সাংবাদিক মোবারকের মায়ের মৃত্যুতে শোক
তরুণ সাংবাদিক ফেরদৌস মোবারকের মা রহিমা খাতুন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার সকালে রাজশাহী মেডিক্যালে তিনি মারা যান।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জার্নালিষ্ট ফোরাম-ঢাকা ও জাতীয় সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংস্থা - দিয়াড় পরিবার।
এসজে/
মন্তব্য করুন
২৪ ঘণ্টায় ৪২ জনের করোনা শনাক্ত
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৯ জনে। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি।
শুক্রবার (২২ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৩৭ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৬ হাজার ৫৫৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা হয় ৬৮৭ জনের নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দু-দিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণে সহায়তা করতে আগ্রহী ডব্লিউএইচও
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্য পেশাদারদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার ইচ্ছা পোষণ করেছে। ডব্লিউএইচও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রোগ মোকাবিলায় এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ অর্জনে বাংলাদেশকে সহায়তা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ শুক্রবার (২২ মার্চ) রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎকালে এ আগ্রহ প্রকাশ করেন। সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
ব্রিফিংয়ে নজরুল বলেন, ডব্লিউএইচও বিশেষ করে চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট পেশাদারদের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ প্রদানে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের সংস্থাটি বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত রোগ, মানসিক স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী যেমন, নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কাজ করবে।
নজরুল আরও বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ, যেকোনো দুর্যোগে নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ডব্লিউএইচও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোর জন্য কাজ করবে। এ ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রোগের মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। যার মধ্যে রয়েছে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট রোগ। মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে, সংস্থাটি সব প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পেশাদারদের পাঠ্যক্রমে রোগীদের সঙ্গে আচরণ করার ক্ষেত্রে আচরণগত পদ্ধতির মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে।
ডব্লিউএইচও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে এবং ক্লিনিক থেকে নারী ও শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়। সুতরাং, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে।
অল্পবয়সী মেয়েরা স্তন ক্যানসার নিয়ে কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী স্তন ক্যানসারের দ্রুত নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার ধরা পড়লে রোগটি নিরাময়যোগ্য। স্তন ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয়ে সরকার উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে রেফারেল সিস্টেম চালু করার জন্য কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভুটানকে বার্ন ইউনিট নির্মাণে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য শিক্ষার একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র হতে যাচ্ছে। কারণ ইতোমধ্যে ভুটান, নেপাল ও ভারতের প্রচুর শিক্ষার্থী বাংলাদেশে রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ অতিমারীর সময় সরকার জরুরি ভিত্তিতে ২৫ হাজার চিকিৎসক ও ১৫ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়। বেসরকারি স্বাস্থ্য চিকিৎসকদের জন্য লাইসেন্সিং পরীক্ষা চালু করতে যাচ্ছে সরকার।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আবারও কর্মবিরতিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ৭ দিনের কর্মবিরতি শেষ হওয়ার পর আবারও দুই দিনের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। তবে হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগকে এই কর্মসূচির বাইরে রাখা হয়েছে।
শনিবার (২৩ মার্চ) পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাবির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুন্নবীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, ‘ইন্টার্ন ডাক্তার এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ডাক্তারদের বকেয়াসহ ভাতা পরিশোধ এবং ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আজ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় এবং দাবির প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। এ ৪৮ ঘণ্টা (২৪ এবং ২৫ মার্চ) দেশের সব ট্রেইনি ডাক্তার এবং ইন্টার্ন ডাক্তার (ইমার্জেন্সি এবং ক্যাসুয়ালিটি ডিউটি ছাড়া) সকল ধরনের ডিউটি থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছে।’
তাদের দাবিগুলো হলো–
