• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

ঠাকুরগাঁও-১: গণসংযোগে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী

জয়নাল আবেদীন বাবুল, ঠাকুরগাঁও

  ২৫ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:০১

আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁও-১ (সদর উপজেলা) আসনে আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। এ আসনে অন্যান্য দলের তেমন কোনো শক্তিশালী প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী।

তাদের মধ্যে একজন হলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই হেভিওয়েট দুই প্রার্থীসহ আরো কয়েকজন নতুন মুখও গণসংযোগ সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে বিএনপিতে কোন্দল না থাকলেও আওয়ামী লীগে রয়েছে একাধিক গ্রুপ।

স্বাধীনতার পর থেকে ঠাকুরগাঁও-১ আসন আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের দখলে থাকলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে আসনটি হাতছাড়া হয়। বর্তমান বিএনপির মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেসময় রমেশ চন্দ্র সেনকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। বিএনপির প্রার্থী মির্জা ফখরুল ইসলামকে হারিয়ে আবারও এমপি নির্বাচিত হন রমেশ চন্দ্র সেন। দায়িত্ব পালন করেন পানিসম্পদ মন্ত্রী হিসেবে। এরপর দশম সংসদ নির্বাচনে ফের এমপি নির্বাচিত হন রমেশ চন্দ্র সেন।

এদিকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে কাজ করলেও বিএনপি থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী নেই।

অন্যদিকে রমেশ চন্দ্র সেন ছাড়াও আওয়ামী লীগের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন বাবু, কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক রাজিউর রেজা খোকন চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অরুণাংশু দত্ত টিটো ও যুব মহিলা লীগ সভাপতি তাহমিনা আক্তার মোল্লা।

এদিকে রমেশ চন্দ্র সেনকে হারিয়ে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ দবিরুল ইসলাম। এ থেকেই এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। দবিরুল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় তার তেমন কোনো ভূমিকা নেই। রমেশ চন্দ্র সেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাদেক কুরাইশীর নেতৃত্বেই বর্তমানে সরব জেলা আওয়ামী লীগ। তবে তাদের মধ্যেও রয়েছে ঠাণ্ডা লড়াই।

এদিকে বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও দলীয় কিছু বিষয় নিয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা যুবলীগের সভাপতি অরুনাংশু দত্ত টিটোর সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয় বর্তমান সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের। সম্প্রতি এক যুবলীগ নেতা খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা আরো ঘনিভূত হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ দবিরুল ইসলাম এমপির পাশাপশি টিটো দত্তের অবস্থানও এখন রমেশ চন্দ্র সেনের প্রতিকূলে। যদিও দলীয় কর্মকাণ্ডে রমেশ চন্দ্র সেন ও অরুনাংশু দত্ত টিটোকে একই মঞ্চে দেখা যায়। তবে আগামী নির্বাচনের আগেই সব দলীয় কোন্দল নিরসন হবে বলে জানান রমেশ চন্দ্র সেন।

তিনি জানান, আমি ঠাকুরগাঁওয়ে চার দলীয় সরকারের চেয়ে তিনগুণ বেশি উন্নয়ন করেছি। আমার বিষয়ে অনেকে অভিযোগ করতেই পারে। ইচ্ছে থাকা সত্বেও নেতাকর্মীদের মন জয় করা সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। মান অভিমান থাকলেও নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া নেত্রী যদি মনোনয়ন দেন জনগণই আমাকে নির্বাচিত করবে। এছাড়া নতুন কাউকে মনোনয়ন দিলে দেশনেত্রীর নিদের্শনা অনুযায়ী কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি।

অপর দিকে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান এমপি ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু তার অনেক বয়স হয়েছে। নতুন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলেও নৌকা জয়ী হবে।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মোশারুর ইসলাম সরকার আরটিভি অনলাইনকে জানান, গেলো ৩০ বছরও যে উন্নয়ন হয়নি বর্তমান এমপি রমেশ চন্দ্র সেন সেই উন্নয়ন করেছেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা প্রায় সব পাকা হয়েছে। প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার প্রকল্প ঠাকুরগাঁও চিনিকলের জন্য বরাদ্ধ নিয়ে এসছেন।

দিনাজপুর থেকে পচাগোড় পর্যন্ত আন্তনগর ট্রেনের রেল লাইন সম্পূর্ণভাবে নতুন করা হয়েছে। তাই এ আসনে আগামীতে নৌকারেই জয় হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ দবিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। আমরা সবাই নৌকার হয়ে কাজ করছি এবং আগামীতেও করবো।

এদিকে এ আসনে বিএনপির একটি শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসচিব হওয়ার পর বিএনপিতে আরো গতি বেড়েছে। তার নেতৃত্বেই গ্রাম পর্যায়ে সক্রিয় এখন বিএনপি। তাছাড়া বর্তমান সরকারের বিভিন্ন জুলুম নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে বিভিন্ন জনসভায় আবেগঘন বক্তৃতা দিচ্ছেন ফখরুল। যা গ্রামের সহজ-সরল মানুষের মনে রেখাপাত করেছে। এ আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিকল্প কোনো প্রার্থী নেই।

অপরদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) জেলা সভাপতি মনসুর আলী ১৯৮৬, ৮৮, ৯১ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত। তিনিও প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রাজি স্বপন চৌধুরী। স্বপন চৌধুরী জাতীয় পার্টিকে নতুনভাবে সংগঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেনও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

জেবি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • রাজনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেল ২ সহকর্মীর 
কুমিল্লার মেয়র প্রার্থীরা ব্যস্ত গণসংযোগে
উঠান বৈঠক ও গণসংযোগে ব্যস্ত কুমিল্লার মেয়র প্রার্থীরা
গণসংযোগে ব্যস্ত কুমিল্লার মেয়র প্রার্থীরা
X
Fresh