশ্চিতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা সবার কর্তব্য। কাজেই সেভাবে আপনারা সবাই কাজ করে যাবেন। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা, জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন- এটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাই। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা নির্বাচনে ইশতেহার ঘোষণা দিই এবং প্রতি মেয়াদে নির্বাচনের ইশতেহার বাস্তবায়নে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিই। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে আমরা এ পর্যন্ত সরকারে আছি। একটা স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশ আমরা এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনের ওপর যে হামলা এবং গণহত্যা চলছে বাংলাদেশ তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমি প্রতিটি জায়গায় এর প্রতিবাদ করেছি। এভাবে ফিলিস্তিনি শিশু নারীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার এবং গণহত্যা, শুধু তাই না তাদের খাদ্য, চিকিৎসা, হাসপাতাল সবকিছুর ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এমনকি যেখানে ত্রাণ বিতরণ করা হয় সেখানেও আক্রমণ করছে ইসরায়েলি সেনারা। এর থেকে জঘন্য ও মানবতাবিরোধী কাজ আর হতে পারে না। এর প্রভাবটা সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে পড়ছে। আমাদের ওপরেও সেই ধাক্কাটা আসছে। যদিও আমরা এটা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি।  
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:১১

ভারতীয় রাজনীতিতে রোহিঙ্গা মানেই অপরাধ
অপরাধ জগতের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জুড়ে দেয়ার এক আশ্চর্য প্রবণতা আছে ভারতে। বাস্তবের সঙ্গে যার বিশেষ মিল নেই। ২০১৮ সাল। তখন পশ্চিমবঙ্গে একটি প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকার কর্মী হিসেবে রিপোর্টিং করি। সেপ্টেম্বর মাসে পর পর দুইটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে পাতাজোড়া রিপোর্ট বার হলো। তা দেখে সম্পাদক মহাশয়ের চক্ষু চড়কগাছ। কেন আমরা সেই খবর পাইনি, তা নিয়ে দীর্ঘ চোটপাটের পর স্থির হলো, নতুন অ্যাঙ্গেলে এই স্টোরি আমাদের ধরতে হবে। কলকাতা থেকে কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে বারুইপুর লাগোয়া হারদা গ্রামে পৌঁছানো গেল। সেখানে একটি ব্যক্তিগত জমিতে বাঁশের ঘর বেঁধেছেন সাকুল্যে ৪০ টি রোহিঙ্গা পরিবার। মূলত দিল্লি এবং জম্মু থেকে পশ্চিমবঙ্গ এসেছেন তারা কিছু কাজের খোঁজে। আর পাঁচটি উদ্বাস্তু পরিবারের মতোই দিন কাটছে তাদের। ২৫-২৬টি পরিবারের কাছে ইউএনএইচসিআর-এর রিফিউজি কার্ড ছিল। বাকিরা দরখাস্ত করেছেন। যত মানুষ সেই ক্যাম্পে ছিলেন, তার ৫০ ভাগ নারী, ১৫ ভাগ শিশু এবং বাকি পুরুষ। এর মধ্যে শয্যাশায়ী বৃদ্ধ পুরুষের সংখ্যা অন্তত ১০। অথচ জাতীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এই সব কোনো সংখ্যাতত্ত্বে না গিয়ে সরাসরি লিখে দিয়েছিল, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই রোহিঙ্গা ক্যাম্প তৈরি হওয়ার পর এলাকায় অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে। বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পার করে তারা পশ্চিমবঙ্গে ঢুকছেন এবং অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। অথচ বিএসএফ এই সাংবাদিককে অন রেকর্ড জানিয়েছিল, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই রোহিঙ্গারা অধিকাংশই ভারতের অন্য জায়গা থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছেন। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো যোগ নেই। রীতিমতো রেকর্ড খুলে বিএসএফ দেখিয়েছিল, এক বছরে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ৭০ জন রোহিঙ্গা ঢুকেছেন। তাহলে জাতীয় সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ এবং অপরাধ শব্দ দুটিকে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কেন জড়িয়ে দেওয়া হলো? কয়েক মাসের মধ্যেই তা স্পষ্ট হলো। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এসে কেন্দ্রীয় শাসকদলের নেতারা বার বার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ এবং রোহিঙ্গা শব্দ দুটিকে মিলিয়ে দিচ্ছিলেন। তার সঙ্গেই জুড়ে দেয়া হচ্ছিল অপরাধ শব্দটিকে। অর্থাৎ, বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে অপরাধ জগতের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা। এবং তারা নাকি সকলেই বাংলাভাষী! অপরাধ করতেই তারা পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে। ওই ঘটনার পর পাঁচ বছর কেটে গেছে। আবার এক লোকসভা ভোটের মুখোমুখি আমরা। এবং আবার পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে রোহিঙ্গা শব্দটি। সম্প্রতি তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তল্লাশি চালাতে যায়। শাহজাহানের অনুগামীরা তাদের উপর চড়াও হয়। মারধর করা হয় সিআরপিএফ এবং ইডি কর্মকর্তাদের। মারধর করা হয় সাংবাদিকদেরও। এরপর থেকে শাহজাহান নিরুদ্দেশ। ইডি আবার তার বাড়ি গেছে তল্লাশি করতে। পুলিশ শাহজাহানকে খুঁজছে। বলাই বাহুল্য, বাহুবলী শাহজাহান এমন কাণ্ড এর আগেও একাধিকবার ঘটিয়েছে। এর আগেও তাকে গাঢাকা দিতে হয়েছে খুনের অভিযোগে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সুন্দরবনের এক প্রান্তিক অঞ্চল সন্দেশখালি। শাহজাহানকে ওই অঞ্চলের বেতাজ বাদশাহ বলা চলে। তার গুণ্ডামির ইতিহাস কয়েক দশকের। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে শাহজাহান সেই দলের বাহুবলী হয়ে ওঠে।  শোনা যায়, সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের দিকেও তার সেফ হাউস আছে। কাঁটাতার, বিএসএফ পেরিয়ে কীভাবে সে সীমান্ত পার করে, তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলে না। রাজনীতি নিজস্ব কয়েনেজ আঁকড়ে ধরে বসে থাকে। শাহজাহান এবং রোহিঙ্গা মেলাতে পারলেই রাজনীতির কেল্লা ফতে। তাই আশ্চর্যজনকভাবে দেখা গেল ওই ঘটনার পরেই বিজেপির রাজ্য এবং কেন্দ্রের নেতারা একের পর পোস্ট করতে শুরু করলেন সমাজমাধ্যমে। সেখানে বলা হলো, শাহজাহানের দলে আছে ভয়াবহ রোহিঙ্গা অপরাধীরা। প্রশ্ন হলো, এই রোহিঙ্গাদের শাহজাহান পেলেন কোথা থেকে? রাজনীতিবিদেরাই বা জানলেন কী করে এখবর? যদি বা জানলেন, আইনানুগ ব্যবস্থা নিলেন না কেন? রোহিঙ্গা চিহ্নিত করা এবং তাকে জেলে ঢোকানো মোটেই কঠিন কাজ নয়। বাস্তবে, সন্দেশখালি অঞ্চলে কোনোদিনই রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছিল না। বারুইপুর অঞ্চলে যে ক্যাম্প ছিল, তা বহুদিন আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। ওই ক্যাম্পের অনেকেই দিল্লি লাগোয়া হরিয়ানারনু, জম্মু এবং দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানা লাগোয়া ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এই প্রতিটি ক্যাম্পই ভারতের রোহিঙ্গা ক্যাম্প হিসেবে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত। বস্তুত, ২০২১-২২ সালে ওই ক্যাম্পগুলি ঘুরে দেখার সময় বেশ কিছু পুরনো মুখের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের ক্যাম্পে যাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। ভারত সরকার কখনোই মিয়ানমার থেকে উৎখাত হওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভারতে থাকার অনুমতি দেয়নি। বাংলাদেশে যে পরিমাণ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু বসবাস করেন, তার সিকিভাগও ভারতে নেই। ভারতে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু ক্যাম্পের সংখ্যা হাতে গুণে বলে দেওয়া যায়। সেই ক্যাম্পে যারা বসবাস করেন, তারা কার্যত খোলা জেলে থাকেন। বাইরে থেকে তাদের সঙ্গে সাংবাদিকেরা দেখা করতে গেলেও থানায় গিয়ে জানিয়ে আসতে হয়। রোহিঙ্গা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য থানার অনুমতি লাগে। বাইরে গিয়ে কাজ করার অনুমতি নেই তাদের। কিছু এনজিও ক্যাম্পের চৌহদ্দির মধ্যে তাদের কাজের ব্যবস্থা করে দেয়। এরপরেও কি কেউ বাইরে যান না? পরিচয় গোপন করে অনেকেই অনেক কাজ করেন বলে শোনা যায়। কেউ কেউ অপরাধও করেন। জেলেও যান। কিন্তু তার সংখ্যা কত? সার্বিকভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অপরাধ প্রবণ এমন কোনো তথ্য সরকারি নথিতে আছে কি? উত্তর, নেই। কিন্তু রাজনীতিতে আছে। ভারতের দক্ষিণপন্থি রাজনীতি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে অপরাধের একটি আশ্চর্য সমান্তরাল তৈরি করে ফেলেছে। জনমানসে সেই বার্তা গেঁথে দেয়া গেছে। ফলে সুযোগ পেলেই রাজনীতি রোহিঙ্গা জুজু জনমানসে ছড়িয়ে দেয়। বাস্তবের সঙ্গে যার কার্যত কোনো সম্পর্ক নেই। এই জনমানস জানেই না, রোহিঙ্গারা কোন ভাষায় কথা বলেন? ফিরে আসা যাক শাহজাহানের এলাকায়। সুন্দরবন অঞ্চলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত সন্দেশখালি বরাবরই অপরাধ প্রবণ এলাকা। গরু-মানুষ-মাদক পাচারের জন্য কুখ্যাত এই এলাকা ডাকাতি-রাহাজানিরও তীর্থক্ষেত্র। ভারত-বাংলাদেশের একাধিক ক্রসবর্ডার গ্যাং এখানে মাফিয়ারাজ চালায় বলে অভিযোগ। শেখ শাহজাহানের মতো বাহুবলীরা এই সমস্ত গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত বলে শোনা যায়। চোখ-কান খোলা রাখলে তার আভাসও মেলে। শাহজাহানের ডেরায় গিয়ে তাদের অস্ত্র সম্ভার দেখে এসেছে এই সাংবাদিক। কিন্তু রোহিঙ্গাদের খোঁজ পায়নি। পাওয়ার কথাও নয়। বাংলাদেশের যে অঞ্চলে রোহিঙ্গা শিবির বা রোহিঙ্গাদের যাতায়াত, তার চেয়ে বহু বহু কিলোমিটার দূরে এই সন্দেশখালি। কিন্তু কে না জানে, রাজনীতির না আছে ভূগোল, না আছে ইতিহাস! মানবমনে উত্তেজনা তৈরির বিকৃত তথ্য বরাবরই রাজনীতির অন্যতম অস্ত্র। ভারতে রোহিঙ্গা শব্দটি তেমনই এক বিকৃত রাজনৈতিক অস্ত্র।
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:০৮
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়