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা ৫০ হাজার টাকা এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেতন ৩০ হাজার টাকা করা।
ট্রেইনি চিকিৎসকদের (এফসিপিএস, রেসিডেন্ট ও নন রেসিডেন্ট) বকেয়া ভাতা পরিশোধ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীন ১২টি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের নন রেসিডেন্ট ও রেসিডেন্টদের ভাতা পুনরায় চালু করা।
অবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন সংসদে পাস ও বাস্তবায়ন।
বিএসএমএমইউয়ের বিদায়ী ভিসির সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য শরফুদ্দিন আহমেদের মেয়াদ শেষের মুহূর্তে তার ব্যক্তিগত সহকারীসহ কয়েকজনকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (২৩ মার্চ) অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিলেন আওয়ামীপন্থী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সংগঠনের শিক্ষকরা। এতে আরও অংশগ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নার্সরা। এ সময় শরফুদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী ডাক্তার রাসেল আহমেদকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে উপাচার্যে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড শাখা থেকেও একজনকে মারধর করে বের করে দেওয়ার খবর পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে উপাচার্য শরফুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, তারা কয়েকজনকে মারধর করেছে, আমি বিষয়টা শুনেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলব।
২৮ মার্চ উপাচার্য শরফুদ্দিনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরই মধ্যে গত ১১ মার্চ বিএসএমএমইউর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক দীন মো. নূরুল হক। মেয়াদ শেষের আগে উপাচার্য শরফুদ্দিনের বিরুদ্ধে ‘শতাধিক’ শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। এসব নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তার বিদায়ের মুহূর্তে বিক্ষোভ করছেন স্বাচিপের বিএসএমএমইউ ইউনিটের নেতারা।
সংগঠনটির চিকিৎসকদের অভিযোগ, আগের নিয়োগগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। বিদায়ের মুহূর্তে আরো শতাধিক শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী অ্যাডহকের মাধ্যমে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগ বাণিজ্যের এই অভিযোগ তুলে গত মঙ্গলবার থেকে স্বাচিপের নেতারা বিক্ষোভ করছেন।
বিক্ষোভের নেতৃত্বে থাকা স্বাচিপের বিএসএমএমইউ শাখার সদস্য সচিব অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার টিটো বলেন, “বেশ কিছুদিন আগে ভিসি হিসেবে নতুন ভিসি দীন স্যারের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে ভিসি আসার কারণে একটি অংশ বিরোধীতা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা যারা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি, কেন্দ্রীয় ও বিএসএমএমইউয়ের স্বাচিপের নেতৃত্ব দিচ্ছি, এ সকল স্বাচিপ কর্মীদের সবার কথা একটাই- নেত্রী যাকে নিয়োগ দিয়েছেন তাকেই আমরা ভিসি হিসেবে মন থেকে মেনে নিয়েছি, স্বাগত জানিয়েছি।
তিনি বলেন, সাধারণত ভিসি নিয়োগ পাওয়ার পর আগের ভিসি শুধুমাত্র দৈনন্দিন রুটিন কাজ করেন, যা ইতোপূর্বেও হয়েছে। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য শতাধিক ডাক্তার, কর্মচারী ও প্রায় ৩০ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। সবাই মনে করছে এই নিয়োগের পেছনে অর্থের লেনদেন আছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কোনোক্রমেই সিন্ডিকেট বসতে দিব না, যার কারণে সমবেত হয়ে প্রতিবাদ করছি। বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠানে কোনো দুর্নীতি করতে দেওয়া হবে না। আগামী ভিসি স্যার সুন্দরভাবে দুর্নীতি মুক্ত পরিবেশ তৈরি করে ক্যম্পাস পরিচালনা করবেন বলে আমরা আশা করছি। উনার প্রতি আস্থা আছে।
নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য শরফুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, নিয়োগের বিষয়টি আগেই ফয়সালা হয়েছে, এখন সিন্ডিকেট বসার সিদ্ধান্তটাও আগেই নেওয়া হয়েছে। এখন যারা বিরোধীতা করছে তারা কেউ আমার কাছে আসে নাই। সবকিছু স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই হয়েছে।
এন্ডোস্কপি করাতে গিয়ে মৃত্যু, ফের অভিযোগ ল্যাবএইডের বিরুদ্ধে
ফের চিকিৎসায় অবহেলা ও গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে ল্যাবএইড হাসপাতাল ও চিকিৎসক ডা. স্বপ্নীলের বিরুদ্ধে।এবার ভাইয়ের মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দারস্থ হয়েছেন খায়রুল বাশার নামে এক ব্যক্তি।
জানা গেছে, ভাইয়ের মৃত্যুর সাড়ে ৪ মাস পর রোববার (২৪ মার্চ) স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন ওই ব্যক্তি। অভিযোগে ‘চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অবহেলা ও গাফিলতির’ কারণে তার বড় ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন খাইরুল।
লিখিত অভিযোগে খায়রুল বাশার উল্লেখ করেন, তার ভাই ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর ধানমন্ডির ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের কাছে চিকিৎসা নিতে যান। ডা. স্বপ্নীল তাকে দেখে ব্যবস্থাপত্র দেন এবং অ্যান্ডোস্কপি, কোলনস্কপিসহ কয়েকটি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। চারদিন পর ৯ নভেম্বর সকালে পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালে যান। সেখানে তাকে জানানো হয় বিকাল ৪টায় অ্যান্ডোস্কপি করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সকালে শুরু করা হলেও পরীক্ষাটি করা হয় রাত ৮টায়।
