• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

দুটি অমেরুদণ্ডী প্রাণি আবিষ্কার বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর

নোয়াখালী প্রতিনিধি

  ২২ মে ২০১৮, ২১:৪৮

নিউম্যানিয়া নোবিপ্রবিয়া(Neumania nobiprobia) ও অ্যারেনুরুস স্মিটি(Arrenurus smiti) নামের দুটি অমেরুদণ্ডী প্রাণি আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী মোহাম্মদ বেলাল হোসেন।

নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া নামটি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(নোবিপ্রবি) এবং অ্যারেনুরাস স্মিটি নামটি নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত অ্যাকারোলজিস্ট হ্যারি স্মিথ থেকে নেয়া হয়েছে।

এই আবিষ্কারের পেছনে নোবিপ্রবির মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক বেলালের সঙ্গে সহগবেষক হিসেবে ছিলেন তার বিভাগের ছাত্র মো. সাইফুল ইসলাম, ভারতের তাপস চ্যাটার্জি, মন্টেনিগ্রোর গবেষক ভ্লাদিমির পেসিক এবং পোল্যান্ডের আন্দ্রেজেঝ জাওয়াল। চার দেশের পাঁচজন গবেষকের সমন্বিত গবেষণায় প্রাণি দুটি আবিষ্কৃত হয়।

গত বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বেলাল হোসেন নোয়াখালীর বিভিন্ন পুকুর, খাল ও নদী থেকে প্রাণিজগতের আর্থোপড পর্বের একারিয়া বর্গের অন্তর্গত প্রাণি এবং কিছুটা মাকড়সার মতো মাইটসের নমুনা সংগ্রহ করেন। এতে সঙ্গী হন সাইফুল ইসলাম।

সংগৃহীত নমুনা প্রথমে নোবিপ্রবির মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণাগারে শনাক্ত করা হয়। পরে ফলাফলের জন্য ভ্লাদিমির পেসিকের কাছে পাঠানো হয়। ভ্লাদিমির নমুনাগুলো চূড়ান্তভাবে শনাক্ত করেন ও সিদ্ধান্ত নেন।

পরে প্রাণি দুটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের জন্য গবেষণার ফলাফল লন্ডন ও নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সিস্টেমেটিকস অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড অ্যাকারোলজিতে পাঠানো হয়।

গত ১৫ মে ‘First records of water mites from Bangladesh(Acari, Hydrachnidia) with description of two new species by Mohammad Belal Hossain, Md. Saiful Islam, Tapas Chatterjee, Vladimir Pesic and Andrezej Zawal’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে।

প্রাণি দুটির আকার ২-৩ মিলিমিটার, দেখতে হালকা লাল ও হলুদ বর্ণের হয়। দুটি শুঁড় ছাড়াও এদের চার জোড়া সন্তরণ পা থাকে। এরা সাধারণত পুকুর, নদী বা খালের পানির ওপরের স্তরে ভাসমান উদ্ভিদের সঙ্গে ঝুলে থাকে।

এরা খাবার হিসেবে উদ্ভিদকণা গ্রহণ করে। তবে লার্ভা অবস্থায় এরা অন্য জলজ প্রাণীর দেহে পরজীবী হিসেবে বাস করে এবং ওই প্রাণি থেকেই খাবার সংগ্রহের কাজ করে থাকে। এরা জীবজগতের খাদ্যচক্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আবিষ্কার সম্পর্কে বেলাল হোসেন বলেন, প্রাণিজগতের প্রতিটি প্রাণীই ইকোসিস্টেমে তথা খাদ্যচক্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এদের একটির অনুপস্থিতিতে খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়ে। ফলে ইকোসিস্টেম তার স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারে না।

তিনি বলেন, আমাদের জলরাশি অত্যন্ত জীববৈচিত্র্যপূর্ণ। গবেষণার অপ্রতুলতা, মানবসৃষ্ট দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবিষ্কারের আগেই অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ থেকে উত্তরণ করা সম্ভব।

এর আগে ২০১৬ সালে দুটি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে নেফটাইস বাংলাদেশি (Nephtys bangladeshi) নামে অমেরুদণ্ডী পলি কীটের নতুন একটি প্রজাতি এবং দেশের বাইরে ব্রুনাইয়ের সমুদ্র এলাকা থেকে ভিক্টোরিয়োপিসা ব্রুনেইয়েনসিস (Victoriopisa bruneiensis) নামে অমেরুদণ্ডী পলি কীটের নতুন দুটি প্রজাতি আবিষ্কার করে হৈচৈ ফেলে দেন ড. বেলাল। এই বছর আবিষ্কার করলেন আরও দুটি প্রাণি।

উল্লেখ্য, বেলাল হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে যুক্তরাজ্যের হাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং ব্রুনাই দারুসসালাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। সম্প্রতি তিনি অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা শেষ করেছেন।

নোবিপ্রবির জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

কে/

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিজ্ঞান এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নোবিপ্রবি সিএসটিই অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের ইফতার মাহফিল
নোবিপ্রবিতে তৃতীয়বারের মতো গবেষণায় হাতেখড়ি অনুষ্ঠিত
বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
নোবিপ্রবিতে পরীক্ষার হলে ছাত্রলীগের বিশৃঙ্খলা, শিক্ষক সমিতির প্রতিবাদ
X
Fresh