জোনায়েদ সাকিকে নিয়ে বিভেদ বামজোটে
গত জুলাইয়ে গঠিত হয়েছে সরকারের বাইরে থাকা ৮ বামপন্থী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তবে দুই মাস না যেতেই জোটে দেখা দিয়েছে বিভেদ। সম্প্রতি গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে বিএনপির সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বাম জোটের অন্যতম প্রধান শরিক গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
ওই সমাবেশে গিয়ে জোনায়েদ সাকি দাবি করেন, তিনি বাম জোটের প্রতিনিধি হিসেবে নয়, দল হিসেবেই এসেছেন। নিজ দলের জাতীয় সনদের বিষয়টিকেও তুলে ধরেন তিনি। তবে ওই সমাবেশে জোনায়েদ সাকির যোগদান ও বক্তব্য নিয়ে জোটে সৃষ্টি হয়েছে বিভেদ। জোটের প্রধান শরিক বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সাকির ভূমিকা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছে।
জানা গেছে, গত শনিবার দিনাজপুরে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশে যোগ দেয়ার কথা ছিল জোনায়েদ সাকির। ওই সমাবেশে জোটের বাকি শরিকরা অংশ নিলেও অংশ নেননি তিনি। যোগ দেন কামাল হোসেনের ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে।
বিষয়টি স্বীকার করে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আরটিভি অনলাইনকে জানান, জোটগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল আমরা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে যাব না। কিন্তু গণসংহতি আন্দোলন সেখানে যাবে, এমন কোনোকিছু আমাদের জানায়নি। ফলে এ নিয়ে একটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে স্বীকার করে এ জোট নেতা দাবি করেন, আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠক আছে। ওই বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গত ১৮ জুলাই সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন মিলে নতুন জোটের ঘোষণা আসে।
দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে দেশব্যাপী শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এই জোট গঠন করা হয়েছে বলে জানান নেতারা।
জোটের এই ঘোষণার মধ্যে বিএনপির অংশগ্রহণে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে যোগ দেয়ার বিষয়ে সাকি বলেন, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন আমাদের ফোন করে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমরা সেখানে গিয়েছিলাম, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট করতে। আমরা মনে করি, বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যে কোনো সুরাহা নেই। সবাইকে নিয়ে নতুন জাতীয় সনদের মাধ্যমে সংঘাত এড়ানো যায়- এমন ভাবনা থেকেই সেখানে গিয়েছিলাম।
-------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : পাঁচ প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ
-------------------------------------------------------
তিনি দাবি করেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যোগ দেয়ার জন্য আমরা সেখানে যাইনি। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যারা গেছে তাদের বক্তব্যের সাথে আমার বক্তব্যের পার্থক্য আছে।
ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে যোগ দেয়া জোটের নীতির বিরুদ্ধে নয় দাবি করে সাকি বলেন, জোটের সিদ্ধান্ত আছে, দলগতভাবে, স্বাধীনভাবে যে যার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
জাতীয় ঐক্যের যে আলোচনা সেখানে সাকি নিজেও কথা বলেছেন কামাল হোসেনের সঙ্গে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে যে সংকট চলছে সে সংকট উত্তরণে আমাদের জাতীয় সমঝোতা দরকার। একটা গণতান্ত্রিক সনদের ভিত্তিতে আমাদের একটা জাতীয় সমঝোতা দরকার। বিদ্যমান সংকট আমাদের একটা মল্লযুদ্ধ ছাড়া কিছুই দিচ্ছে না। আমরা একটা জাতীয় ঐক্যমত্য চাই। ক্ষমতা হস্তান্তরের একটা গণতান্ত্রিক পথ চাই। গণসংহতি আন্দোলন সে লক্ষ্যেই কাজ করছে।
এ বিষয়ে জোটের শরিক বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, গণসংহতি আন্দোলনের সমঝোতার দলিলের সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোট একমত না। জোটগতভাবেই সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপি বা আওয়ামী লীগ মেরুকরণে আমরা যাব না। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যে বিএনপিসহ সাম্প্রদায়িক শক্তি ছিল। সেখানে যোগ দেয়াটা কোনোভাবেই স্বাভাবিক না।
ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নুও বললেন একই কথা। তিনি দাবি করেন, গণসংহতি আন্দোলনকে আমরা ওই সমাবেশে যেতে নিরূৎসাহিত করেছিলাম। কারণ আমরা মনে করি, সেখানে যাওয়াটা যথার্থ হয়নি। বিএনপি-আওয়ামী লীগের বাইরে বামজোট পৃথক শক্তি হিসেবেই দাঁড়াতে চেয়েছে।
আরও পড়ুন :
- যোগ্য নারী প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেবে আ.লীগ হাইকমান্ড
- বিএনপির সমাবেশের দিনে মাঠ দখল রাখার ঘোষণা ১৪ দলের
এমকে
মন্তব্য করুন