• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ডাকসু নির্বাচন: আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা, ছাত্র সংগঠনগুলোর ক্ষোভ

সিয়াম সারোয়ার জামিল, আরটিভি অনলাইন

  ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২০:৩২

গেলো জানুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন করতে ছয় মাস সময় বেঁধে দিয়েছিল আদালত। তবে সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেই ২০১৯ সালের মার্চে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে ছাত্র সংগঠনগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের মাধ্যমে আগামী বছরে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেজন্য এ বছরের ৩০ মে'র মধ্যে হলগুলোকে ডাকসু নির্বাচনের ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে বলেছে সিন্ডিকেট। পাশাপাশি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন করতে ‘পরিবেশ সংসদ’কে পুনরুজ্জীবিত করে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন প্রশাসন।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে তিন দফায় তফসিল ঘোষণা করলেও হয়নি নির্বাচন। ২০০৫ সালের মে মাসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার উপাচার্য এস এম এ ফায়েজ ওই বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে তা গতি পায়নি। ২০০৯ সালে তখনকার উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক দায়িত্ব নেয়ার পরই নির্বাচন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও ঘোষণা অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হন।

গত বছরের ৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তনে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। তবু ডাকসু গতি পায়নি। শেষ পর্যন্ত গেলো ১৭ জানুয়ারি আদালত এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ডাকসু নির্বাচনের জন্য ৬ মাস সময় বেঁধে দেয়। কিন্তু সেই আদেশ তোয়াক্কা না করেই মঙ্গলবারের সিন্ডিকেট সভায় নির্বাচনের জন্য এক বছরেরও বেশি সময় নেয়া হলো। যদিও বিষয়টি আদালতকে এখনও অবহিত করা হয়নি।

এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরাও চাই ডাকসু নির্বাচন হোক। অনেক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ২০১৯ এর মার্চে ডাকসু নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন না হওয়ায় জট তৈরি হয়েছে। সেটা কাটাতে একটু সময় তো লাগবেই। আইনি বিষয়গুলো মাথায় রেখেই সবকিছু ভাবা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানও আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের তালিকা হালনাগাদ করার জন্য প্রাধ্যক্ষদের বলা হয়েছে। ডিজিটালভাবে সবকিছু হালনাগাদ করা হবে।

তিনি বলেন, বিষয়টি প্রভোস্ট কমিটিকে বলা হয়েছে, সিন্ডিকেটকেও বলা হয়েছে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে। হল ছাত্র সংসদ ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ কিছু নিয়মনীতির মাধ্যমে হবে। সেগুলো সুশৃঙ্খলভাবে করার লক্ষ্যে কাজ করছি। সিন্ডিকেটও সম্মতি দিয়েছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিন্ডিকেট সদস্য জানিয়েছেন, ডাকসু নির্বাচন যে খুব সহজে হয়ে যাবে, এমনটা মনে হবার কোনো কারণ নেই। চাইলেই তো আর নির্বাচন দেয়া যায় না। আদালত ৬ মাস সময় দিয়েছে। তবে বিষয়গুলো আদালতকে অবহিত করে আরও সময় চাওয়া হবে।

এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সরকার সমর্থিত সংগঠন জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি সামশুল ইসলাম সুমন। তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, প্রশাসন স্পষ্টতই নির্বাচন নিয়ে একটা টালবাহানা করছে। এই টালবাহানা নতুন নয়। অতীতেও সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। শেষপর্যন্ত নির্বাচন হয়নি। এতে করে বঞ্চিত হয়েছে শিক্ষার্থীরাই।

ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ফারুক আহমেদ রুবেলও বললেন একইকথা। তিনি জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে। নইলে পুনরায় নির্বাচন পিছিয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন দেয়াটা হবে প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব।

মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য যেখানে নির্বাচনের কথা বলেছেন, সেখানে কেন এ নির্বাচন পিছিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

তবে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়াকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী। তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে এক বছরেরও বেশি সময় সিন্ডিকেটে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে নতুন কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে নির্বাচন বন্ধ। বারবার এমন আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। শেষপর্যন্তই নির্বাচনই হয়নি। রিটের কারণে আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেটাও মানা হচ্ছে না। শেষপর্যন্ত সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্তও মানা হবে কিনা, তারও নিশ্চয়তা নেই।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, সিন্ডিকেট সভায় ২০১৯ সালের মার্চে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে, তার আগেই জাতীয় নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের ডামাডোলে ছাত্র সমাজের প্রাণের এ দাবি হারিয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ছাত্র সমাজের দাবিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। সব নির্বাচন হয়েছে কিন্তু ডাকসু নির্বাচন হয়নি। এর প্রধানতম কারণ, ছাত্রনেতৃত্বকে প্রশাসন হুমকি মনে করে এসেছে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদালত নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এ ছাত্রনেতা।

আরও পড়ুন:

এসজে/সি

মন্তব্য করুন

daraz
  • রাজনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সেই গোল্ডেন মনিরের খালাস নিয়ে যা বললেন আদালত
পচা মাংস বিক্রি করায় ব্যবসায়ীকে জরিমানা
উপজেলা ভোটে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে : সিইসি
প্রতীক পেয়েই প্রচার-প্রচারণায় প্রার্থীরা
X
Fresh