তিনি লিখেছেন, ডা. স্বপ্নীল এসে রোগীর শারীরিক অবস্থার কোনো পর্যবেক্ষণ না করে, কোনো ধরনের প্রি-ইভাল্যুয়েশন ছাড়াই অ্যানেস্থিশিয়া প্রয়োগের নির্দেশ দেন। এরপর তিনি টেস্ট করানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। টেস্ট করানোর এক পর্যায়ে আমার ভাইকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলা ভাইয়ের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। তাই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হচ্ছে। সেদিন রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে হাসপাতাল থেকে আমাদের জানানো হয় আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরও লিখেছেন, তার ভাই সুস্থ্য অবস্থায় ওই পরীক্ষাটি করাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু সময়ের ব্যবধানে লাশ হয়ে ফিরেছেন। এ ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি দাবি করেন মারা যাওয়া আফসার আহমেদের ভাই।
অভিযোগের বিষয়ে খাইরুল বাসার গণমাধ্যমকে বলেন, ভেবেছিলাম অভিযোগ করব না কিন্তু ডা. স্বপ্নীলের হাতে আরেকজন রোগী মারা গেল। এ কারণে আমার ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টিও সামনে আনা উচিত। নইলে ওই চিকিৎসকের সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে না।
অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলতে চাননি ডা. স্বপ্নীল।
এ বিষয়ে ল্যাবএইড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম বলেন, এই কাজগুলো ওই পেশেন্টের (রাহিব রেজা) লোকজন করাচ্ছে। পুরোনো রোগী খুঁজে বের করে। যারা মারা যায় তাদের স্বজনদের ইনসিস্ট করে আমাদের বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করার জন্য, যেন তাদের পাল্লাটা ভারী হয়। তাদের ভিত্তিটাকে মজবুত করার জন্য পুরোনো রোগী খুঁজে বের করে। সবাইকে অ্যাপ্রোচ করে, দুয়েকজন হয়তো তাদের কথায় রাজি হয়ে যায়।
খাইরুলের অভিযোগের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল গণমাধ্যমকে বলেন, একটি অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আমি বিষয়টি তদন্ত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ডা. স্বপ্নীলের তত্ত্বাবধানে ধানমন্ডির ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে এন্ডোস্কপি করাতে এসে মারা যান রাহিব রেজা নামে এক যুবক। এরপর রাহিবের পরিবারের তিন সদস্য চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। তাদের অভিযোগ, এন্ডোস্কপি করার পরপরই অ্যানেস্থেসিয়ার কারণে রাহিবের ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়। পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই ঘটনার বিশদ অনুসন্ধান করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে স্বাধীন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের সুন্নতে খৎনা, অ্যান্ডোসকপিসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচারকালে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগে বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। ফলে এ নিয়ে ক্রমেই উদ্বেগ বাড়ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ সব মহলে। এবার তাই অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগে রোগীর মৃত্যু ও আকস্মিক জটিলতা প্রতিরোধের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বুধবার (২৭ মার্চ) মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব জসীম উদ্দীন হায়দার স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা জারি হয়েছে, যেখানে অ্যানেস্থেসিয়ায় ব্যবহৃত ওষুধ বদলানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ওষুধের মান নিশ্চিত করতেও জোর দেওয়া হয়েছে এ নির্দেশনায়।
‘অ্যানেস্থেসিয়াজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহারে ওষুধের গুণগতমান নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক এ চিঠিতে বলা হয়, অ্যানেস্থেসিয়ায় ব্যবহৃত ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাতে হ্যালোথেনের বিকল্প নির্ধারণ করতে হবে। সেইসঙ্গে অ্যানেস্থেসিয়ার অপপ্রয়োগ প্রতিরোধ করতে সুপারিশ করা হলো এবং এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
নির্দেশনায় বলা হয়, সারাদেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কক্ষে ইনহেলেশনাল অ্যানেস্থেটিক হিসেবে হ্যালোথেনের পরিবর্তে আইসোফ্লুরেন অথবা সেভোফ্লুরেন ব্যবহার করতে হবে।
সেইসঙ্গে দেশের সব হাসপাতালে বিদ্যমান হ্যালোথেন ভেপোরাইজার পরিবর্তন করে আইসোফ্লুরেন, সেভোফ্লুরেন এবং ভেপোরাইজার প্রতিস্থাপন করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের প্রাক্কলন করতে হবে। অর্থাৎ এ বিষয়ে খরচের পরিমাণ জানাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া হ্যালোথেন কেনা-বিক্রি এবং ব্যবহার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, দেশের সব সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে হ্যালোথেন ভেপোরাইজারের বদলে আইসোফ্লুরেন ভেপোরাইজার প্রতিস্থাপনের জন্য চাহিদা মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং নতুন অ্যানেস্থেসিয়া মেশিন কেনার বেলায় স্পেসিফিকেশন নির্ধারণে স্পষ্টভাবে ভেপোরাইজারের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
