• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

এমপিপুত্র-ছাত্রলীগ সভাপতির কোন্দল চরমে, বিপর্যস্ত আ.লীগ

বরগুনা প্রতিনিধি

  ২৯ এপ্রিল ২০১৮, ১৬:৩৫

বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর পুত্র জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথ এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক একে অপরের বিরুদ্ধে মাদক, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণসহ নানা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে।

ছাত্রলীগ সভাপতি অনিক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর কবিরের ছেলে। এ কারণে বরগুনায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোন্দল বিশাল আকার ধারণ করছে।

রোববার দুপুরে বরগুনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ লিখিত অভিযোগে বলেন, বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের খামখেয়ালীপনায় জেলা ছাত্রলীগ আজ ব্যক্তিগত সংগঠনে পরিণত হয়েছে। ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি সকল ক্ষেত্রেই বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ ও এর বিভিন্ন ইউনিট কমিটির সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অছাত্র, বিবাহিত ও মাদক ব্যবসায়ীদের দিয়ে চলছে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগও এর বিভিন্ন ইউনিট কমিটি। ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ আজ ধ্বংস প্রায়। বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ আজ জামায়াত বিএনপির আখড়া, সংগঠন পরিচালনায় নেই কোনো গঠনতান্ত্রিক ধারা।

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : ‘তারেকও চায় ক্ষমতা, তার বউও চায় ক্ষমতা’
--------------------------------------------------------

আরও অভিযোগ করা হয় আওয়ামীলীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অমান্য করে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ছেলেকে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত করায় আজ ছাত্রলীগের মধ্যে এই বিশৃঙ্খলা। যা মূলদল আওয়ামী লীগের মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করছে। সংগঠনকে বানিয়ে ফেলেছে পৈতৃক সম্পত্তি। ডাকাত, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, শিবির, জামায়াত, বিএনপি আজ ছাত্রলীগের কাঁধে ভর করে প্রভাব বিস্তার করছে। তারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নিজেদের সুবিধামত ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছে। নিজেদের অবৈধ মাদক ব্যবসা ও কুকর্মকে ঢাকতে তারা আমার (সুনাম দেবনাথ এর) বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অপপ্রচার চালাচ্ছে।

সুনাম দেবনাথ অভিযোগ করেন, বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফেনসিডিল পান করেন, যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মাহাবুবুল ইসলাম পাঁচ কেজি গাঁজাসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘ দিন জেল হাজতে ছিল। তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সরোয়ার হোসেন স্বপন এর বাবা বেলায়েত হোসেন পনু জোমাদ্দার তালতলী থানা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। সভাপতির আপন মামাতো ভাই সবুজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলার অন্যতম আসামি।

তিনি বলেন, এই কুচক্রি মহল পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার এর মাধ্যমে বিভিন্ন সময় নানা রকম হুমকি, আমার উপর হামলা চেষ্টা, আমার অফিস ভাংচুর, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুরসহ আমাদের দলীয় ছেলেদের মারধর ও অত্যাচার করে আসছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বরগুনা-১ আসনে অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু চারবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বরগুনার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগের মধ্যেই কিছু স্বার্থান্বেষী আজ সংসদ সদস্যের বিরোধিতা করে দল পাকিয়েছেন। তাদের দাবি, শমভু তথা নৌকা পক্ষান্তরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই তারা বিরোধিতা করছেন। এসব মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান রকিব, ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক অনিমেষ হাওলাদার, উপ-আইন সম্পাদক সবুজ মোল্লা, যুবলীগ নেতা শাওন তালুকদারসহ শতাধিক নেতাকর্মী।

অন্যদিকে শনিবার বরগুনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা ছাত্রলীগ।

এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম সময় পাড় করছে এখন বরগুনার তরুণ সমাজ। আগে শুনেছি কাজের বিনিময়ে খাদ্য মানে ‘কাবিখা’। কাজের বিনিময়ে টাকা মানে ‘কাবিটা’। অপ্রিয় হলেও সত্য এখন সেখানে শুনতে হচ্ছে ‘মাবিরা’ মানে মাদকের বিনিময়ে রাজনীতি! মাদকের বিনিময়ে এখন অনেক তরুণই মিছিলে যায়। একটি ফেন্সিডিল আর দুটি ইয়াবার বিনিময়ে অনেক তরুণই এখন ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে পক্ষ বিপক্ষের নেতার প্রচার-অপপ্রচার চালায়।

তিনি বলেন, বরগুনায় চিহ্নিত সব মাদক ব্যবসায়ীর নেতৃত্ব দেন খোদ এমপি পুত্র সুনাম দেবনাথ। কৌশলে বরগুনার অধিকাংশ তরুণকে তিনি মাদক সেবন ও মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে টানছেন ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতিতে। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকের পদ ও পদবী ব্যবহার করে মাদক বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক তিনি। বরগুনার অধিকাংশ মাদকসেবী এবং চিহ্নিত সব মাদক ব্যবসায়ীরা বহাল তবিয়তে থাকেন যার ছত্রছায়ায়।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক ও সাধারণ সম্পাদক তানভির হোসাইন তাদের যৌথস্বাক্ষরে একটি লিখিত বক্তব্য অনিক আরও বলেন, বরগুনার গণবিচ্ছিন্ন একজন এমপির একমাত্র পুত্রের কাছে জিম্মি এখন বরগুনার অধিকাংশ তরুণ-যুবা-কিশোর। মাদক সাম্রাজ্যের কথিত যুবরাজ সুনাম দেবনাথের অশুভ ইশারায় বরগুনায় চলছে রমরমা মাদক বাণিজ্য। জেলা পুলিশ বাহিনীর একের পর এক অভিযানের পরেও কমছে না মাদক সন্ত্রাস। কারণ সর্ষের মধ্যেই রয়েছে ভুত! যা বরগুনার আপামর জনসাধারণের কাছে এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। নির্যাতন, নিপীড়ন, অপমান ও অপদস্থ হওয়ার ভয়ে যা কেউ বলে না।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা ছাত্রলীগে সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসাইন, সহ-সভাপতি ইলিয়ান আকন, আনিসুজ্জামান তুহিন, মাহফুজ আল নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, ইউসুফ হোসেন সোহাগ, সাইফুল ইসলাম রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজোয়ানুল ইসলাম বাবু, রাজীব হোসেন, আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মরোয়ার হোসেন স্বপনসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে এমপিপুত্র এবং জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির মধ্যে চরম কোন্দলে বিপর্যস্ত জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা জানান, বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর পুত্র জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথ এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিকের কোন্দলে দুই ভাগে ভাগ হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। কোন্দল এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। যদি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হয়, দলের পরিস্থিতি সামনে আরও ভয়াবহ হবে।

আরও পড়ুন :

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • রাজনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৮ বছর পর কমিটি পেল বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগ
‘অকৃতজ্ঞরা ভুলে যায় জিয়াকে মেজর জেনারেল বানিয়েছিল আওয়ামী লীগ’
জাপার অন্তঃকোন্দলের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন জিএম কাদের
গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না আওয়ামী লীগ : মঈন খান
X
Fresh