নির্দেশনাটির অনুলিপি ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষা-সেবা-গবেষণায় প্রাধান্য দেবে বিএসএমএমইউ : নতুন উপাচার্য
বিএসএমএমইউর ইতিহাসে অবিশ্বাস্য এক সংবর্ধনার আয়োজন। শাহবাগ মোড় থেকে বি-ব্লকের প্রধান ফটক পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুল ছিটিয়ে ও ঢোলের বাদ্যে বরণ করে নেন নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হককে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ১২তম উপাচার্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ছিলেন এবং সেই সময়ে মানুষের অন্ধত্ব নিবারণে অনেকগুলো মৌলিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালনেরও অভিজ্ঞতা রয়েছে দেশ সেরা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগ পাওয়া এই উপাচার্যের।
এ ছাড়াও তিনি ঢাকা মেডিকেল ও মিটফোর্ড হাসপাতালের অধ্যাপক ছিলেন দীর্ঘদিন। ন্যাশনাল আই কেয়ারের লাইন ডিরেক্টর ছিলেন, এরপর ডিরেক্টর ছিলেন আরও পাঁচ বছর। সবশেষে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আড়াই বছর। তার একইসঙ্গে ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতা এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেশনেরও অভিজ্ঞতা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মিল্টন হলে দায়িত্ব গ্রহণ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ডা. দীন মোহাম্মদের কর্মপরিকল্পনা, অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
ডা. দীন মোহাম্মদ বলেন, বিএসএমএমইউতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সবাইকে নিয়ে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিশ্বমানের আধুনিক ও স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, কারো অন্যায় আবদার গ্রহণযোগ্য হবে না, দেওয়া হবে না প্রশ্রয়। দায়িত্বশীল প্রত্যেককেই রাখা হবে নজরদারিতে। প্রয়োজনে সরিয়ে দেয়ারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ডা. দীন মোহাম্মদ তার কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে বলেন, আমার চাওয়া হলো আদর্শ শিক্ষক তৈরি করা। যারাই এখান থেকে শিক্ষক হয়ে বের হবেন, তারা যেন আদর্শ শিক্ষক হয়, তারা যেন তাদের দায়িত্বের প্রতি কমিটেড হয়, সেই ধরনের শিক্ষকই আমরা তৈরি করতে চাই। এরসঙ্গে খুবই ওতপ্রোতভাবে জড়িত হলো গবেষণা। মেডিকেল প্রফেশন কখনোই সামনের দিকে এগোবে না যদি মানসম্মত গবেষণা না থাকে। যতদিন আমি ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করব ততদিন গবেষণার দিকটাও আমি প্রাধান্য দেবো। এক কথায় চিকিৎসা শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ও গবেষণা এ তিন বিষয় প্রাধান্য দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এটা যেহেতু জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আমি চাই এটি একটি গৌরবোজ্জ্বল বিশ্ববিদ্যালয় হবে, কোনোকিছুর প্রভাবমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত একটি প্রশাসন হবে, এখানে বিশ্বমানের স্বাস্থ্য সেবা হবে। আমি চাই মানুষ যেন এখানে এসে বঞ্চিত না হয়, চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারিত না হয়। এ বিষয়গুলো অবশ্যই আমি নিশ্চিত করবো।
এ ছাড়াও নিজেকে শেখ হাসিনার প্রতিনিধি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সর্বশক্তি নিয়োগ করে মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে যাবো।
প্রসঙ্গত, সোমবার (১১ মার্চ) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ কামাল হোসেনের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। তাতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের অনুমোদনক্রমে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯৮’ এর ১২ ধারা অনুসারে অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হককে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে নিয়োগ করা হলো। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চার বছরের জন্য তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হলেন। ভিসি পদে তিনি তার অবসর অব্যাবহিত পূর্ব পদের সমপরিমাণ বেতন-ভাতাদি পাব্নে। তিনি বিধি অনুযায়ী উপাচার্যের পদ-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন। ভিসি হিসেবে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯৬' এর ১৪ ধারা অনুযায়ী তার দায়িত্বাবলি পালন করবেন। রাষ্ট্রপতি ও আচার্য প্রয়োজনে যেকোনও সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ ২৯ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।
বিএসএমএমইউ’র বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন বিশিষ্ট চোখ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ নুরুল হক। চোখের চিকিৎসক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ সম্মাননা ডা. আলীম মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন তিনি। আগামী ২৮ মার্চ অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের মেয়াদ শেষ হবে। অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক আন্তর্জাতিক মানের চক্ষু বিশেষজ্ঞ। পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। তার জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার হোসেন্দী এলাকায়।